• Uncategorized
  • 0

গল্পকথায়ে সুজাতা রায়

রাহুমুক্তি

“বারবার ভেঙে গেলো ভেঙে গেলো বলছো কেন?পিছিয়ে যাওয়া আর ভেঙে যাওয়া কি এক?ডিলেইড আর ক্যান্সেলড এর তফাৎ বোঝ না? ইস্কুলে কী যে পড়াও কে জানে”- ঝামড়ে উঠলো সায়ন মানে সায়নদীপ ভট্টাচার্য্য যার একমাত্র পুত্রের বিয়ে এই মুহূর্তে করোনার কারণে বিশ বাঁও জলে। যাকে উদ্দেশ্য করে বলা তিনি নন্দনা একটি হায়ার সেকেন্ডারী স্কুলের ইংরেজির দিদিমনি এবং পুত্রের মা।চিড়বিড়িয়ে উঠলো নন্দনা “কে না জানে পিছিয়ে যাওয়া আর ভেস্তে যাওয়া এক জিনিস না কিন্তু এই লকডাউন কবে শেষ হবে ঠিক আছে?”এমনিতে এই বিয়ে যে নন্দনা খুব আনন্দের সঙ্গে মেনেছে তা মোটেই না নেহাত ছেলের পছন্দ। ভাটপাড়ার ভটচাজ বাড়ির ছেলে কিনা উত্তরপ্রদেশের যাদব মেয়ে পছন্দ করলো!আরে নিকুচি করেছে শ্রীকৃষ্ণর বংশ,জাতে তো সেই গোয়ালা!চিরকেলে গোঁয়ার ছেলেটা।জয়েন্ট এ দারুণ র‍্যাঙ্ক করে ডাক্তারি পড়তে গেলো আর তারপরই দেশসেবার ভূত মাথায় চাপলো,আরে ডাক্তার হয়ে তো দেশেরই লোকের রোগ সারাবি সেটা কি দেশ সেবা না?না তা হবে না,উনি মিলিটারী জয়েন করলেন।পড়াশুনায় ভালো হলে কি হবে বোকার বেহদ্দ।ঐ মিলিটারীতে গিয়েই তো ফেঁসেছে ড.প্রমীলা যাদবের সঙ্গে।হবু বৌমাকে প্রথম দেখাতেই তো নন্দনার হার্ট ফেল হওয়ার যোগাড়।ছ’ফুট দু ইঞ্চি ছেলের পাশে পাঁচ ফুট এগারো ইঞ্চির মেয়ে।সায়ন তো হাইট দেখে আনন্দে আত্মহারা,রাজযোটক যাকে বলে!আরে লম্বাটাই দেখলে ছাপ্পান্ন ইঞ্চির ছাতিখানা চোখে পড়লো না?ওকি দেশের প্রধানমন্ত্রী হবে? হবে তো ছেলের বৌ। বৌমার ঐ ভীমভবানি ছাতি দেখে কোন শাশুড়ির হৃদকম্প হবে না?তবে এটা ঠিক চেহারা যতোটা দশাশই মেয়েটা ততটাই শান্তশিষ্ট নম্র স্বভাবের।যদিও দুদিনের দেখায় আর কতোটুকু চেনা যায় তবে বয়সে ছেলের থেকে বড়ো হবে নন্দনা নিশ্চিত – এসব নিয়ে বেশি ঘাটায় নি নন্দনা,জেনে লাভ কিছু নেই,বিয়ে আটকাতে তো পারবে না।অথচ এমন নয় যে এর আগে ছেলে প্রেম করেনি অন্তত এক গন্ডা মেয়ের নাম করতে পারে নন্দনা,উফফ কী যে দেখলো ঐ হিড়িম্বার মধ্যে!চোদ্দই এপ্রিল লক্ষ্ণৌ এর গোমতীনগরে বিয়ে সেই মতো কলকাতা থেকে কুড়িজনের প্লেনের টিকিট কাটা হয়ে গেছে ছ’মাস আগেই।সতেরোই এপ্রিল বাড়িতে ছোট একটা বৌভাতের অনুষ্ঠান করে ঊনিশে এপ্রিল রবিবার ফোর্টউইলিয়ামে গ্রান্ড পার্টি।দূরের আত্মীয় স্বজন,কন্যাপক্ষের সবার থাকার হোটেল বুকিং সারা।কেটারিং থেকে ইভেন্ট ম্যানেজমেণ্ট সব অ্যাডভান্স নিয়ে গেছে এরমধ্যে চীনে কোথায় কে সাপ -বাদুড় খেয়ে কী রোগ বাঁধালো বিশ্বজুড়ে মড়ক লেগে গেলো।নন্দনার একমাত্র দিদি ব্যাঙ্গালোরে মেয়ের কাছে আটকে,জামাইবাবু হার্টের রুগী মেদিনীপুরের বাড়িতে একলা।দিনে দশবার দিদির ফোনে উদ্বেগের ঘ্যানঘ্যান আর থেকে থেকেই আহারে বিয়েটা ঘেঁটে গেল।সারাদিন বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজন সবার মুখে এই এক কথা শুনতে শুনতে তিতিবিরক্তি লেগে গেছে নন্দনার ও দিকে ঐ ভদ্রলোক কে দেখো পাঁজি নিয়ে বসে গেছে অঘ্রাণের লগ্ন দেখতে,অঘ্রাণ নাহলে মাঘ নৈলে ফাল্গুন আরে লগ্নের কি শেষ আছে!এ বুদ্ধি নেই ঐ সব ডেটে ফোর্টউইলিয়ামের ‘সুহাগ হল’বুকড্।সবাইকে ফোর্টউইলিয়ম দেখিয়ে নিজের তিরিশ ইঞ্চি ছাতি টেনে চল্লিশ করার সুযোগ ও গেল!সব ঐ মেয়ের মা এর জন্য।কবে ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে হয়ে যেতো – না, তখন সবার পরীক্ষা চলবে রিস্তেদার লোগ আসতে পারবে না,বোঝ এবার!একে এই লকডাউনে কাজের লোক নেই,সব এক হাতে সামলাতে হচ্ছে নন্দনাকে,ইস্কুল নেই তো সুখ কিসের লোকটারও তো বাইরে বেরোনো নেই!সারাদিন যদি নাকের ডগায় একটা লোক ভাঙা বিয়ে মানে ভেস্তে যাওয়া বিয়ের পরিকল্পনা চালায় কাহাতক সহ্য হয়?আচ্ছা এই যে ফেব্রুয়ারিতে বিয়েটা হতে হতেও হলো না-এর পর এই কোথা থেকে করোনা হাজির হলো,বাপের জন্মে যা কেউ কখনো দেখে নি সব লোককে জোর করে ঘরে পুরে ট্রেন পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেল – এর পেছনে অন্য কোনও ঈঙ্গিত নেই তো?ভাতের মাড় গালতে গালতে হঠাৎ কেমন মনটা সু গেয়ে উঠলো এমন সময় সায়নের ডাক, দিল্লী থেকে ছেলের ফোন এসেছে,হাত মুছতে মুছতে ফোন ধরতে গিয়ে নন্দনা আড়চোখে দেখলো সায়ন কেমন থমথমে মুখে তাকিয়ে আছে হ্যালো বলতেই ওপাশে ছেলের গলা-“মা বাবাকে বোঝাও আপাতত তিনবছর বিয়ের কোনও গল্প নেই,আমার এম.ডি শুরু হয়ে যাবে।কমপ্লিট হলে তবেই বিয়ের কথা ভাববো,প্রমীলার ও তাই ইচ্ছে…..” আরো কতো কি বলে যাচ্ছে ছেলে সব কথা কানের এপাশ ওপাশ দিয়ে কেমন ড্রিবল করে বেরিয়ে যাচ্ছে,আটকেছে! আটকেছে! আপাতত তিনবছরের জন্য,নিজের ছেলেকে নন্দনা চেনেনা? এই তিনবছরে এ প্রেমের ডেট এক্সপায়ার করবেই করবে।জয় মা করোনার জয়!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।