সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ৪১)

সোনা ধানের সিঁড়ি

৭৫
চোখের পাতা ফেলতে না ফেলতেই হাওয়া। চোখের সামনে থেকে এইভাবে রোজ কতকিছু হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা সত্যিই কি তারা উধাও হয়ে যাচ্ছে ? পৃথিবীর আর কোনো পথে তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না ? এতদিন তো সে আমারই চোখের সামনে ছিল ? দিনরাত আমারই সামনে একটু একটু করে বেড়ে উঠছিল। তাহলে হঠাৎ করে সে গেল কোথায় ? সে কি কোনোদিন আমার সঙ্গে পায়ে পায়ে হেঁটেছে ? আমরা কি কখনও একবারের জন্যে হলেও একতালে পা ফেলেছি ?
কাছে থাকলে কিভাবে থাকে ? রক্ত মাংসে মানুষের শরীর নিয়ে বুঝি কাছে থাকে ? নাকি কাছে থাকাটা অন্যভাবে ? ঘুমের ঘোরে, চোখ বুজে, পথ চলতে চলতে কেউ যদি আমার কাছে আসে তাহলে সেটা কিভাবে ? অবশ্যই কথায় কথায়। এখুনি কেউ না কেউ উঠে দাঁড়িয়ে বলবে, আমি তো মানুষটাকেই ভাবি। রক্তমাংসের শরীরেই তো মানুষটা আমার চোখের সামনে ঘোরে। অবশ্যই এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু মানুষটা যখন আসে সে তো কথা বলে। অবশ্য কথা না বললেও তার কোনো কথার হাত ধরেই তো সে আমার কাছে আসে। অথবা কোনো কথার সূত্র ধরেই তার কথা আমার মনে পড়ে।
তাই মানুষটা হাওয়া হয়ে যাওয়ার অনেক আগেই তার কথাগুলো আমাদের কাছ থেকে উবে যায়। কথাতে সে আর আমাদের কাছে ধরা দেয় না। আসলে তার কথায় যে আবহাওয়া এসে হাজির হয় সেই আবহাওয়ায় আমরা স্বস্তিবোধ করি না। তাই মানুষটা যে আমার সঙ্গে থাকবে না তার অনেকটা ইঙ্গিত আমরা আগে থেকেই পেয়ে যাই। তখন থেকেই একটা মানসিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। আস্তে আস্তে নিজেকে অনেকটা তৈরিও করে ফেলি। তাই হাওয়া হয়ে যাওয়ার দিন শুধু একটা কথাই মনে আসে, সে চলে গেল।
অবশ্যই সে পৃথিবীর অন্যপথে হাঁটবে। এখনও তার অনেক বৃষ্টি বাকি। আর তার বৃষ্টির যে প্রকৃতি তাতে অনেকরই অপেক্ষা সার্থক হবে। কত প্রদেশ দীর্ঘ সময় বৃষ্টির হাত থেকে দূরে। তাদের জীবনে মধ্যাহ্নে অথবা সায়াহ্নের বৃষ্টি স্বস্তি আনবে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।