কবিতায় অর্পিতা দাশগুপ্ত ঠাকুর
by
TechTouchTalk Admin
·
Published
· Updated

বাংলা নিয়ে স্নাতকোত্তর ও বি.এড।
"কোন সে পথের বাঁকে" প্রকাশিত বই
কলঙ্কিনী
হাওয়ায় দুলছে কাশফুল, চারিদিকে আগমনীর সুর,
মেঘ-বৃষ্টির আবছায়ায় পূজো পূজো গন্ধ মিশে
দিনটাকে যেন আরো সুন্দর করেছে।।
পড়ন্ত বিকেলে Nostalgic হয়ে কি যেন ভাবছিল মেয়েটা,
নামটা ভারী সুন্দর তার —–“দৃষ্টি”
দিনটা ছিল সপ্তমী-সকাল থেকে ছোটাছুটি
মন্ডপ আর ঘরে।।
তাই ক্লান্ত হয়ে বোধ হয়, একটুকু আনমনা হয়ে পড়েছিল মেয়েটি।
বুঝতে পারে নি “মা” ডাকছেন…………
“বুবু”…… “বুবু” শুনছিস!………..
মেয়ের সাড়া না পেয়ে মা এক প্রকার ঝাকুনি দিলেন একটা,
সম্বিত ফিরলো মায়ের,”বুবু”–র।।
ঘরের চাবিটা হাতে দিয়ে বললেন….
আমরা মন্ডপে যাচ্ছি, তৈরি হয়ে চলে আসিস।
ছবিটা হাতে নিয়ে আবার, ও ভাবেই বসে পড়ল সে।
বয়সটা তখন উনিশের দোরগোড়ায়,
তাই প্রেমের কল্পনায় একটা বেশীই আনমনা।
হয়তো অপেক্ষায় আছে প্রেমিক পুরুষটি,
সপ্তমীর এই সন্ধ্যায়… ..
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হল,
মন্ডল সেজে উঠেছে আলোর ছটায়,
মূর্তি দেখার ভীড়ে নাভিশ্বাস ওঠে প্রায়,
যেন বেরোতে পারলে বাঁচে সব।
এত কিছুর মাঝেও সীমাহীন শূন্যতা,
“দৃষ্টি”কোথাও নেই
আসেনি বুঝি এখনও।
এটা সেটা ভেবে মুখে এক ঝিলিক দেওয়া হাসি
নিয়ে তৈরি হয় সে নতুন সাজে—নতুন পোশাকে,
কিন্তু ক্ষনিকেই মুখের হাসি, মুখেই মিলিয়ে গেল।
হঠাৎ করে চারজন অচেনা-অজানা পুরুষ
চড়াও হল তার ওপর।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই… তার নতুন পোশাক ছিঁড়ে খানখান।
সৌন্দর্যের বদলে দেহে এল নগ্নতা।
ঢাকের আওয়াজের বদলে এলো—
কিছু কামাতুর মানুষের সম্ভোগের উল্লাস।।
প্রেমিকের চোখের প্রেমের দৃষ্টির বদলে
লোলুপ হিংস্র দৃষ্টি তাকে গ্রাস করল-সপ্তমীর সন্ধ্যায়
যে হালকা গোলাপি ঠোঁটে, প্রেমিকের চুম্বন এখন ও
পায়নি সে, সেখানে
পেল একের পর এক লালসার কামড়।
যে দেহ আজও পরম শুদ্ধ, আগলে রেখেছে—
স্বামী সোহাগের অপেক্ষায়,
সেখানে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অবাধে ঘোরাঘুরি করছে
কিছু বর্বর মানুষের কর্কশ হাত।
যেন গা-হিম হয়ে যাচ্ছে তার যন্ত্রণায় অবশ হয়ে আসছে দেহটা
তবুও সে অসহায়।।।
হার মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে…..
অযাচিত সহবাসের কাছে।।
তার চীৎকারের আওয়াজ কারো কানে পৌঁছাচ্ছে না।।
কারণ, মশগুল সভায়
ঢাকের আওয়াজ–সন্ধ্যারতিতে।।
সপ্তমী শেষ, মণ্ডপে নিভলো আলো,
মূর্তি ও পড়ল ঢাকা,
বোধ হয় লজ্জাটা নিতে পারছে না,
একাকী মেয়েটি অসহায়ত্বের সঙ্গে—
ভরিয়ে দিয়েছে নৈবেদ্য এর থালা।।
অন্ধকারে ভরলো জীবন,
মুখে কথা নেই, পেটে খিদে নেই,
দুচোখে স্বপ্নের বদলে আজ-
জলের ধারা।।
জীবনটা তার এগোবে কি আর??
কালি দেবে না গায়ে–দু-একজন??
হয়তো,
হয়তো মৃত্যুর আয়োজনও হবে,
পুজোর মতই।
এখনো চারটে নতুন জামা বাকী,
সখ করে দুটো—–পালাজো কিনেছিল,
সাথে দুটো ডোকরা।।
কী করে পরবে সে??
দশমী তো ওর কালই হয়ে গেছে,
কে জানে অষ্টমী টা…….
কেমন কাটবে ওর।।।।।।।