• Uncategorized
  • 0

অণুগল্পে গৌতম বাড়ই

স্মৃতিকণা

এখন মাঝ রাত্তিরে খোলা ব্যালকনীতে রাতের স্বচ্ছ আকাশে তারা দেখা সুমেরের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।এই ব্যালকনী থেকে সামনের খোলা প্রান্তর ছাড়িয়ে অনেক দুর চোখ চলে যায় দিনের বেলায়। শহরতলীর এই ফ্ল্যাট বাড়িটা দুজনেই পছন্দ করে কিনে ছিলো।এই ফাঁকা ফাঁকা প্রকৃতির মাঝে।যেদিন রাতের আকাশ মেঘে মেঘে ঘন অন্ধকারে ঢেকে যায়,মন খারাপ হয়ে যায়।
সুমের সামনের পার্কের দিকে তাকিয়ে থাকে,এই ঘন অন্ধকারে পার্কের হাল্কা আলোয় অমলতাস গাছটা আর মেহগনি গাছটাও দেখতে পায়।বেঞ্চের ওপর কে একজন যেন বসে আছে!কি এক অমোঘ টানে নেমে আসে সুমের।
তুমি স্মৃতিকণা?এই এতো রাতে এখানে বসে আছো?
-তোমার জন্য। তোমার রাতজাগা চোখ আমি স্পষ্ট দেখতে পাই।কি করবো বলো,তুমি তো আমায় ঘরের ভেতর ডেকে নিয়ে যেতে পারবে না।তুমি গভীর রাতে তারাদের পানে চেয়ে খোঁজো কারুকে আর আমি এই বেঞ্চে বসে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি।
তুমি তাকিয়ে থাকো,রোজ!
– হ্যাঁ।দেখি।তুমি গভীরে খোঁজো আর আমি বাইরে। তুমি অনেকটা দিন কোথাও মন খুলে ঘুরতে যেতো পারোনি।এবারে যাবে।তোমার অনাবিল আনন্দে আমি তোমার সঙ্গে সবসময় আছি।এবারের শীতে শান্তিনিকেতনে দু-দিনের জন্য ঘুরে এসো।কি থ্রীল বলতো ঐ গাছের গুঁড়িতে বসে মাটির পাত্রে চা খাওয়া।যাবে কিন্তু।
হ্যাঁ যাবো। কিন্তু!
– কোনো কিন্তু নয়।কত ধকল গেলো তোমার এ জীবনের উপর দিয়ে,বলতো? তোমার লেখালেখি,তোমার কবিতার জন্য,আমি তো হা-পিত্যেশ করে বসে থাকি।
তা জানি।লিখতে আমার মনই চায়না। জীবনের ঝড়কে ধকল বলে কিনা জানিনা।আমি ক্রমাগত একটা ক্ষয়ে যাওয়া বিন্দুতে পরিণত হচ্ছি,এ বুঝতে পারি।
-তাহলে তো হেরে যাবে।এসো, দাঁড়িয়ে কেন? আমার পাশে বসো।তোমায় অনেকদিন ছুঁই নি,আজ ছুঁয়ে দেখবো।
সুমের এক পলকা ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে স্মৃতিকণার পাশে বসলো।কবেকার স্মৃতির সেই দোলের আভা আবিরের দুরন্ত গন্ধটা নাকে লাগছে।
– তোমার আঙ্গুলের ডগা রক্তশূন্য কেন? কতদিন কতদিন পর তোমার হাত স্পর্শ করলাম।
একটা হিমশীতল স্পর্শে সুমেরের সম্বিত ফিরলো।ঊষার আলোর ছটা পার্কের বাগানে।অমলতাসের পাতাগুলো চামরদোলার মতন দুলছিলো।একটা দুটো কাক ডেকে উঠলো বাগানে।ঘুম ভাঙ্গা চোখে,চকিতে ঘরের দিকে ছুটলো সুমের।
কি আশ্চর্য! অবিন্যস্ত ঘরের সবকিছু নিপাট সাজানো। রাইটিং ডেক্স,বইপত্তর,নোটবুক,
ল্যাপটপ সব সবকিছু।
প্রায় ছমাস হলো টাটা মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতাল, মুম্বাই আর কলকাতা এই ছকে বাঁধা অভ্যেসের জীবনের ইতি পড়েছিলো সুমেরের। স্মৃতিকণা, সুমেরের হাত ধরে বলেছিলো–দেখবে, এবার শীতে আমরা ঠিক শান্তিনিকেতনে বেড়াতে যাবো।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।