• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় শামসুল হক আজাদ

লকডন

কিড়িং,কি-ড়ি-ং ,কি–ড়ি–ং—–
ডাক্তার সাদিকের লিভিং রুমে ল‍্যন্ড ফোনটা বেজেই চলেছে।বেডসুইচটা অন করে দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালেন।ভোর চারটা পনেরো।অনিচ্ছা স্বত্বেও বেড থেকে নেমে ফোনটা রিসিভ করলেন।
—–হ‍্যালো—
——হ‍্যালো,আমি অতনু বলছি দাদা।
——হাঁ,বল।
——-মার শরীরটা খুব খারাপ দাদা।তুমি ঘুমাচ্ছো বলে এতক্ষণ ফোন করিনি,শেষতক বাধ্য হলাম।
——বল,কী হয়েছে?
——প্রায় রাত দশটা থেকে বারবার পায়খানা যাচ্ছে,জলের মতো।এখন নেতিয়ে পড়েছে।বাধ্য হয়ে তোমাকে ফোন করলাম।যদি একবার আসতে পার।
গোটা পনের বাড়ির পরেই অতনুদের হলুদ রঙের একতলা বাড়ি।পাড়ার ছেলে।ভায়ের সহপাঠী।এ বাড়িতে তার নিয়মিত যাতায়াত আছে।না গেলেই নয়।
——-ঠিক আছে অতনু,আমি আসছি।
মিসেস সাদিক ঘুমজড়ানো কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন।
—–কার ফোন?
——অতনুর।
——কী হয়েছে?
——-মাসিমার খুব শরীর খারাপ।তুমি একটু ভিতর থেকে গেটটা লাগিয়ে নিও।
আপতকালীন কিছু ওষুধ পকেটে নিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন ডাক্তার সাদিক।এ রাস্তার উপর বাম হাতে অভেদানন্দ প্রাইমারি স্কুল।তার তিনটে বাড়ি ছাড়ালেই জুম্মা মসজিদ।মসজিদ পেরিয়ে ডান হাতের গলিতে দ্বিতীয় বাড়িটা অতনুদের।হালকা আলো ফুটেছে চরাচরে,ঠান্ডা হাওয়া এসে লাগছে চোখেমুখে।ভোরের আজানের সুর এই নিস্তব্ধতাকে ভেঙে বহুদূর ছড়িয়ে পড়ছে।
খোলা গেট দিয়ে একেবারে ভিতরে এসে দাঁড়ালেন ডাক্তার সাদিক।অতনু এগিয়ে এসে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন মার ঘরে।খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলে উঠলেন—-
—–অনেক জল নেমে গেছে শরীর থেকে।বেশ ডিহাইড্রেশন হয়েছে।তবে জটিল কিছু নয়।এই ওষুধগুলো ঠিক করে খাওয়া।আশাকরি এতেই ঠিক হয়ে যাবে।আর যতক্ষণ সেলাইন পাউডার যোগাড় না হচ্ছে ততক্ষণ নুন চিনির শরবত দিতে থাক।
রুগীর ঘর থেকে বেরুতেই অতনুর স্ত্রী এসে সামনে দাঁড়ালেন।
—–দাদা,তোমরা একটু ড্রইংরুমে বসো,চা হয়েগেছে।এক্ষুনি আনছি।
চা পানের পর বাড়ির দিকে রওনা দিলেন সাদিক ডাক্তার।রাস্তায় মসজিদের সামনে ফজরের নামাজের পর ছোট জটলা।প্রায় জনা বিশেক মুসুল্লী নিজেদের মধ্যে খোশগল্পে মশগুল।সাদেক ডাক্তারকে এই ভোরে দেখে সালাম ছুঁড়ে দিলেন ইমাম সাহেব।
—— ইমাম সাহেব আপনারা লকডাউন মানছেন না?
এতোগুলো একসাথে নিয়ে কী নামাজ পড়া ঠিক হচ্ছে?
——- ইমানদাররা তো মসজিদে আসবেই ডাক্তার সাহেব।
——-তার মানে যারা ঘরে বসে নামাজ পড়ছে তারা ইমানদার নয়?
——ইমানদার হতে পারে তবে মসজিদে নামাজ পড়ার ফজিলত তো অনেক বেশি।
ডাক্তার সাদিক বুঝে যায় যে,এদের সাথে তর্কে গিয়ে লাভ নাই।সে স্থান ত‍্যাগ করে।মনে মনে ভাবতে থাকে—এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও এরা কতো বেপরোয়া।কতটা অন্ধ-আনুগত্যের দাস।বিজ্ঞান মানতে,রাস্ট্রের ঘোষিত সতর্কতা মানতে এতোটাই অনিহা! এই কটা কাটমোল্লার জন্য গোটা মুসলিম সমাজকে বারবার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়।
অভেদানন্দ স্কুলের গায়ে আবুলের দোচালা টালির বাড়ি।বারান্দায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে আবুল।তার পায়ের দুটো আঙ্গুল কুষ্ঠের সংক্রমণে অনেক আগেই হারিয়েছে।পৌরসভার দেওয়া একটি হুইলচেয়ারে বসে সে ভিক্ষা করে দিনগুজরান করে।
—–এতো বিয়িনে কুতায় গিয়িলেন ভাইজান?
আবুল প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
—–একটা পেশেন্ট দেখতে,আবুল।
——এই জনতাকারপুতে বেরুতি পারিনি,একানেই বসি বসি হাত পাতি।
——-সে ঠিক আছে কিন্তু তাতে কী তোমার চলছে?
——-চলে কুতায় ভাইজান! সরকার পাঁচ কিলো চাল দিয়িলো,সে তো তিন দিনিই খেয়ি ফুরিন দিলু হারামখোর ছায়েরা!একুন আঙ্গুল খা!!
—–তুমি তো একবার যেতে পারতে আবুল,অন্তত বৌটাকে—।
—–পাটিয়ে ছেনু ভাইজান।ভাবি তো গেটের বাইরি থেকি তাড়ায়ি দিয়িচে।বলে কী একুন লকডন। তা ভাইজান দেশি তো লকডন হয়িচে,প‍্যাটে লকডন হয় না? আপনি তো ডাক্তার,প‍্যাটের একটা লকডনের ব‍্যবসতা করি দেন ভাই,খুব উপকারহয়।।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।