T3 শারদ সংখ্যা ২০২২ || তব অচিন্ত্য রূপ || বিশেষ সংখ্যায় উদয় শংকর মহান্তি

অদ্ভুতুড়ে বিধান

এখন স্বচ্ছ জ্যোৎস্নালোকে
এক একটি অসুখের দিন হেঁটে আসছে ক্রমাগত!
কাপড়ে মানুষ মুখখানা ঢেকে চলে যাচ্ছে দিনের আলোর ভেতর,
একসময় একত্রিতে হারিয়ে যাচ্ছে সবাই
গভীর রাতের আতঙ্কিত ঘুম প্রহরে!
এখনো স্থাপত্যে বেঁচে আছে
গ্রামের প্রান্তে একাংশ ধসে যাওয়া,
দেওয়ালের পলেস্তারার কিঞ্চিৎ,
এবং প্রকাণ্ড পুকুরপাড়।
এখানে দৈত্যাকার গাছগাছালিকে…
চশমা পরিয়ে দৃষ্টি দেয় পূর্ণিমার চাঁদ!
সেই গাছেরা গায়েগায়ে বিমূর্ত দলাপাকিয়ে…
কালো ছায়া নিয়ে লতিয়ে পড়েছে জলের উপর।
লোকাচারের বিশ্বাস,পথ স্তব্ধ করেছে রাত্রিকালীন যাতায়াতের।
একসময় মিটিমিটি ক্লান্ত হ্যারিকেনের আলো জ্বলতো,
বাবার গল্পে পাঁচপুরুষের পুকুরঘাটে মিলিয়ে যেতাম জোনাকির মত।
কাহিনীর মতো একদিন বুড়িমাসি,
পুকুর ঘাটে শাক তুলতে গিয়ে
ছায়ার আশ্রয়ে চোখ বুজিয়ে,ঝিঁঝির ডাক শুনেছিল…
সম্ভিত ফিরে শুঁকেছিল কত খাবারের ঘ্রান!
দেখেছিল রত্নঔজ্জ্বল্যের চাকচিক্য!
অদ্ভুতেদের কাপড়ে বাঁধা ফর্সা মুখশ্রী।
শুনেছিল তাঁদের দূরে দূরে বসে থাকার হাহাকার!
তাঁদের ফিসফাস!
আর সাম্রাজ্যে রক্ষার হুকুমাৱলী!
দেখেছিল তাঁদেরই অগ্রাহ্যকারীদের পরিণাম,
নিজেদের পাশে এসে ছুঁয়ে ফেলতেই তাদের কেউ কর্পূরের মত উবে যাওয়া!
যারা যায় তারা ফেরেনা!
এদের শাস্তিহীন শাসনরাজ্য
এখানে মাসুল নেই!
এদের অনুতাপ নেই!
আছে শুধু চমৎকার সাজসজ্জার সুখ,
আর অসংযত উত্তাপের জ্বর।
অবশেষে বিলীন হয়ে নীরবে চলে যাওয়া আছে।
বুড়িমাসি চৈতন্যে শুনেছিল,
যারা যায় তারা ফেরেনা!
তারপর সে জ্ঞানহারিয়ে মৃতমাছের মতন
শুয়ে থেকেছে তার গ্রামের পৃথিবীতে।
দেখেছে, আকাশে গাছেদের সাম্রাজ্য,
কোঁকড়ানো পাতার বিরাট ছাতা!
নিমেষে পরিবর্তিত হয়েছে রঙিন সামিয়ানায়!
নিকষ অমাবস্যায় আলোলিকার বিচ্ছুরণের প্রশ্নে
জনমানসে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়!ভয়!আর ভয়!
গম্ভীরমেঘের ন্যায় ভয়ের নামকরণের !
বেশ কিছুদিন পরে
রূপান্তরিত বিশ্বাস ঝরে পড়েছে বৃষ্টির মতো
গ্রামশুদ্ধ এসেছে জোড়হাতে নিয়মের ধুপ ধূনো নিয়ে,
নিরন্ন নচেৎ তাচ্ছিল্যের ভিক্ষা খাওয়া, বুড়িমাসি!
পেয়েছে নতুন থান,পরামান্ন,দক্ষিনা,প্রণাম।
প্রহরের হরিনাম কীর্তনে
গ্রামে এসেছে কত ধনধান্যের সুখফল।
এখনো এখানে নিয়মিত রোগসারে ভূতের আশীষে!
স্কুটার থামিয়ে মাথা ঠুকে যায় হাতুড়ে ডাক্তার!
আজও নিশুতি রাতের নিশ্চুপ প্রহরে
সুদূরে ভেসে আসে কুকুরের ডাক!
জনারণ্যের শৃঙ্খলায় স্বাধীন থাকে নিশাচরেরা,
এই কিম্ভুত! আশ্চর্য বেত্রাঘাতের নিস্তব্ধতায় ভূতেদের মত
মানুষে মানুষে কথা হয়,
পাশে যেতে নেই!
লক্ষণরেখা অতিক্রম করে যেতে নেই!
শুধু ভালোবেসে হৃদয়ে যাতায়াত হোক,
তাঁদের মতন,
কারণ, যারা যায় তারা ফেরে না।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।