পাঁচমিশালীতে (নির্বাচিত কবিতা) উজ্জ্বল সামন্ত

১। বর্ষা

বর্ষা যেন ঋতু নয় প্রেমের স্পর্শ তার ফোটায় ফোটায়
ঘন কালো মেঘে ঢাকা সুবিস্তৃত নীল নীলিমায়
ঝরঝর বারিধারা আমন্ত্রণে ঝরে পড়ে ভূপৃষ্ঠে
শুষ্ক হয়ে যাওয়া পুকুর খাল বিল বুকফাটা মাঠে
সুপ্ত বীজ অঙ্কুরিত প্রাণের সঞ্চার পৃথিবীর আলো দেখা
বর্ষা তুমি বীজ মন্ত্র তোমার স্পর্শ ছোঁয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস
গ্রীষ্মের দাবদাহে রুক্ষ রূপ ছেড়ে ধরিত্রী শস্য শ্যামলা
আশায় বীজ বোনে মাঠে সোনালী স্বপ্নে ভূমিপুত্ররা
বর্ষা যেন মোহময়ী চারিদিকে সবুজের আভাস
বর্ষা কখনো ভয়ংকর রূপী চালায় ধ্বংসলীলা
প্রবল বর্ষণে নদ নদী ফুলে-ফেঁপে ভাঙ্গে বাঁধ
বানভাসি মাঠ ঘাট নদী গ্রাম সব ভাসে সোনার শহর
বর্ষার প্রবল বর্ষণে বাঁচতে নিশিযাপন খোলা মাঠে
রিলিফ ক্যাম্প স্থানাভাবে দুর্ভাগা থাকে এক ফালি ত্রিপলে
বানভাসি স্বপ্ন আশা ভরসা মানুষের চোখের জলে
বর্ষা তুমি বর্ষিত হও রেনগজের নির্দিষ্ট স্কেলে…

২। রুপোলী শস্য

বর্ষার ঝিরঝির বৃষ্টি ভেজা দিনে মাঝি নৌকায় বা ট্রলারে জাল নিয়ে
জলের স্রোত ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে উজ্জ্বল শস্য রুপোলী রানীর খোঁজে নদীর মোহনার দিকে
রুপোলী শস্যের ঝাঁক পালে পালে এসে মিষ্টি জলের স্বাদ নেয়
বংশ বিস্তারের লক্ষ্যে জন্ম নেয় রাশি রাশি মৎস্য চারা
ধরা পড়ে এক এক করে আটক মাঝির জালে
কি রুপ তার জল থেকে জালে যখন উঠে আসে নৌকার পালে
রোদের সোনালী আলোয় তার রূপ দ্বিগুণ বেড়ে চোখ ধাঁধিয়ে ওঠে
মাঝির মুখের হাসি জানিয়ে দেয় বিজয়ের ধ্বনি বাজে অভাবের সংসারে
রুপোলীর টানে বাজারে ভিড় উপচে পড়ে দর কষাকষি
নিস্তেজ রুপোলী দেহে চোখগুলো ঠিকরে আছে বরফে
সাইজ ওজনের সঙ্গে দাঁড়িপাল্লা দিয়ে দাম বাড়িয়ে বিক্রেতা হ্যাঁকে
ভোজন রসিক বাঙালি দ্বিগুণ গ্যাটের কড়ি খরচা করে
ইলিশের রকমারি রান্নার বাহারে ভাড়ারে দক্ষযজ্ঞ গিন্নি ঘামে
জিভে জল আনা স্বাদে চেটেপুটে পাত পরিষ্কারে ইলিশের ইতিকথা টানে…

৩। সত্য-মিথ্যা

রেটিনায় কি ধরা পড়ে সব সত্য বা মিথ্যার ছবি,
সমাজের চোখে চামড়া পুরু হয়ে হয়েছে কি ছানি ?
বিশ্বাস অবিশ্বাসের পাল্লা দোলাচলে, কি উপায়ে মাপি ?
মিথ্যার আস্ফালনে সত্য মহাশূন্যে, শাক দিয়ে মাছ ঢাকি !
সত্য এখানে চোখের বালি অস্বস্তি বোধ পর্দাতে
দৃষ্টি হয়তো আবছা হয়ে ক-ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে,
জলের সঙ্গে নোংরা পরিস্কারে যদি মৌলিক দৃষ্টি ফেরে
মুখোশগুলো মুখ ঢাকে ভ্রু কুঁচকে চোখের পর্দা টানে।
সত্য দাহ হয় অহরহ স্বার্থ যেখানে আত্মকেন্দ্রিক
মিথ্যার মুখোশ ছিঁড়ে ফেলার সাহস যেন ঐতিহাসিক
বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধার লোকের আজ বড়ই অভাব
মুখোশের আড়ালে মুখ ঢাকে চেনা গণ্ডির অচেনা স্বভাব !
দশ চক্রে ভগবান ভূত হয় দৃষ্টি কি সেখানে ঐচ্ছিক?
রিপু ইন্দ্রিয়ের কি বা দোষ ত্রুটি, তারাও এখন যান্ত্রিক!
দূষণে ভেজালে জর্জরিত সর্বত্র অস্তিত্বের লড়াই মৌখিক,
সত্য সর্বদা প্রমাণিত বিশ্বাস মিথ্যা এখানে মৌলিক…

৪। ?????

ঠিক ভুলের ব্যবধানটা ছোট্ট সুতোর টানে
তুমি ঠিক না আমি ঠিক বিশ্লেষণের অন্বেষণে
শিরদাঁড়াটা সোজা যখন বেঁকে কেন তবে
দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য টা একটু তফাতে রবে!
তর্ক যুদ্ধ বিশ্বাস অবিশ্বাসে মুখ যখন ঢাকে
সমাজ যখন আঙুল তোলে চোখে চোখ রেখে
পাপ-পুণ্যের দাঁড়িপাল্লা কোন দিকে ঝুঁকে পড়ে মুখগুলো মুখোশ ছেড়ে ফ্যাকাশে আলোর অন্ধকারে !
রীতি নীতি বালাইষাট সত্য কে অবহেলা
জীবনগুলো তুচ্ছ নয় করো কেন হেলা ফেলা ?
দায় এড়াতে মোড় ঘোরাতে অসহায় অবস্হা
কে কার ঘাড়ে চাপবে অজানা অনিশ্চয়তা! …

৫। প্রশ্নোত্তরে

দেখবো কি পৃথিবীর সৌন্দর্য আগামীতে
বেঁচে থাকব সুন্দর পৃথিবীতে প্রশ্নচিহ্নে
চারিদিকে মৃত্যু মিছিলের উপস্থিতি!
কি হবে মানবজাতির চরম পরিনিতি?
বহু প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে পরিস্থিতি
একাকীত্ব ভয়ে কুঁকড়ে যায় গৃহবন্দী
ইমিউনিটি আর সংক্রমনের আজব খেলায়
মৃত্যু যেন অচেনা অতিথি, দাঁড়িয়ে দোরগোড়ায়
আবিষ্কারের নেশায় মহামারীর বীজ বপন
প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে গোটা পৃথিবী
বিজ্ঞানের আবিষ্কারে প্রতিরোধ্য হবে মহামারী ?
প্রশ্নোত্তরের খোঁজে, তবে কি এখানেই কলিযুগের ইতি…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।