বাড়িগুলো সব আলোকমালায় সাজানো হয়েছে। এখন দীপাবলির সময় নয়; অসময়ে আলোর- মালায় পথচারীরাও বিস্মিত;লোকমুখে জানা গেছে, মালকিনের ছোট ছেলে শংকর আজ পাঁচ বছর পর জেল থেকে বেকসুর হয়ে সসম্মানে ঘরে ফিরছে। রামচন্দ্র, সেই ত্রেতাযুগে রাবন-বধের পর ঘরে ফেরার কালে অযোধ্যা নগরী, আলোয় আলোকিত বলে কথিত; এঘটনা সামান্য হলেও মালকিনের কাছে ‘বহুৎ, ‘বহুৎ’। চরম শত্রু জ্ঞাতি চাচা, শকুন সিংকে প্রকাশ্য দিবালোকে পথের ওপর পাঁচটা বুলেটে শরীর- ঝাঁঝড়া করে, আইনের মারপ্যাঁচ খাটিয়ে আজ শংকর ফিরছে; এওতো কম আনন্দের বিষয় নয়!
বড় ছেলে, নারায়ন সিং, প্রতিজ্ঞা করেছিল, ভাইকে সসম্মানে ছাড়িয়ে এনেই সে চুল-দাড়ি কাটবে;সরকার পক্ষ, চাক্ষুষ দেখা ব্যক্তির সাক্ষ্য হাজির করার চেষ্টা (চেষ্টা) করলেও, ব্যর্থ হয়। সাক্ষী শেষ পর্যন্ত হোষ্টাইল হওয়ায় শংকর সিং বেকসুর খালাস পায়। আজ নারায়ন সিং, চুল-দাড়ি কেটে ফ্রেস হয়ে ভাইকে আনতে যাচ্ছে সদর -জেলখানায়। ব্যান্ড-পার্টি, আগেই চলে গেছে। নারায়ন, তার লোকজনদের সতর্ক থাকতে বলেছে, শংকরের বন্ধুদেরও সে বলেছে ভীড়ের মধ্যে মিশে থাকতে, যাতে চাচার লোকেরা কোন বদলা নেবার সুযোগ না পায়;যদিও সম্ভাবনা কম, চাচার দলের মেরুদণ্ড একেবারে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে, তবু সাবধানের মার নেই । আজ সে খুব হাল্কা বোধ করছে। মা-কে সব বুঝিয়ে সে রওনা হয়েছে:ছেলেকে বিদায় দিয়ে মালকিন, স্থূল দেহটাকে টেনে গঙ্গার দিকের বিল্ডিং’র ঝুলন্ত সেতুতে রাখা একটা ইজি চেয়ারে নিজের শরীর এলিয়ে দিয়েছে।
সুদর্শন সিং, বিহারের ঠাকুর সম্প্রদায়ের একজন। ভাগ্যান্বেষণে কোম্পানির রাজত্বকালে সাহেবদের সঙ্গে পশু শিকারের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে শেষ জীবনে সাহেবদের অনুকম্পায় এখানে গঙ্গা তীরে ইট-খোলার ব্যবসা করার অনুমতি পায়। তারপর তো সব ইতিহাস, এ অঞ্চলের প্রায় সব ইটখোলাই ঐ সুদর্শন সিং’র ছেলে, নাতি, পুতিদের দখলে। সবাই পরস্পরের জ্ঞাতি, আর জ্ঞাতি-বিদ্বেষ বা শত্রু- তা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে।