ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৭৭)

সুমনা ও জাদু পালক

মস্ত বড় তালাটা শব্দ করে ভেঙ্গে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তেই প্রকান্ড দরজার পাল্লা দুটো সশব্দে খুলে গেল দু’দিকে। সুমনা বানর রাজ প্রদত্ত শক্তিশালী গদা কে নমস্কার জানিয়ে বলল, আমাকে সাহায্য করার জন্য আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ জানাই । বিপদে পড়লে আমি আবার আপনার সাহায্য প্রার্থী হব। দয়া করে তখন আমাকে সাহায্য করবেন । মুহূর্তের মধ্যে অদৃশ্য হল গদা।
সুমনা দেখতে পেল, বড় ঘরটার মাঝখানে একটা বিশাল আকৃতির রথ। সুমনার হাতে ধরা স্বর্ণদণ্ডের প্রবল আকর্ষণে পায়ে পায়ে ঘরের মাঝখানে উপস্থিত হলো সুমনা। রথের দিকে তাকায়।
সুমনাদের গ্রামে রথযাত্রা উপলক্ষে রথ বেরোয়। সরকার বাড়ির রাধামাধব মন্দিরে থাকে সেই রথ । সারা গায়ে কারুকার্য করা পিতলের তৈরি রথ । খুবই সুন্দর দেখতে । কিন্তু সে রথ তো এত বড় নয়, এই রথের থেকে অনেক অনেক ছোট।
এই রথ একেবারে অন্যরকম । কী বিশাল এই রথ। কত বড় বড় চাকা রথের। আকৃতিতে বিশাল রুপোর তৈরি তিন তলা রথ। রথের সারা গায়ে কারুকার্য করা ।
রথের মাথায় লাগানো স্বর্ণ নির্মিত অপূর্ব সুন্দর এক গরুড় মূর্তি। মূর্তিটির হাতে ধরা একটি স্বর্ণদণ্ডে লাগানো পীত বর্ণের পতাকা। সুমনার মনে পড়ে গেল, পুষ্প নগর রাজ্যের রাজা রুদ্র মহিপাল বিষ্ণুদেবের ভক্ত ছিলেন। তাই রথের মাথায় বিষ্ণু বাহন গরুড়ের মূর্তি।
কিন্তু শক্তিশালী স্বর্ণদণ্ড তাকে এখানে নিয়ে এলো কেন? কী আছে এই রথে?রথের উপরের অংশে সুদৃশ্য আসন। সম্ভবত রাজা রুদ্র মহিপাল রথে চেপে রাজ্য ভ্রমণের সময় ওই আসনে উপবেশন করেন।
কিন্তু রথের মাঝের অংশ অতটা বড় কেন?হাতের দণ্ডই বা তাকে ওদিকে আকর্ষণ করছে কেন? কী আছে ওখানে?
সুমনা রথের চারিদিকে ঘুরে বেড়ায়। ঘুরতে ঘুরতে দেখতে পায় রথের যে অংশটা ঘরের দেওয়াল থেকে একটু দূরে অবস্থিত, সেখানে রথের গায়ে একটা ছোট্ট গর্ত। সুমনা কৌতূহলবশত ওই গর্তে চোখ রাখে। অবাক হয় সে। চারিদিকে আবদ্ধ রথের ওই মাঝের অংশের ভিতরটা নিশ্ছিদ্র অন্ধকার হওয়ার কথা। তার বদলে ভেতরে পূর্ণিমার চাঁদের জ্যোৎস্নার মত মিষ্টি আলোয় ভরা। আরেকটু ভালো করে নজর করে সুমনা দেখতে পায়, রথের ওই মাঝের অংশের মেঝেতে শুয়ে আছে অপরূপা এক নারী। ধবধবে সাদা তার গায়ের রঙ। আর ওই নারীর শরীর থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে হালকা নীল বর্ণের মিষ্টি আলো।কে ওই নারী? ওকে ওখানে ওভাবে আটকে রাখা আছে কেন? তবে কি তবে কি ওই নারী……..?
অদৃশ্য কন্ঠের কণ্ঠ কানে ভেসে আসে, তুমি ঠিক ভেবেছো রাজকুমারী রত্নমালা।
——মানে?
—–ওই নারীই পরীদের রানী। শয়তান হূডু ছলনা করে বন্দী করে রেখেছে পরীদের রানীকে। তুমি ওকে মুক্ত কর রাজকুমারী।
——অবশ্য ই করব, যেভাবে পারি।
সুমনা আবার চোখ রাখল রথের গায়ের ওই ছোট্ট গর্তে। আর সেই মুহূর্তে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। সুমনার হাতে ধরা স্বর্ণদণ্ডটি যেন সুমনার হাত থেকে পিছলে বেরিয়ে ওই গর্তের মধ্য দিয়ে ঢুকে গেল ভিতরে। তারপর সেটি গিয়ে পরীরানীর মাথায় স্পর্শ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই পরী রানী উঠে বসলেন। তারপর সেই দণ্ডটিকে দেখতে পেয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো তাঁর মুখ। বুকে জড়িয়ে ধরলেন দণ্ডটিকে।দণ্ডটির গা থেকেও তখন বিচ্ছুরিত হচ্ছিল মিষ্টি নীলাভ আলো। আর সেই আলো গায়ে লাগতেই হঠাৎ যেন পরী রানী তাঁর শক্তি ফিরে পেলেন। তিনি ওই দণ্ডটি হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। তারপরে এগিয়ে এলেন রথের গায়ের ওই গর্তটির কাছে। হাতে ধরা দণ্ডটি ওই গর্তটির চারিদিকে ঘুরিয়ে বিড়বিড় করে কি যেন মন্ত্র পড়তে লাগলেন। সুমনা আশ্চর্য হয়ে দেখল যে, রথের গায়ের ওই গর্তটা আস্তে আস্তে বিশাল আকার ধারণ করল। আর সেই মস্ত গর্তের ভিতর দিয়ে জাদুদণ্ড হাতে বাইরে এলেন পরী রানী।
যে মুহূর্তে পরীরানী বাইরে এলেন, ঠিক তখনই এক দণ্ড সময় অতিক্রান্ত হওয়ায় সুমনার অদৃশ্য অবস্থা শেষ হল। সুমনা কি করবে বুঝতে না পেরে ইতস্তত করছিল। পরীরানী বললেন, তুমি দুশ্চিন্তা করোনা। আমি আমার জাদুদণ্ড একবার যখন হাতে পেয়ে গেছি,হূডু আর কিচ্ছু করতে পারবে না। কিন্তু আমার এই জাদু দণ্ড কোথায় ছিল? তুমি কোথায় পেলে?
—— রাজা রুদ্র মহিপালের শয়ন কক্ষে। শয়তান হূডু কৌশলে লুকিয়ে রেখেছিল ওটা।
—— তোমায় অসংখ্য ধন্যবাদ , আমার এই জাদু দন্ড উদ্ধার না করলে আমি মুক্তি পেতাম না।
বিস্মিত সুমনা বলল, কিন্তু আপনি কি আমাকে চেনেন?
——– অবশ্যই। তুমি তো রাজকুমারী রত্নমালা।
তুমিই উদ্ধার করবে আমাকে, এতো আমি জানতাম।
—— কিন্তু হে পরীরানী, আমি এখনো পর্যন্ত জানতে পারিনি যে, রাজকুমার রোহন কে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে দুষ্টু হূডু।
—– আমি জানি কোথায় আছে রাজকুমার।
——কোথায়?
—— চলো আমার সঙ্গে।
—— কিন্তু রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা….
——- ও এখন ভালো আছে।-
——- আপনি কি করে জানলেন?
পরীরানী একথার কোনো উত্তর না দিয়ে মৃদু হাসলেন।
পরী রানী বললেন, এবারে আমার হাত ধর রত্নমালা।
সুমনা হাত বাড়িয়ে দিল। পরী রাণী সুমনার হাত
নিজের হাতে নিলেন। তারপর চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই সুমনাকে নিয়ে পৌঁছে গেলেন চন্দ্রকান্তা ও রাজা রুদ্র মহিপাল এর কাছে।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।