কাব্য কথায় উজ্জ্বল কুমার মল্লিক

কৌন্তেয় সংবাদে রাধেয়

কর্ণ—-কে তুমি মাতা! একাকিনী প্রভাতকালে
অপেক্ষা-রতা, পুণ্য-তোয়া সম্মুখে রাখি
জানিতে উৎসুক, নও তো তুমি প্রার্থী!
কুন্তী—–দুখিনী, অভাগা মাতা, লজ্জা-হীনা এক
নারী, সঙ্কুচিত, সন্ত্রস্ত আপনি আজি
রহিতে সম্মুখে নিজ নাড়ি-কাটা ধনে।
কর্ণ—-স্নান সমাপনে, প্রাতে সূর্য-পুত্র কর্ণ
কভু না ফিরায় প্রার্থী, সুবিদিত জনে।
বল মাতঃ! কী অভিপ্রায়ে অপেক্ষ আজি!
কুন্তী—পৌরুষ প্রকাশে,দিনমনি পুত্র তুমি
বিচ্ছুরিত জ্যোতি-প্রভা প্রকাশিত তথা
ঐ পৈতৃক পরিচয় ‘কবচকুণ্ডলে ‘:
কর্ণ—-কৌতূহল কর দূর এ অভাগা-জনে।
কুন্তী—নহ পুত্র, অভাগা তুমি, আদিত্য জানে।
কর্ণ—বিশ্বলোকে খ্যাত অনাথ, ‘রাধেয়’ জ্ঞাণে।
কুন্তী—সত্য যাহা ঐ, কীভাবে মাতা প্রকাশিবে
আপনার গোপন লজ্জা পুত্র সকাশে।
কর্ণ—রাধা, সারথ্য, মোর মাতা ইহ জগতে।
কুন্তী—দিনমনি আকাশে, মাতা রয় সম্মুখে
মর্মভেদী ক্লেশে, তোর সাথে প্রতি পদে।
কর্ণ—প্রণমি মাতা! পরিচয় অজ্ঞাত আছে।
কুন্তী—ধৈর্য ধর পুত্র, দেখি তোরে প্রাণভরে।
কর্ণ—মাতৃ-স্নেহে বঞ্চিত এ জন জন্ম থেকে।
কুন্তী—শত আঘাত হানুক মোরে বজ্র-রূপে।
কর্ণ—প্রকাশী পরিচয়, কৌতূহল বিদারে।
কুন্তী—পাণ্ডব-জননী আমি, এসেছি কৌন্তেয়
তোর স্বরূপ প্রকাশে, অপরাধী মনে
জন্মদাত্রী মাতা তোর, ভুল সংশোধনে।
কর্ণ—কৌন্তেয়! আমি বিস্মিত, আলোড়িত মনে।
কুন্তী—কৌতুকে, কুমারী কালে করেছি সম্ভোগ
আদিত্য সাথে, তারই বীর্যে বীর্যবান
তুমি, জ্যেষ্ঠ-পুত্র মোর, ঐ কৌন্তেয় রূপে।
কর্ণ—স্তব্ধ হও! দিননাথ কী সম্ভোগে নারী!
আবেগে ঘটেছে মিলন কোন পুরুষে,
লোক-লজ্জ্বায়, দায় চাপাও ঐ আদিত্যে।
ছিঃ! না সহি ইষ্ট অপমান, না অ-খ্যাতি।
কুন্তী—আমি আজ ক্ষমাপ্রার্থী, তোর জন্মদাত্রী।
কর্ণ–কুরুক্ষেত্র করেছে প্ররোচিত, হে নারী।
কুন্তী—সহোদরের মধ্যে সংগ্রামে ভীত আমি।
কর্ণ—হে কুরুক্ষেত্র! আমি কর্ণ, করি কুর্ণিশ।
কুন্তী—আয় ফিরে পুত্র মোর অধর্মেরে ত্যাজি।
কর্ণ–হে নারী! ধর্ম-অধর্ম সাজে না ও মুখে
আপন পুত্রে যে দেয় সলিলে সমাধি,
ক্ষমাও তারে দেখি দূরে রয়, লজ্জিত
কুণ্ঠা-বোধে, ঘোমটায় থাকি মুখ ঢাকি।
হে নারী! প্রার্থীকে কর্ণ করে না নিরাশ,
অর্জুন ভিন্ন কোন পাণ্ডবে বধিবে না
রাধেয় কর্ণের রহিল এ অঙ্গীকার।
স্বপ্নের মাঝে মাতায় খুঁজেছি বহুদিন
কাতর হ’য়ে মা, মা করেছি চীৎকার
নিঠুর নিয়তির শুনেছি উপহাস:
যুদ্ধের প্রাক্কালে এসেছে মাতা আমার
করিতে হতোদ্যম, দুর্বল, না সক্ষমে
পূর্ণ সংগ্রাম উদ্যমে, বিক্ষুব্ধ অন্তরে;
না বাঁচিতে ইচ্ছা হয় এ ঘৃণ্য শরীরে
ত্যাজিব কুরুক্ষেত্রেই বীর-গতি লভে।
হে অন্তর-দেবতা! রাধেয় কর্ণ আজি
মাগে করজোড়ে অন্তিম ইচ্ছাপূরণ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।