সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব – ২)

সাদা মিহি বালি

প্রথম অধ্যায়
(
প্রথম পর্ব)

এই আধা-শহরের উদ্যোগী পুরুষ, রাঘবেন্দ্র ঘোষাল, শহর থেকে অনতিদূরে, পঞ্চায়েত এলাকায়, হুগলী নদীর ধারেই ইট- খোলা করেছেন; অবশ্য এখানে, জলাধার করে পলি পাবার সুবিধা নেই। শীতকালে, নদীর ধার থেকে মাটি তোলা হয়; আবার মাঠের মাটিও কিনতে হয়। দেখাশোনা করে, ছোটভাই অবনীন্দ্র ঘোষাল; খোলাতেও অফিস আছে; মুনশিই, লোকজনদের সঙ্গে কথাবার্তা চালায়;দৈনন্দিন ঝুট- ঝামেলা মেটায়; অবস্থা আয়ত্তের মধ্যে না হলে, রাঘবেন্দ্র বাবুকে আসরে নামতে হয়। তিনি অবশ্য সবই নজর রাখেন; নিজেদের বাড়িতে ও রয়েছে অফিস। সমস্তরকম, কাঁচা, পাকা সব খাতাই এখানে আছে;অফিসে, কুড়ি জন কর্মচারী আছে, সবাইকেই তিনি আপনজন বলেই ভাবেন। রাঘবেন্দ্র ঘোষাল, জেলার রাজনৈতিক নেতার খুবই ঘনিষ্ঠ; তাঁর হ’য়ে ভোট পরিচালনার(দ্বায়িত্ব নিলাম) দায়িত্ব তিনি স্ব- ইচ্ছায় নিয়েছেন। শাসকের গা ঘেঁষে না থাকলে, এ স্বাধীন -দেশে কোন ব্যবসা- উদ্যোগ চালানো সম্ভব নয়।

মেজভাই, শিবশংকর, নিকটবর্তী কারখানায় ঠিকেদারি করে; কারখানার সব রকম বর্জ্য
সামগ্রী সরাবার কাজ;
টেন্ডার জমা দিয়ে তবে ঠিকেদারির কাজ(পেতে হয়) পেতে হয়। তার কাছেও প্রায় শ’খানেক লোক কাজ করে; দশ- বারোটা ঠেলা, সারাদিন কারখানার স্ক্রাপ- মাল, কারখানা থেকে সরিয়ে নিজেদের নির্দিষ্ট গো- ডাউনে জমা করে। সেখানে জমা- মাল, ঝাড়াই- বাছাই হয়ে কোলকাতার বিভিন্ন ছোট ছোট শিল্প- কারখানায় কাঁচামাল
হিসেবে চলে যায়। অনেক সময়, ঐ সব বর্জ্য- মালের সঙ্গে দামী, দামী মেশিন পত্রের পার্টস, পিতলের সামগ্রীও কারখানার বাইরে চলে আসে; সেগুলো চড়া দামে কেনবার
লোক কোলকাতার বড় বাজারে
মুখিয়ে আছে। অনেক সময় কারখানার পাঁচিল টপকিয়ে উৎপাদিত সামগ্রীও বাইরে ফেলা চলে;শিবশংকরের দলের একাংশ
সেগুলো নিয়ে পাশেই নদীর নৌকোতে চাপিয়ে ওপারে পৌঁছে দেয়, গজিয়ে ওঠা দেশের নতুন সমাজ- ফড়েদের গো- ডাউনে।
ঠিকেদারি ব্যবসা বেশ রমরমিয়ে চলছে। রক্ষক দারোয়ানেরা সব জানে; ওরা তো লক্ষ্মীর বশ। দেশের যুব- সমাজ এখন উদ্বৃত্ত শ্রমিক, আবার প্রায় (সবাই বলল) সবাই কলোনীর স্কুল- ছুট। সুতরাং তাদের দিয়ে এসব অন্যায়, বে- আইনী কাজ করানোটা খুবই সহজসাধ্য। একদল অন্নের খোঁজে, অন্যজন ভাণ্ডার পূরণে —
পথ একই, লক্ষ্য ভিন্ন।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।