ক্যাফে ধারাবাহিক উপন্যাসে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব – ২২)

শহিদ ভগৎ সিং চরিত
সপ্তম অধ্যায় || দ্বিতীয় পর্ব
কাহিনীকার বলে চলেছে, “1923-24 সালে, খাজনা বয়কট করায়, সরকার, কৃষকদের জমি
ক্রোক করতে এলে, চাষীরা সংঘবদ্ধভাবে সরব হয়ে প্রতিবাদে নেমেছে; গান্ধীজি মহারাজ তো জেলে আছেন। চাষীরা বাড়ি- ঘর তালা বন্ধ করে, ভোরেই সবাই গ্রাম ছেড়ে, গ্রামের বাইরে চলে গেছে; নিয়মানুসারে, সূর্যাস্তের পর আর ক্রোক করা যাবে না, আবার, দিনের বেলায় গ্রামে কেউ না থাকায়, সাক্ষীর অভাবে ক্রোক করাও যাচ্ছে না। শেষে, সরকারকে মাথা নত করতে হয়; এখানে গান্ধীজির অবদান তো নেই; আর, সত্যাগ্রহ করে অসহযোগ আন্দোলন, তিনি এদেশে প্রথম চালু করেননি, সেটা করেছেন, রামদাস বাবাজী।”
“কানপুরে, হিন্দু- মুসলমান দাঙ্গা লেগেছে; সরকার, দণ্ডমূলক টাক্স ধার্য করেছে। ‘প্রতাপ’ পত্রিকার সম্পাদক, গণেশশংকর বিদ্যার্থীর কাছে, তাঁর কর্মচারীদের নাম ও বেতন জনতে চেয়ে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের হুকুম নামা জারি করা হয়েছে। গণেশজি তো অমান্য করলেনই, উল্টে, পুলিশের ব্যর্থতা তুলে ধরতে হাজার হাজার সহি সম্বলিত প্রতিবাদ পত্র পাঠালেন।”
“মীরাটে, খাজনা মকুবের জন্য সত্যাগ্রহ শুরু হয়েছে। পাঞ্জাবের লাহোর ও শেখপুর জেলায় শিলাবৃষ্টির জন্য ফসল নষ্ট হওয়ায়, সেখানেও খাজনা মকুবের জন্য চাষীরা আন্দোলন শুরু করেছে, কিন্তু ঐ আন্দোলনে কোনো কংগ্রেস- নেতাকে বক্তব্য রাখতে, চাষীরা দিল না। দেশ একটা অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে চলেছে। আবার, সরকার ঐ সব আন্দোলন ভাঙ্গার জন্য আসন্ন সেন্ট্রাল এসেম্বলী অধিবেশনে Trade Disputes Bill ও Public Safety Bill আনতে চলেছে। সরকারের হাতে দমন নীতির জন্য দেশের আইনসভায় পাশ হওয়া বিল, আইনে কার্যকরী হলে, বিনা বিচারে জেল, দীপান্তর হবে যখন, তখন। ভগৎ সিং ও অন্যান্যHSRA’ র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা আলাপ- আলোচনা করছে; এখন এমন একটা কিছু করা দরকার, যা দেশের মানুষের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করবে, পৃথিবীর সব মানুষ, সরকারের দমন- নীতি সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হবে;দেশের মুখোশধারী, আপোষকারী রাজনৈতিক দলগুলোর আসল চরিত্র উন্মোচিত হবে, তখনই হয়তো ঘুমন্ত মানুষের চেতনা, ফিরলেও ফিরতে পারে। সাবধান তো থাকতেই হবে;মনে রাখতে হবে, রাসবিহারী বসুর নেতৃত্বে গাদার(Gadher) আন্দোলন (সারা দেশে মিলিটারীদের মধ্যে বিদ্রোহ, 1914-15) কেবলমাত্র ঐ জনগণের আস্থা- ভাজনের অভাবে ও মীরজাফর কিরপাল সিং’র মত লোকের বিশ্বাসঘাতকতায় বিফল হয়েছে;এভাবে ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসকে বারবার
বিশ্বাসঘাতকেরা কলঙ্কিত করেছে।”