সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব – ২৭)

সাদা মিহি বালি

(৪র্থ অধ্যায়, তৃতীয় পর্ব)

চারদিকে অশান্তি। অমরেন্দ্রের ইট-খোলায় জোর করে কিছু অতি- বাম, নক্সালাইট, আশ্রয় নিয়েছে। CRP , ঐ অতি- বামদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে। ছোট ভাইকে প্রায় সারা দিনই ইট-খোলায় থাকতে হয়। অতি- বামেরা ‘জুলুম- ট্যাক্স’
চালু করেছে। হাজারিবাগ, পালামৌ অঞ্চল থেকে অভিজ্ঞ শ্রমিকেরা শীত পড়বার আগেই এ অঞ্চলে আসতো; এখন এই হামলার ভয়ে শ্রমিকের দল আর
আসছে না। এদিকে, পূর্ব- পুরুষদের কু- প্রবৃত্তির মনোভাবটা
অমরের মধ্যে জেগে উঠছে; অলস মস্তিষ্ক তো শয়তানের কারখানা, ভাটার কাজ এক রকম বন্ধ, তবু অফিসে রোজই আসতে হচ্ছে; এরকম পরিস্থিতিতে ইট- খোলা, লোকের হাতে ছেড়ে দিয়ে থাকা, উপযুক্ত বলে রাঘবেন্দ্র বাবু মনে করেন না;শিল্প চালাতে কত রকমের বাধার সম্মুখীন হতে হয়, সব, ঠাণ্ডা মাথায় ধীরে ,ধীরে সমাধান করতে হয়। তাই অমরকে
প্রতিদিনই খোলায় যাবার কথা বলেছেন। কিন্তু, অমরেন্দ্র তো একটু অন্য প্রকৃতির; সেখানে কাজ নেই ,তো ঐ অঞ্চলের একটা বাড়ির সাথে তার হৃদ্যতা বেড়েছে, দুপুরে, খাওয়া- দাওয়াও নাকি ঐখানেই সারে। রাঘবেন্দ্রবাবু, এসব কথা ‘মুনসির’ কাছ থেকে শুনেছেন।
“বাবু তো অধিকাংশ সময়ই খোলায় থাকেন না; মাঠের মাটি কিনে মাটির পাহাড় করতে, শ্রমিকদের আগাম দাদন দিতে, কয়লার সংস্থান করতে, তো বাবুর সম্মতির প্রয়োজন। এ সব এখন থেকে না করে রাখলে, পরের শীতে, ইট- ভাটা চালানো দায় হয়ে উঠবে।। এ বছর, না হয় পুরোনো ইট বিক্রি করে কোনো রকমে চলে যাচ্ছে বটে, কিন্তু আগামী বছর ইট তৈরি, পোড়ানো, না করলেই, নয়।”

অমরের কাজ- কর্মে রাঘবেন্দ্রবাবু খুবই বিরক্ত। কাজের প্রতি অনীহা থাকলে ব্যবসা করা যায় না। সব সময় মনে রাখতে হবে, লক্ষ্মী চঞ্চলা, তাঁকে সাদরে যথাযোগ্য ভাবে আহ্বান জানাতে হয়; উপযুক্ত সময়ে, নিজের কাজ সম্পাদন করতে হয়। সময় কখনও স্থির থাকে না; বাবা, কাকাকে দেখেছেন কী পরিশ্রমই না করতেন! কাকা, যৌবনে নারী -সঙ্গ করলেও, তাঁকে
উপযুক্ত সম্মান জানিয়ে আর বিয়ের পিঁড়িতে বসেননি। আর এরা! বিয়ে করেও বিপথগামী। ঘরের লক্ষ্মী যদি চোখের জল ফেলে, তবে সিন্দুকের লক্ষ্মী কখন ও সিন্দুক- জাত থাকতে পারে না।
স্ত্রী, রমনীকে
ডেকে বললেন, “তুমি তো বৌমাকে একটু শক্ত হতে বলতে পারো; মেয়েটি বুদ্ধিমতী; একটা ছেলেকে ঘরমুখো
করতে পারছে না! “

“অমর, আজ রাতে বাড়ি এলে, আমার সাথে দেখা করতে বলবে”,
বলে রাঘবেন্দ্রবাবু চিন্তিত মুখে
অফিস ঘরের দিকে পা বাড়ালেন।

অফিসের হিসাবরক্ষককে, অমরের ইট- খোলার ক্যাস বইটা ও ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টটা নিয়ে আসতে বললেন।

ব্যাঙ্ক- স্টেটমেন্টে দেখেন, বেশ
মোটা রকমের টাকা পরপর কয়েক খেপে সেল্প চেকের মাধ্যমে তোলা হয়েছে। মুনসি’র কথা মত, মাটি কেনার টাকা দেওয়া হয়নি, কয়লার সংস্থান হয়নি, অথচ অত টাকা তুলে কী করা হয়েছে; তাহলে যা কানে আসছে, সেটাই কি হচ্ছে?

ক্রমশঃ

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।