সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব – ১)

শহরতলির ইতিকথা

সেই সকাল থেকেই ‘ফুঁ-‘ আওয়াজ চলছে; ভাই-ফোঁটার দিন, বাড়িতে একের পর এক ‘ভাই’ আসছে, না, রমার নিজের কোনো সহোদর-ভাই নেই, পাড়া, বেপাড়ার ছেলে, যুবকদেরই সে, এদিন ‘ফোঁটা’ দিয়ে থাকে।নিভাননী দেবীর কতটা সায় আছে বা আছে কিনা, না বোঝা গেলেও, তিনি ,কোনো আপত্তি করেন না। রমার মামা, অর্থাৎ নিভাননীর দাদা, পাশের পাড়ায় হলেও,কোনোদিন ভাই ফোঁটার দিন এসে নিভাননীদেবীর কাছে ফোঁটা নিয়েছেন বা বোন গিয়ে ফোঁটা দিয়ে এসেছে কি না, রঞ্জন বা ওর দাদার জানা নেই,তবে, এ অঞ্চলে পাকাপাকি ভাবে আসার পর প্রথম দু’একবছর,মামাতো ভাইরাই কেবল আসতো।এখন, প্রতিবছরই,ওরাও এসে বারোয়ারি ফোঁটার উৎসবে যোগ দেয়, তা চলছে প্রায় বছর ছয়েক তো বটেই।

ভাই – ফোঁটার দিন, ঐ হট্টগোলের জন্য রঞ্জনের পড়াশোনায় খুবই ক্ষতি হয়, না, কোনো উপায় নেই, সব সহ্য করতে হয়; ওরা, নিভাননীদেবীর বাড়িতে ভাড়া ছিল; মাসের শেষের দিন অথবা মাসের এক তারিখে, রঞ্জনের বাবাকে, ভাড়া দিয়ে রসিদ নিতে দেখেছে। আগে,ওদের এক আত্মীয় এসে ভাড়ার টাকা নিয়ে যেত, সই করে রসিদ দিত। নিভাননীদেবীরা, হাওড়ার শিবপুর অঞ্চলে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন, বাপের বাড়ির কাছে – পিঠে বলে, ঐ অঞ্চলকেই বেছে নিয়েছিলেন । স্বামী, রাধাকান্ত মিত্রমশাই, কোলকাতার জিপিওতে চাকরি করেন, পিতৃপুরুষদের বসত – বাটি থেকে, কোলকাতার অফিসে, প্রতিদিন যাতায়াত করার অসুবিধা ভেবেই, পৈতৃক বাড়ির একটা অংশ ভাড়া দিয়ে, নিজের পরিবার নিয়ে কোলকাতায় ছিলেন; মাঝে, মাঝে এসে রঞ্জনের বাবাকে, অন্য অংশটাও লোক দিয়ে পরিস্কার করে রাখার অনুরোধ করতেন, অতি সজ্জন ব্যক্তি; কাছেই, আত্মীয় থাকলেও রঞ্জনের বাবাকেই সেই অনুরোধ করতেন, রঞ্জনর বাবা, ধর্মদাস হাজরাও হাসিমুখে, সে অনুরোধ রেখে এসেছে। মিত্তির মশাই ‘র দুই মেয়ে, বড়মেয়ে রমা আর ছোটটার নাম শান্তি। কি কারণে যে নিভাননীদেবী
একদিন কন্যাদের নিয়ে, হঠাৎই কোলকাতা ছেড়ে, এই বাড়িতে চলে আসেন; বাড়ি পরিষ্কার – পরিচ্ছন্ন ছিলই, তাই, কোনো অসুবিধা হয়নি। তখনও রঞ্জনরা, মিত্র মশাই ‘র বাড়িতে ভাড়ায় থেকেছে। ঐ বাড়ি থেকেই রঞ্জনর দিদির বিয়ে হয়েছে। রঞ্জন, তখন ক্লাশ ফাইভের ছাত্র, আর ওর দাদা ক্লাশ সিক্সে। রমার বয়স কত না জানতে পারলেও, ম্যাট্রিক পরীক্ষায় সেবার সে অকৃতকার্য হয়েছে, এটুকু থেকে বয়স অনুমান করে বলা যেতেই পারে যে, রমা তখন উদ্ভিন্ন যৌবনা, আর যৌবন – জল – তরঙ্গের উচ্ছ্বাস যে ভয়ংকর, তা বলাই বাহুল্য।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।