T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || বিশেষ সংখ্যায় উজ্জ্বল কুমার মল্লিক
by
·
Published
· Updated
কবির সঙ্গে কয়েক মুহূর্ত
কলম হাতে নিয়ে কবিগুরুর
জন্মদিনে কিছু লিখবো ভাবছি; কিন্তু, সামনে অনিশ্চয়তার খাড়া পাহাড়, নিশ্চিতই প্রয়াস ব্যর্থ হতে বাধ্য।
বিশ্বব্রহ্মাণ্ড- সমান ব্যক্তিত্বের প্রায় সব দিক নিয়েই এতো লেখা হয়েছে, এতো গবেষণা হয়েছে যে সেগুলো পড়তেই আমার মত লোকের দুটো জন্মেও সম্ভব হবে কি না সন্দেহ; ভাবনাটা শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রূপ পাবে কি না সে বিষয়ে সংশয়ে আছি। হঠাৎই মনে পড়লো, কবি তো এক কালে প্ল্যান-চেট বিশ্বাস করতেন,
অভ্যাসও করেছেন; এখন ডাকলে আসবেন কি না, বুঝতে পারছি না, আর ওসবে আমার একরকম বিশ্বাস নেই বললেই চলে; যাই হোক, টেবিলে রাখা কবির ফটোর দিকে একমনে চেয়ে আছি, কখন যে গভীর চিন্তা-মগ্ন হয়ে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিয়ে ছিলাম, জানি না। টেবিলের পাশে, জানালার কাছেই রাখা পূর্বপুরুষদের আরাম-কেদারার ক্যাঁচ, ক্যাঁচ আওয়াজে সংবিৎ ফিরতেই ,দেখি সেই কালো জোব্বা পরে সাদা দাড়িতে বক্ষ শোভিত করে আধ- শোওয়া অবস্থায় কবি আমার দিকে মুচকি, মুচকি হাসছেন। বিস্ময়ের ঘোর কাটতেই আমি সম্ভ্রমে, সশ্রদ্ধ প্রণাম জানিয়ে বলে উঠি, হে কবি—-
অন্তর রবি, আকাশ রবি
মিলে মিশে বেশ একাকার,
যে দিকে তাকাই তুমি রহ
সব কিছু দিয়েছ উজাড়।
কবি, দাড়িতে হাত বোলাতে, বোলাতে বললেন, ” শেষ-যাত্রা কালে, যে টান তোমরা দিয়েছিলে, তার বেদনা এখনও আমায় ভোগাচ্ছে, তাই হাত বুলিয়েই চলেছি; যাক ওসব, তলব কেন হে! বলে ফেল, আমাকে আবার অনেক জায়গায় যেতে হবে। তোমাদের এখানে পার্কিং’র খুব অসুবিধা,তাই রথটা এখন চক্রাকারে নিমতলার স্বর্ণদ্বারের উপর ঘুরছে।যাক আমার শতবর্ষ পরে—-( ১৪০০ সাল) লেখা সার্থক হয়েছে; বিদ্যাসাগর মশাইকে তো তোমরা তাকে তুলে রেখেছ, আমার ক্ষেত্রে সেটা হয়নি, দেখছি। ”
আমি বললাম, “হে কবি! আপনার কবিতা যে জীবন- মুখী, চির ভাস্বর, অক্ষয়, অব্যয়,আজও সমানভাবে আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক।”
“একটা কথা আপনার কাছে জানার ছিল”, বলেই আমি কবির দিকে চেয়ে রইলাম।
” বলে ফেল। ”
আমি বললাম, ” দেখুন, প্রায়ই শুনি যে আপনি না কি, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী মহাশয়কে’মহাত্মা’
উপাধিতে ভূষিত করেছেন, সেটা কি যথার্থ? ”
কবি, একটু হেসে বললেন, “সবই রটনা হে! আমি কেবলমাত্র তাঁকে ঐ বলে সম্বোধন করেছি। আমার আশ্রমে আসার অনেক আগেই ঐ নামটি তাঁর নামের আগে সেঁটে ছিল। ওনারা গুজরাটি, একে অপরকে তোলার চেষ্টা করে, নামায় না। দঃ আফ্রিকায় অহিংস আন্দোলন করে লোককে মার খাওয়ার অভ্যেসের মাধ্যমে, প্রত্যাঘাত না করে সহিষ্ণুতা প্রদর্শনের দ্বারা অন্যায়কারীর
হৃদয় জয় করার প্রচেষ্টা উনি চালান। দেশে ফিরলে এক আয়ুর্বেদ- ফার্মেসীর কর্তা, জিভবাম শাস্ত্রী মশাই ,রসাসালার জনসভায় সংবর্ধনা কালে এই” মহাত্মা ” নামটি ওনার নামের আগে বসিয়ে দিলেন, ব্যস তারপর —-। এর সঙ্গে আমার সংস্রব নেই। আমার আশ্রমে, অর্থাৎ শান্তি নিকেতনে আসার আগেই উনি ‘মহাত্মা’।অবশ্য এখন বলা হচ্ছে, সৌরাষ্ট্রের এক জনসভায় কোন একজন লোক বলেছিলেন। “
” আচ্ছা, আপনি কি ওনার পথ সমর্থন করতেন ”
“দেখ, আমি বিশ্বজনীনতায় বিশ্বাসী ছিলাম, জাতীয়তাবাদী তে মোটেই আস্থা ছিল না। তবে পথ সমর্থন না করলেও বেশ কিছু মতে আমার সমর্থন, যেমন ধর purification of soul এটিকে মানতাম;
উনি ঘিয়ে ভাজা পুরীকে বিষ ভাবতেন, আর আমি চিরকাল ঐ বিষই খেয়েছি, অবশ্য বলতেই পারে অনেকে, আপনার নামের সংগে ইন্দ্র দেবতা জড়িয়ে রয়েছে, তাই সব হজম হয়েছে; তা হতেও পারে।
এবার শোন, টলারেন্স সম্পর্কে একটা কথা বলি, বায়ুমণ্ডলে নিম্ন
চাপ দেখা দিলে, চারদিক থেকে সেখানে ভারি বাতাস বয়, সেই রকম তুমি যদি মার খেয়েই যাও, দেখবে আরও কপালে বেশি মার জুটছে। যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না, সেও সমান দোষী। প্রতিবাদের ভাষা অন্যরকম হতে পারে, তবে পরে পরে মার খাওয়াটা ভীরুতা, সেইটা পাপ,প্রতিবাদী চরিত্র না হতে পারাটা অন্যায় । ”
” আচ্ছা, উনি রামধুন গাইতেন, সে সম্বন্ধে আপনার মতামত কী? ”
” এটা ওনার ব্যপার, উনিই বলতে পারবেন, আমি উপনিষদে বিশ্বাসী, ও সব আবেগে আমার সম্মতি নেই;উনি কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিলেন, বিজ্ঞানে আস্থা ছিল না, বিহারের ভূমিকম্পে হাজার, হাজার লোকের মৃত্যুকে পূর্বজন্মের কর্মফল বা পাপের ফল বলে আখ্যায়িত করেছেন। “
আর একটা প্রশ্ন করবো, “আচ্ছা,
হিন্দু- মুসলিম মৈত্রী সম্পর্কে আপনার মতামত কী? ”
” দেখ, হিন্দু- মুসলিম মৈত্রীটা ছিল একেবারেই ফাঁপা। ফাঁপা ্্দ্্্্দ্্্দ্্্্দ্্্দ্্্্দ্্্দ্্্্দ্্দ্্্দ্্্্দ্্্দ্্্্দ্্্দ্্্্দ
দুই ধর্ম, খ্রীষ্টানিটি ও ইসলামের মধ্যে সহনশীলতা র বড় অভাব, ধর্মান্তরিত করাই যেন একমাত্র উদ্দেশ্য, ওদের সংগে মৈত্রী সম্ভব কেবলমাত্র ওদের ধর্ম গ্রহণে। ওদের দেশপ্রেম ও কোন দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, আল্লাহ হো আকবর ধ্বনিঔতে সবাই একত্রিত হবেঅর্থাৎ ধর্মের নামে ওরা ঐক্যবদ্ধ। কোন মুসলমান যদি দেশ আক্রমণ করে, সেই মুসলমানের বিরোধী হওয়া চলবে না, এটা ধর্ম বিরোধী কাজ, তাহলে বুঝতে ই পারছো, বর্তমান কালের মৈত্রী টা কী প্রকারের! হিন্দু রা, সব বিভক্ত, কখনও এক হতে জানে না, ফলতঃ, তোমাদের ভাগ্য নিয়ে আমি খুবই সঙ্কিত। “
” আচ্ছা, শুনেছেন নিশ্চয় যে BBC ‘র পোলে আপনাকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি র মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রাখা হয়েছে। প্রথম মুজিবুর রহমান, এ বিষয়ে আপনার প্রতি- ক্রিয়া জানতে আগ্রহী। ”
” ঐ দেখ, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা সব সময় আগে থাকবে , এতে আশ্চর্য হবার কী আছে,এটা ওদের জমিদারি কী না! ”
” চরকা চালানো ব্যপারে, আপনার মন্তব্য যদি একটু বলেন,
তো খুশি হই”
কবি বললেন, ” ঐভাবে সময় নষ্ট করা র পক্ষপাতী আমি নই। আমার শান্তি নিকেতনে, ঐ সবের পাট ছিল না। কুঠির- শিল্পের উন্নয়নের পক্ষপাতী ছিলাম, কিন্তু তা বলে খাদির বাড়বাড়ন্তে আমার অনীহা ছিল, এখনও তাই; সুতো কেটে, চরকা চালিয়ে অমূল্য সময় নষ্ট করার বিরোধী ছিলাম।”
” যাক, সময় হয়ে এসেছে, এবার আমায় উঠতে হবে, যা জানার বলে ফেল”
“হে কবি! আমাদের দেশের মুদ্রায় ঐ একজনের ছবি ই দেখা যায়, এ বিষয়ে আপনার অভিমত জানতে ইচ্ছা করি। “
” কারন, তোমাদের দেশের লোক এটা মেনে নিয়েছে, পৃথিবীর কোথাও এরকম ঘটে না, এমনকী যে দেশে ঐ মহান ব্যক্তির মূর্তি বসানো আছে, সেখানেও না। এ থেকে কী বোঝা যায় না তিনি মহাত্মা অপেক্ষা বেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, ” বলেই কবি উঠে দাঁড়ালেন।