অণুগল্পে তপস্রী পাল

কুমারী
শ্যামবাজারের বিখ্যাত বসু বাড়ি। দুর্গাপুজোয় অষ্টমীতে কুমারী পুজো। দশ বছরের বেদত্রয়ীও কুমারী হয়েছিলো একবার। কণের মতো সেজে সিংহাসনে বসে, নিজেকে বেশ ঠাকুর ঠাকুর লাগে। পুরোহিতমশাই, যাকে বেদত্রয়ী পুজোদাদু বলে, তিনি জোগাড় করেন এক একটি বাচ্চা মেয়ে।
এবার দাদু খুব চিন্তায় পড়ে গেছেন। পুজোদাদু কুমারী জোগাড় করতে পারেননি।
হঠাৎ বেদত্রয়ীর মনে পড়লো বাতাসীর কথা। গতবার স্কুলে “দুর্বার” বলে একটি সংস্থা এসেছিলো কয়েকটি মেয়েকে নিয়ে। স্কুলের অ্যানুয়াল ফাংশনে নাচ গান করেছিলো । প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম বলেছিলেন “ওদের ‘দুর্বার’ই পড়াশোনা, নাচগান শেখায়।“ সেখানেই বাতাসীকে দেখেছিলো বেদত্রয়ী! ফুটফুটে মেয়ে। চোখদুটি নীল! বেদত্রয়ীর সঙ্গে ভাব হয়ে গিয়েছিলো। বাতাসী দুর্বারের আন্টির ফোন নম্বর দিয়েছিলো । বাতাসীকে কুমারী খুব মানাবে, ভাবে বেদত্রয়ী।
ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন। পুজোদাদু বারবার জিজ্ঞাসা করছেন। হঠাত বেদত্রয়ী বললো “আমার এক বন্ধুকে বলবো?” দাদু বললেন “বাঁচালে দিদিভাই! নিয়ে এসো!” “দাঁড়াও!” বলে দৌড়ে গিয়ে ‘দুর্বার’এ ফোন করলো বেদত্রয়ী। আন্টি বললেন “সত্যি! তাহলে এসো আমাদের অফিসে।“ গাড়িটা সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ থেকে ডানদিকে ঢুকতেই ড্রাইভার মুখ কুঁচকে বললো “রেডলাইট এরিয়া!” গলি রাস্তা। লোকজন অদ্ভুতভাবে দেখছে। আন্টি একটা পুরোনো বাড়ির সামনে নিয়ে গেলেন। ভিতরে ঘুঙ্গুরের আওয়াজ। একটি মেয়ে বিশ্রী শাড়ি পরা, ঠোঁটে টকটকে লিপস্টিক, ইশারায় ডাকলো। একটা ঘরে নাচ চলছে। নোংরা পর্দা ঢাকা আরেকটা ঘরে একা ছবি আঁকছে বাতাসী। আন্টি নাচের ঘরে গিয়ে কথা বলছে। বাতাসী বেদত্রয়ীকে দেখে অবাক! জড়িয়ে ধরলো! বেরিয়ে আন্টি বললেন “বাতাসী যাবে।“
দাদুর খুব পছন্দ হলো বাতাসীকে। বললেন-
“খুব মানাবে! তোমার নাম? কোন ক্লাসে পড়ো?”
“বাতাসী”
পুজোদাদু বললেন “পদবী কী?“
“নেই। স্কুলে নেয়নি। দুর্বারের আন্টিদের কাছে পড়ি।“
“বাবার নাম?” ও শুধু ঘাড় নাড়লো।
পুজোদাদু ভুরু কুঁচকে দাদুর দিকে তাকালেন। ড্রাইভার, দাদুর কানে ফিসফিস করলো! দাদু বেদত্রয়ীর দিকে রাগী মুখে তাকিয়ে বললেন “তুমি ওকে চিনলে কী করে!” বেদত্রয়ী স্কুলের কথা বললো। পুজোদাদু বললেন “নিয়ে যাও! ছিঃছিঃ” বেদত্রয়ী দেখলো বাতাসীর চোখে জল! হঠাত সবাইকে অবাক করে দাদু বললেন “মা যাকে নিজে পাঠিয়েছেন তাকে আমি না করার কে? বাতাসীই কুমারী হবে!“ বেদত্রয়ী হেসে জড়িয়ে ধরলো বাতাসীকে।