দিনলিপিতে তৃণা ঘোষাল – ৪

বাড়ির গল্প ৪

রূপকথার গল্পর রাজবাড়ী বল্লেই যে ছবি আমার চোখের সামনে ভাসে তা হল আমাদের ইস্কুলবাড়ির ছবি।গোটা বাড়িটাই একটা ছবি।মেহগনি কাঠের দরজা তাতে পিতলের হাতল,সবুজ ঠাকুরদালান আর লাল চকচকে মেঝে।এক্সকুইজিট।লাল মেঝে দিয়ে একদিকে ঠাকুরদালান,ঠান্ডা, শান্ত – আজো যখন স্কুল যাই দুদন্ড বসি,মনটা জুড়িয়ে যায়। ওই চারচৌকো উঠোনটা-কত অনুষ্ঠান,কত রিহার্সাল, কত পিটি আর ওয়ার্ক এডুকেশন ক্লাসের অফুরন্ত আনন্দের উৎস। পুজোর সময় দুগগা ঠাকুরের প্রথম মুখ দেখতাম আগমনীতে সেও ওই উঠোনে দাঁড়িয়ে।সেসব অনেক কথা। এখন থাক।আমাদের স্কুলের ওই মারবেলের সিঁড়িটা ছিল অনবদ্য।ঠান্ডা সিঁড়িতে পা দিয়ে কেমন যেন মনে হত রূপকথার রাজ্যে যাচ্ছি।দোতলার লাল বারান্দা আর তাতে পড়া রোদের কারিকুরি – ঠিক যেন গগন ঠাকুরের ছবি।মেন বিল্ডিং থেকে ক্রিস্টিন বিল্ডিং এর মাঝে ছিল হস্টেল আর একটা জমিতে কিছু গাছ আর একটা ছোট্ট ঘাসজমির বাগান।সায়েন্স বিল্ডিং এর সিঁড়ির ধাপ গুলো যেখানে কত্ত দিনের কত গোপন কথার ভাঁড়ার উজাড় করে দিয়েছি বন্ধুদের কাছে এখনো চোখ বুজে ছুঁয়ে আসি মাঝে মাঝে।প্রথম কতকিছু…. বন্ধুত্ব, নিজেকে চেনা,খাদের কিনারা থেকে ফিরে আসার লড়াই,আত্মসম্মানের অধিকার, কত নতুন লেখককে চেনা,কত ভালবাসা,স্নেহ পাওয়া – শুধু তো নিয়েই গেছি ঝুলি ভরতি করে।
কত্ত বছর হয়ে গেছে আমার এই খানে নিয়মিত আসার বৈধ অধিকার শেষ ।কিন্তু ওই যে সোজা থামের পরে থাম,লাল বারান্দায় রোদের আঁকিবুকি,সোজা খোলা দরজাগুলো,দরজা জানলার খড়খড়ি,ক্লাসরুমের বেঞ্চগুলো এদের কাছে আমৃত্যু কৃতজ্ঞ আমি,এরাই তো এখনো বুঝিয়ে দেয় অধিকার আছে,এখনো একইভাবে।আমার, আমাদের,আমাদের সময়ের এই বিশেষণ গুলো তো চিরকালীন।নিজের বাড়িতে আবার অধিকার হারায় নাকি।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।