|| শাম্ভবী সংখ্যা ২০২১ || T3 শারদ সংখ্যায় তনুশ্রী দেবনাথ

কিশোরী বেলা

 হঠাৎ হঠাৎ ই নানান রকম প্ল্যান-প্রোগ্রাম মাথায় খেলে যায় দুই বান্ধবীর। আসলে বয়সটা বাড়লেও মন এখনো সেই স্কুল বেলায় ,জীবনটা কিভাবে চুটিয়ে উপভোগ করতে হয় তা শিখতে হয় ওদের কাছে। যাই হোক বাঙালির বড় উৎসব এসে গেছে ,চারদিকে আলোর রোশনাই, মাঠজুড়ে কাশের দোলা, আকাশে পেঁজা তুলোর ভেসে বেড়ানো, আগমনীর সুরে মেতে উঠেছে প্রকৃতি। চারদিকে খুশির রঙে মেতে উঠেছে বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই।ওরাই বা বাদ যায় কেন? ওরা মানে রিমিতা আর পাওলি দুই বান্ধবী।
 এমনিতেই ওদের মেতে থাকার জন্য শুধু অজুহাত লাগে, আর এ তো রীতিমত দুগ্গাপুজো, মহা ষষ্ঠীর দিনেই ভরদুপুরে বেরিয়ে পড়েছে দুজনে, বাড়ির লোকের বারণ শোনার মতো ভালো মানুষ কিন্তু ওরা একেবারেই নয় ।প্যাচপ্যাচে গরমে চিঁড়েচ্যাপটা ট্রেনের ভীড় ও দমাতে পারেনি ।উৎফুল্ল দুই অকাল কিশোরী দাপিয়ে বেড়িয়েছে তিলোত্তমার পথঘাট।
   পুজো মানেই দেদার খাওয়া-দাওয়া ডায়েট ফায়েট শিকেয় তোলা দিন কয়েকের জন্য ,ওরাও বাদ  দিচ্ছে না কিছু, যা ইচ্ছে গলাধঃকরণ করে ফেলছে টপাটপ। পুজোয় রাস্তার পাশে অস্থায়ী দোকানে ছয়লাপ হয়ে ওঠে সেখানেও হানাদারি দুজনের ,যেন ওরা না জিনিস কিনলে দোকানীর পেট চলা দায়!
    রাস্তার পাশে সার সার দাঁড়িয়ে আছে টানা রিকশা, রিমিতার আবদার "পলি চল রিকশা চড়ি, কতদিন চড়িনি"। পলির চোখে মুখে ভয় "নারে আমি পারবো না ,কোনদিন চড়িনি ভয় লাগে ,তাছাড়া হাঁটুর ব্যথা কোমরের ব্যথা এসব তো আছেই সেসব নিয়ে অত উঁচুতে উঠবো কী করে!"পলি উঠবে না আর রিমি ছাড়বে না ,সে তো আগেভাগে উঠে বসে আছে। যেন পলিকে টানা রিকশা চড়াতে না পারলে এক মহতী কর্ম করায় ছেদ পড়বে। যাই হোক অনেক কসরতের পর শেষ পর্যন্ত রিকশায় উঠতে সফল হয় পলি, তারপর দুজনের সেকি আনন্দ যেন ফিরে গেছে বালিকা বেলায়।এবার তো রিকশা চড়ার সেলফি নিতেই হবে তা না হলে রিকশা চড়ার মজাটাই মাটি হয়ে যাবে বৈকি। শুরু হয়ে গেল ফটো খিচিক মোবাইল ক্যামেরায় ।নামার সময় আর ততটা বেগ পেতে হয়নি অল্প চেষ্টাতেই রিকশা থেকে নামতে পারল পলি। রিমি টার পাল্লায় পড়ে এই বয়সে এসে এমন একটা কঠিন কাজ করে ফেলল!!
   সারা দিন কাটল বেশ আনন্দে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে পড়ে ফটোশুট হয়েছে দেদার। জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে যাওয়া সোশ্যাল মিডিয়াতে টিঁকে থাকতে হলে ফটো যে ভীষণ ভীষণ জরুরী জিনিস ,তাই ফ্রন্ট ক্যামেরা ব্যাক ক্যামেরার প্রয়োগ হয়েছে যথেচ্ছভাবে।
   বছরের আর পাঁচটা দিনের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে একটা দিন কাটাতে পেরে ওরা যতপরনাই খুশি।"থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড় "এই কি জীবন ?নিত্যনতুন আমেজে ভরিয়ে রাখতে হবে নিজেকে তবেই না বাঁচার মানে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে এবার ফিরতে হবে , সঞ্চয়ের ঝুলিতে প্রচুর আনন্দ ভরে নিয়ে ওরা ফেরার পথ ধরল।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।