T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || বিশেষ সংখ্যায় তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য
by
·
Published
· Updated
মনের মন্দিরে
সুগন্ধ যেদিকে মনও সেদিকে ।এ এক অদ্ভুত ব্যাকুলতা। তবে এ সৌরভ জীবন গড়ার।বাতাসে ভেসে থাকা মাটির উত্থিত সোঁদা গন্ধ। টিনেজার বয়সে মান্ডবীর প্রখর অনুভব শক্তি।মাঝে মাঝে ফাঁক পেলেই চলে যাচ্ছে গোয়াল পাড়ার হারু ঘোষের বাড়ি। হ্যাঁ হারু বিয়ে করেছে।কাঁচ কাঁচ রঙের মিষ্টি বউ টিয়া। সব জিনিস নতুন মানুষ নতুন যেন পাটভাঙা সুবাস। মান্ডবী চুপ করে শান্ত হয়ে পাশে গিয়ে বসে। বউ টি নদীর মতো হাসে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে। মান্ডবী মুগ্ধ হয়ে নিজেকে ভাবে।ভাবতে ভাবতে হারিয়ে যায় , হঠাৎ নতুন বউ বলে ওঠে নোকপালিশ পরবা? মান্ডবী সামলে নিয়ে বলে না না এই যে আমার নখে আছে।
তবুও টিয়া জোর করে একটা নীল রঙের টিপ পরিয়ে দেয় তারপর আয়না ধরিয়ে বলে দেখ কেমন ম্যাচ হয়িছে নীল জামার সঙ্গে।এভাবেই বেশ কিছুদিন চলতে থাকে। আস্তে আস্তে দুজনের পরিচয় পুরনো হয়ে আসে। মান্ডবীর জীবনের পথ আরো দীর্ঘ হয়।একজন ব্যস্ত মানুষ আর একজন পূর্ণ নারীতে পরিণত হয়। দেখা হয় কখনও সখনো হাসি বিনিময় চলে । মান্ডবীর প্রগাঢ় জীবনবোধ ওকে অনেক কিছু ভাবতে শেখায়। আজ সাত বছর হয়ে গেল টিয়ার এখনো কোনো বাচ্চা হয়নি।
টিয়ার বর হারু একজন রুক্ষ মনের মানুষ ।পেটে এক কলম বিদ্যে নেই অথচ একটি বিয়ে পাশ মেয়েকে বিয়ে করেছে। হারুর দুধের বড় ব্যবসা।হারুদের অনেক গরু মোষ, বড় বড় তিনটে গোয়াল। বছরে তিনমাস গরু নিয়ে বাথানে যায় দূরের কোনো অচেনা গ্রামে। এক কথায় বড় ব্যবসা।আর মেয়েটি খুব গরীব কষ্ট করে লেখাপড়া টুকু করেছে।ওর মা বাড়ি বাড়ি বাসন মাজে।বাবা মিষ্টির দোকানে কাজ করে।তার উপর তিন মেয়ে এক ছেলে , এতগুলো পেট চালানো কম কথা নয়।মান্ডবী মাঝে মাঝে টিয়ার কান্নার আওয়াজ পায়।অলক্ষ্মী কুলোটা বাঁজা এই সব বাজে বাজে কথা কিল চড় সবই মান্ডবীর কানে আসে। নিরীহ মেয়েটাকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করে কিছুতেই কিছু হয়না।এভাবেই চলতে থাকে আস্তে আস্তে মিষ্টি টিয়া শুকিয়ে কালো দড়ি হয়ে গেল। মান্ডবী চলে গেল জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়তে।
প্রথম বর্ষে চরম র্যাগিং, পিরিয়ড অবস্থায় জোর করে ব্রেক ডান্স করতে হয় এক ঘন্টা ধরে।ফল স্বরূপ প্রচন্ত ব্লিডিং আর পেট ব্যথা।কাছেই ছিল ডাঃ মুখোপাধ্যায়ের চেম্বার সামান্য চোট পেয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যথার ঔষধ আর ঘন ঘন চেকআপ এ মান্ডবী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠল।
ডাক্তার বাবুর কেমন যেন মেয়েটার প্রতি মায়া একটা আত্মীয়তা হল। সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হল দাদা কিংবা বন্ধুর মতো। কী খেয়ালে হঠাৎ মান্ডবীর টিয়ার কথা মনে পড়ল ডাক্তারবাবু কে সব কথা জানাল।যদিও ডাক্তার কিছু ঔষধ লিখে দিলেন কিন্তু রুগী না দেখে চিকিৎসা সম্ভব নয়।
একদিন মান্ডবী ওদের কালনার বাড়িতে ডাক্তার মুখোপাধ্যায় কে নিয়ে এলো।
অনেক বলে কয়ে টিয়ার বরকে রাজী করে ডাক্তারের কাছে টিয়াকে দেখানো হল।কিছু পরীক্ষা করতে বললেন। যথারীতি পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে এলো।দেখা গেল ফেলোপিয়ান টিউবে কিছু সমস্যা।তবে তার জন্য বেবী হতে কোনো সমস্যা নেই । আসল সমস্যা মানসিক তা ডাঃ মুখোপাধ্যায় ধরে ফেলেছেন।প্রয়োজন কউন্সেলিং এর। দিনের পর দিন অত্যাচার সেই মন নিয়ে টিয়ার কী ফার্টিলিটি হবে? টিয়ার বর টিয়াকে বার দুয়েক জলপাইগুড়ি নিয়ে গিয়েছিল। তারপর সময় সুযোগ বুঝে মান্ডবীর সঙ্গে গিয়েছে বেশ কয়েকবার। এভাবেই আস্তে আস্তে টিয়ার শরীর আগের মতো ঝলমল করে এখন। মান্ডবী এখন ছুটিতে বাড়িতে এসেছে। সারাদিন পড়ে পড়ে দেদার ঘুমোচ্ছে।
আজ সকালে হুড়মুড়িয়ে টিয়ার শ্বশুরবাড়ির লোক মান্ডবীর বাড়িতে ঢুকে চিৎকার করছে আর বলছে কোথায় রেখেছ আমাদের টিয়া বৌমাকে? এ সব তোমার ই কাজ ।কোথায় টিয়া?
থানা পুলিশ সারাদিন ধরে কোথাও কোনো খোঁজ পাওয়া গেলনা। এই করে চারমাস না পাওয়া গেল টিয়ার খোঁজ না পাওয়া গেল ডাক্তার বাবুকে। ব্যাপারটা এতদিনে পরিষ্কার কিন্তু কোথায় গেল তারা? ষোলই অক্টোবর ষষ্ঠীর দিন হঠাৎ ডাক্তার বাবুর ফোন টিয়া সন্তান সম্ভবা এখন। বোঝা গেল ওরা ভালোই আছে।
ওরা এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে, দক্ষিণ ভিয়েতনামের মেকং নদীর ধারে একটি গ্রামে ওরা আছে।ডাঃ মুখোপাধ্যায় ওখানকার গ্রামীণ হাসপাতালে চাকরি করেন। টিয়া সুদূর ভিয়েতনাম থেকে মান্ডবীকে রবীন্দ্র সঙ্গীত রেকর্ড করে পাঠায় হোয়াটসঅ্যাপ এ। কোনো দিন গান না শিখেও এতো অপূর্ব গলা ও গায়কী সত্যিই এটা মান্ডবী স্বপ্নেও ভাবেনি।
এই গান টা টিয়া অপূর্ব গায় ” কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া”।