গল্পবাজে তীর্থঙ্কর ভট্টাচার্য

হনুমান গুরু
রঙ্কুর ঘরের পাশেই গাছপালা। আর সেখানে থাকে এক হনুমান। এত লম্বা তার লেজ যে জানালার কার্নিসে বসলে লেজটা নিচে জানালা ছাড়িয়ে আরও নিচে ঝুলতে থাকে। তবে সে জানালা দিয়ে হাত টাত বাড়ায় না বা জিনিসপত্র টানাটানি করে না। রঙ্কু যখন পড়ে, সেই সময় জানালায় এসে বসে থাকে। রাতে মাঝে মধ্যে হুপ হাপ আওয়াজ শোনা যায় জানালার পাশে।
রঙ্কুর মা লক্ষ্য করেছে যে যখনই রঙ্কুর গানের মাস্টারমশাই আসে, তখনই হনুমানটা জানালার পাশে গাছের ডাল থেকে হাঁ করে চেয়ে থেকে গান শেখানো দেখে। একদিন ত ত রঙ্কু গান গাইছে আর মাস্টারমশাই তবলা বাজাচ্ছে, সে সময়ে সে লাফ দিয়ে জানালায় এসে বসে পড়ল। তারপর জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দিল। তখন মাস্টারমশাই বাজনা থামিয়ে দিয়ে গিয়ে জানালাটা বন্ধ করে দিল।
দুদিন পরে। রঙ্কুর মা বাড়ির একতলায় কাজে ব্যস্ত ছিল। রঙ্কুকে বলে গিয়েছিল পড়া হয়ে গেলে গানের রেওয়াজ করত। বেশ খানিকক্ষণ পরে হারমোনিয়ামের প্যাঁ পোঁ আর তবলায় এলোপাথাড়ি চাঁটি শোনা গেল। রঙ্কু গান ধরল। মা ত দোতলায় এসে ত ব্যাপার দেখে চক্ষু চড়কগাছ। মাটিতে মাদুর পেতে রঙ্কু মন দিয়ে গান করছে আর সামনে বসে হনুমান ডুগি তবলায় চাঁটি মেরে যাচ্ছে। দেখে ত রঙ্কু র মার হাঁইমাই চিৎকার। বাড়িশুদ্ধ লোক ছুটে আসতে না আসতেই হনুমান দরজা দিয়ে রঙ্কু র মার পাশ কাটিয়ে বারান্দায়। তারপরে এক লাফে বারান্দার রেলিঙে আর তারপরে লাফ দিয়ে উধাও। কোনোমতে রঙ্কুর মা দু হাতে দেয়াল ধরে টাল সামলালো।
বাড়ির সব লোক চলে আসাতে সে একটু সামলে উঠল। সবাই রঙ্কুকে জিজ্ঞাসা করল হনুমান এল কোথা থেকে। রঙ্কু বলল ‘ কেন বারান্দায় নেমে দরজা দিয়েই ত এসেছে।’
-‘ তুই ওকে তবলা বার করে বাজাতে দিলি?’
-‘ হ্যাঁ, ও ত হাত বাড়িয়ে তবলা চাইল।’
সকলে মুখ চাওয়া চাওয়ি করল সেকথা শুনে।
তারপরে বাড়ির বড়রা সকলে মিলে এই নিয়ে কিছু একটা পরামর্শ দিয়েছেন করল তা রঙ্কু জানে না। হনুমান কদিন আর আসেনি।
পরের সপ্তাহে আবার একদিন দুপুরে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, আবার রঙ্কুর ঘর থেকে একইরকম আওয়াজ। সকলে দোতলার বারান্দায় গিয়ে উপস্থিত।
ভিতরে রঙ্কু হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইছে আর অবিকল রঙ্কুর গানের মাস্টারমশায়ের ভঙ্গিতে সামনে হনুমান বসে আছে আর সামনে তবলা রাখা। দুটো হাত দুটো তবলায় রেখে গানের মাস্টারমশায়ের ভঙ্গিতে সে রঙ্কুর দিকে তাকিয়ে আছে আর মাথা নাড়ছে। মাঝে মাঝে চোখ বুজে ফেলছে আবার কখনো তবলায় চাঁটি মেরে তাল মেলাতে চেষ্টা করছে।
তাই দেখে ত সকলে কোনো আওয়াজ না করে মুখ টিপে হাসতে লাগল। রঙ্কুর মা রান্নাঘর থেকে চা আর পাঁউরুটি একটা মাটির সরায় করে এনে দরজার সামনে রেখে তফাতে আড়ালে দাঁড়িয়ে রইল।
মাথা নাড়তে নাড়তে যেই সেই সরার দিকে নজর গেছে, হনুমান তবলা পেটানো থামিয়ে হাত বাড়িয়ে সেগুলো টেনে নিল। তারপর ঠিক মাস্টারমশায়ের মত করে চা টা খেল আর তারপরে পাঁউরুটি খেয়ে নিয়ে আগের দিনের মত দরজা দিয়ে বারান্দায় এসে লাফ দিয়ে চলে গেল।