ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৮৬)
সুমনা ও জাদু পালক
সুমনা যে মুহূর্তে ওর হাতের অস্ত্রটা উট পাখিটার ডানা লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারল, ঠিক তখনই জাদুকর হুডু সেটা খেয়াল করল। ও আসন্ন বিপদের কথা বুঝতে পারল। বুঝতে পারল যে উট পাখিটা আহত হলে ওকে আকাশ পথ ছেড়ে স্থলপথে নেমে লড়াই করতে হবে। আর সেটা ওর পক্ষে খুব একটা সুবিধা জনক হবে না।তাই ও মুহুর্তের মধ্যে ওর হাতের জাদু দন্ডটা পরী রাণীর দিক থেকে ঘুরিয়ে সুমনার ছোঁড়া অস্ত্রের দিকে তাক করল। আর চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই ওই জাদু দন্ডের ভেতর থেকে একটা জ্বলন্ত অগ্নি গোলক বেরিয়ে এলো। কিন্তু সুমনার ছোঁড়া অস্ত্রের মুখোমুখি হতেই জাদুকরের ছোঁড়া অগ্নি গোলক
মুহূর্তের মধ্যে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। তারপর মনে হল যেন সুমনার ছোঁড়া অস্ত্র টা বীর বিক্রমে এগিয়ে গেল উট পাখির ডানা লক্ষ্য করে। চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই মন্ত্রপুত অস্ত্রের তীব্র আঘাতে উট পাখির ডানাটা ভেঙে ঝুলে গেল। পাখিটার যন্ত্রণা কাতর চিৎকারে আকাশ বাতাস ভরে উঠলো। সুমনার চোখ ছল ছল করে উঠলো পাখিটার জন্য।
পাখিটার ডানা ভেঙে যেতেই সুমনার ছোঁড়া অস্ত্র টা ফিরে এলো তারই হাতে। সেটাই তো নিয়ম।
দৈত্যরাজ তো তাই বলেছিলেন।
পাখিটা আহত হতেই তার পক্ষে আর আকাশে ভেসে থাকা সম্ভব হলো না। তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে ও নিচে নেমে এলো। বাধ্য হয়ে ওর পিঠ থেকে নেমে এলো জাদুকর হূডু।
মাটিতে পা দিয়ে ও গর্জন করে উঠলো, রত্নমালা, বহুবছর আগে একবার তোকে আমি শেষ করেছিলাম। তুই আবার এসেছিস আমার সঙ্গে লড়াই করতে? তুই কি ভেবেছিস যে, পরীরানীকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে আমাকে হারাবি? তোর ওই পরী রানীকে তো আমি এতদিন বন্দি করে রেখেছিলাম। আমার অবর্তমানে তুই আমার প্রাসাদ থেকে চুরি করে পরীরানীকে মুক্ত করেছিস । প্রয়োজন হলে ওকে আমি আবার বন্দী করব। আমার জাদুদন্ডের ক্ষমতা তোরা কেউ জানিস না।
রাজা রুদ্র মহিপাল গর্জে উঠলেন, বৃথা আস্ফালন কোরোনা মিথ্যাবাদী জাদুকর। এই প্রাসাদ এই রাজ্য এ তোমার নয় ,আমার। তুমি মিথ্যাচার করে অন্যায় ভাবে এগুলো দখল করেছিলে। কি ভেবেছিলে, তুমি চিরদিন একইভাবে তোমার অন্যায় কাজ চালিয়ে যাবে?
মন্ত্রবলে আমাকে, আমার রানী কে এবং প্রাসাদের লোকজনকে বিকৃত দেহ করে রেখেছিলে। দেখেছো তো দেব হরিহরের আশীর্বাদে আমরা সবাই আবার পূর্বের রূপ ফিরে পেয়েছি।
——– দেব হরিহর! সেটা আবার কে? আমি তো জানতাম যে , রাজারুদ্রমহিপাল বিষ্ণুভক্ত রাজা।
—— তুমি ঠিকই জানতে হূডু, আমি আগে বিষ্ণু দেবের ভক্ত ছিলাম। কিন্তু এখন আমি দেব হরিহরের আশ্রয়ে আছি।উনি বিষ্ণুদেব এবং ভোলা মহেশ্বর দেবের মিলিত রূপ। ওই দিকে তাকিয়ে দেখো, জলাশয়ের পাড়ে আমার আরাধ্য দেবতা।
পরীরানী তার জাদু দন্ডটিকে হূডুর দিকে তাক করেই বললেন, তুমি যদি এতই শক্তিশালী , তাহলে ‘ছেলের অসুখ হয়েছে ‘ এই মিথ্যা কথা বলে আমাকে কেন নিয়ে এসেছিলে এখানে ?… আর কেনই বা আমার মায়াদণ্ড চুরি করে মহারাজার শয়ন কক্ষে গুপ্ত জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিল?
অদৃশ্য কন্ঠ বলল, হে মহারাজ রুদ্র মহিপাল,হে পরীরানী ,দুষ্টু জাদুকরের কথায় আপনারা কেউ প্রভাবিত হবেন না। আপনার একযোগে আক্রমণ করুন ওকে।
সুমনা বলল, তার আগে আমাকে একটা কাজ করতে হবে।
—কী?
—– আমার ছোঁড়া অস্ত্রে ওই উটপাখিটা আহত হয়েছে। ও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। আমি চন্দ্রকান্তাকে সঙ্গে নিয়ে রাজবাড়ীর বাগানে যাবো। চন্দ্রকান্তার সাহায্যে ওখান থেকে কোন লতা বা ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করে তা পিষ্ট করে উট পাখিটার ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেবো।
পরীরানী বললেন ,তার কোন প্রয়োজন নেই রত্নমালা। আমি এক্ষুনি আমার মায়া-দন্ডের সাহায্যে ওর ক্ষত নিরাময় করে দেবো।
সুমনা বলল, তাহলে দয়া করে তাই করুন হে পরী রানী । ওই পাখিটার যন্ত্রণা কাতর চিৎকার আমি সহ্য করতে পারছি না।
চলবে