ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৬৬)

সুমনা ও জাদু পালক

রাজা রুদ্র মহিপাল এই অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখে আনন্দে প্রায় চিৎকার করে উঠলেন। সুমনা ও চন্দ্রকান্তা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল‌।
অদৃশ্য কন্ঠ রাজা রুদ্র মহিপালের উদ্দেশ্যে বললো,হে রাজন, এমন কিছু হতে পারে আন্দাজ করেই আমি আপনাকে ওই দৈবশক্তি সম্পন্ন তুলসীপত্রটি সঙ্গে আনতে বলেছিলাম।
—- হে সর্বজ্ঞানী অদৃশ্য কন্ঠ, আপনাকে নমস্কার জানাই। জাদুকরের অভিশাপে আমি এখন বিকৃত দেহ এবং শক্তিহীন। তা না হলে আমি এক্ষুনি এই মুহূর্তে এই নয়নমনোহর অপূর্ব ‘হরিহর’ মূর্তি আমাদের বংশের প্রাচীন দেবালয়ে রৌপ্য নির্মিত বেদীর উপরে স্থাপন করতাম।
—— না মহারাজ, সেটা ঠিক হতো না।
——- আপনি এরকম কেন বলছেন হে অদৃশ্য কণ্ঠ?
——- আপনি ভেবে দেখুন, ওই মন্দির ,ওই বেদী আপনার পূর্বপুরুষেরা ভগবান বিষ্ণুর জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। সেখানে কি এই অপূর্ব হরিহর মূর্তি স্থাপন করা উচিত হবে?
—– তাহলে আমার কি করনীয়, হে অদৃশ্য কন্ঠ?
—– এই জলাশয় এর পাড়ে যে স্থানে হরি ও হরের মিলন হয়েছে, সেই পবিত্র স্থানের উপরেই একটি নতুন মন্দির গড়ে তুলবেন আপনি।
—- কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব হবে? আমি এখন রাজ্য হারা, বিকৃত দেহ এক হতভাগ্য মানুষ। আমি কি করে………?
রাজা রুদ্র মহিপাল কে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে
অদৃশ্য কন্ঠ বলে উঠলো, কে বলতে পারে আগামী দিনে দেব হরিহর কি লিখেছেন আপনার ভাগ্যে? আপনি এতদিন পরে আপনার পরিবারের হারিয়ে যাওয়া পবিত্র তুলসীপত্র খুঁজে পেয়েছেন, খুঁজে পেয়েছেন হারিয়ে যাওয়া বিষ্ণু মূর্তি ,আর সেই সঙ্গে পেয়েছেন ভোলা মহেশ্বরের আশীর্বাদ।আপনি দেব হরিহরের চরণে আগে আপনার অসহায় অবস্থার কথা নিবেদন করে আশীর্বাদ প্রার্থনা করুন। দেখুন না কী হয়।
—- বেশ, তাই হোক।
কথা শেষ করে রাজা রুদ্রমহিপাল খুব কষ্ট করে নিজের শরীরকে বাঁকিয়ে ওই অপূর্ব হরিহর মূর্তির চরণে মস্তক ঠেকিয়ে বলে উঠলেন,” জয় প্রভু হরিহর! তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক।”
রাজার কথা শেষ হওয়া মাত্রই হঠাৎ করে আবার ওই হরিহর মূর্তিটির সম্পূর্ণ কলেবর এক অদ্ভুত উজ্জ্বল আলোকে আলোকিত হয়ে উঠল। এত উজ্জ্বল সেই আলোক রাশি , যে সেদিকে যেন তাকিয়ে থাকা যায় না । সুমনা ও চন্দ্রকান্তা আতঙ্কে চোখ বন্ধ করলো। আবার কোন অন্তরাল থেকে শুরু হলো শঙ্খ ধ্বনি ও ঘন্টা ধ্বনি ।
রুদ্র মহিপালের সারা শরীর এক অদ্ভুত অনুভূতিতে শিহরিত হতে শুরু করল।
কিছুক্ষণ পরে থেমে গেল দূরাগত ঘন্টা ধ্বনি ও শঙ্খ ধ্বনি।
সুমনা ও চন্দ্রকান্তা তখনও চোখ খোলেনি।
হঠাৎ তাদের কানে গেল রাজা রুদ্র মহিপাল সোল্লাসে চিৎকার করছেন,” কি আনন্দ !কি আনন্দ! আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছি। জয় প্রভু হরিহর! ধন্য তুমি। ধন্য তোমার করুণা।
রাজার মুখে এই কথা শুনে সুমনা ও চন্দ্রকান্তা
তাড়াতাড়ি চোখ খুলে দেখলো, তাদের সামনে হরিহর মূর্তিকে প্রদক্ষিণ করে, প্রায় উদ্বাহু হয়ে নৃত্য করছেন, রাজ পোশাক পরিহিত সুদর্শন এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি।
বিস্মিত চন্দ্রকান্তা সুমনাকে বলল, কি আশ্চর্য! ইনিই কি আমার পিতৃ বন্ধু, রাজা রুদ্র মহিপাল?
সুমনা ধীর কণ্ঠে জবাব দিল, তাই তো মনে হচ্ছে। অদৃশ্য কন্ঠ বলল, মনে হচ্ছে নয়, ইনিই তিনি। দেব হরিহরের আশীর্বাদে তিনি দুষ্টু জাদুকর হূডুর জাদুর প্রভাব কাটিয়ে স্বাভাবিক দেহে ফিরে এসেছেন। অদৃশ্য কন্ঠের মুখে একথা শুনে রুদ্রমহিপাল তাঁর নৃত্য থামিয়ে ,দাঁড়িয়ে বললেন, আপনি সঠিক কথা বলেছেন হে সর্বজ্ঞানী অদৃশ্য কণ্ঠ। সত্যিই আমি আজ ধন্য। আজ আমাদের কুল দেবতা চতুর্ভুজ বিষ্ণু এবং পঞ্চানন মহাদেবের আশীর্বাদে সমস্ত অভিশাপ কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। এখন চলুন, আমরা সবাই মিলে ওই মহা বটবৃক্ষের কাছে যাই।
—- তাই চলুন হে মহারাজ। সমস্বরে বলে উঠলো সুমনা ও চন্দ্রকান্তা।
রাজা রুদ্রমহিপাল পুনরায় দেব হরিহরের চরণে প্রনতি জানিয়ে এগিয়ে চললেন জলাশয়ের ঈশান কোণে।তাঁকে অনুসরণ করল সুমনা ও চন্দ্রকান্তা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা উপস্থিত হলো সেই বট বৃক্ষের কাছে।
বটবৃক্ষটিন্তধ্যশ্বশশশশ্বশশকে দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল সুমনা ও চন্দ্রকান্তা। জলাশয়ের ঈশান কোণ থেকে শুরু করে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে আছে সেই বটবৃক্ষ। এক দুই নয়, অসংখ্য বিশাল বিশালাকৃতি ন্যগ্রোধের জন্মদাতা মূল বটবৃক্ষের গুড়িটি এতটাই প্রশস্ত যে, নিদেনপক্ষে ৫০ জন লোক হাতে হাত মিলিয়ে বৃত্তাকারে দাঁড়ালে বটগাছটির গুড়ির সমান হবে।
বটগাছটির অসংখ্য ডালপালা ও পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যালোক পুরোপুরি আসতে পারছে না বলে জায়গাটি দিনের বেলাতেও কেমন যেন ছায়াময় হয়ে রয়েছে।
রাজা রুদ্রমহিপাল বটগাছটিকে প্রদক্ষিণ করতে করতে হঠাৎ এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে গেলেন।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।