ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৫৩)
সুমনা ও জাদু পালক
বানররাজ মহাগ্রীব একরকম ছুটে এসে মহারানী তারার কোল থেকে বানর রাজকুমারকে দুহাত বাড়িয়ে কোলে নিলেন। বানর রাজকুমার বাবার দিকে তাকিয়ে আবার হেসে উঠলো।
হাসিতে ভরে গেল বানর রাজার মুখ। তিনি রাজকুমারকে দেবী মায়ের সামনে শুইয়ে দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে প্রণাম জানালেন দেবীর উদ্দেশ্য।
তারপর একইভাবে বানর বংশের আদি পুরুষ চন্দ্রবদনের মূর্তির সামনে মেঝেতে শুইয়ে দিলেন বানর রাজকুমারকে। তারপর চোখ বন্ধ করে হাত জোড় করে বিড়বিড় করে কি যেন বলে প্রার্থনা জানিয়ে মেঝেতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করলেন।
এবারে সন্তানকে কোলে নিয়ে তিনি এলেন রাজকুমারী চন্দ্রকান্তার কাছে। নিজের সন্তানটিকে চন্দ্রকান্তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, আমার সন্তানকে আপনি আশীর্বাদ করুন রাজকুমারী।
—— আমি?
—– হ্যাঁ, আপনার করুণাতেই আমার পুত্র তার চোখের দৃষ্টি ফিরে পেয়েছে আবার।
—— করুণা বলছেন কেন হে বানররাজ, আমি আমার কর্তব্য করেছি মাত্র। আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য বানর রাজকুমারের চোখের ক্ষতি হয়েছিল ।আমি তো সেটাই……..!
—– আপনি আপনার কর্তব্য করেছেন রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা। অথচ আমি এমন মূঢ় যে আপনার সব উদ্দেশ্য কে ভুল বুঝে আমি আপনাকে অবিশ্বাস করেছি, দুর্ব্যবহার করেছি, অনেক কটু কথা বলেছি আপনাকে।
——- হ্যাঁ ,সেটা ঠিকই,তবে তা পুরোটাই পুত্রের জন্য দুশ্চিন্তা আর মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কায়।
—— তবুও আমি আপনার কাছে অপরাধী, আমাকে মার্জনা করুন হে রাজকুমারী।
—— ছি ছি ! এভাবে বলবেন না, আপনি এই বিশাল বৃহল্লাঙুল আসমানী বানর দেশের রাজা। আমি এমন এক হতভাগ্য রাজকুমারী, যার রাজ্য হারিয়ে গেছে, মা বাবা হারিয়ে গেছে। আমাকে এখন রাজকুমারী বলা মানে আমার মনের দুঃখ বাড়িয়ে দেওয়া।
—— আমি বিশ্বাস করি ,আপনি আবার সব ফিরে পাবেন। রাজকুমারী রত্নমালার সহায়তায় আপনি জাদুকর হূডুকে পরাস্ত করে তার জাদুজাল থেকে মুক্ত করতে পারবেন আপনার রাজ্যকে এবং আপনার মা বাবাকে।
—— আপনি এই কথাটা ঠিকই বলেছেন হে রাজন ।ঈশ্বরের আশীর্বাদ আছে বলেই হয়তো আমি রাজকুমারী রত্নমালার দেখা পেয়েছি। রাজকুমারী রত্নমালা দুধরাজকে আমায় দিয়েছিলেন বলেই আমার পক্ষে অত দূর থেকে ওই বিশেষ লতা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছিল।
—– এই ব্যাপারে আমার কোন দ্বিমত নেই রাজকুমারী। রাজকুমারী রত্নমালার কাছে আমি এবং এই সমস্ত বানর রাজ্য কৃতজ্ঞ। ওদের কথার মধ্যেই মহারানী তারা উঠে এসে বললেন, হে রাজন, দয়া করে আমার পুত্রকে আমার কোলে দিন। এতদিন আমার পুত্র ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করতে পারেনি।
আমি আজ নিজের হাতে রাজকুমারের ভোজনের ব্যবস্থা করব।
ওদের কথা শেষ হতেই সুমনা এগিয়ে এসে বলল, মহারাজ মহাগ্রীব, এবার তো আমাকে বেরোতে হবে।
—— হ্যাঁ, রাজকুমারী ।তবে যাত্রা শুরু করার আগে আপনার কাছে আমার একটি আবেদন আছে।
সুমনা বিস্মিত হয়ে বলে, আমার কাছে আবেদন!
—— হ্যাঁ ,বানর রাজ্য থেকে যাত্রা শুরু করার আগে আপনি ও রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা দয়া করে কিছু আহার্য গ্রহণ করুন। আমাদের এই রাজ্যে কয়েকটি অসাধারণ সুমিষ্ট ও স্বাদু ফল আছে। আমার প্রাসাদে কোন অতিথি এলে ওই বিশেষ বিশেষ ফলের সাহায্যে অতিথি সৎকার করি। আপনারা যদি দয়া করে ওই ফল কিঞ্চিৎ গ্রহণ করেন তো কৃতার্থ হই।আর……
——কী?
——- হে রাজকুমারী রত্নমালা ,আপনি আমার পুত্রের সুস্থতার জন্য যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। তাই আমিও আপনাকে সামান্য সাহায্য করতে চাই সেই দুষ্টু জাদুকরের বিরুদ্ধে এই অভিযানে।
——- আপনি আমাকে কি সাহায্য করতে চান হে মহারাজ?
——- আমি আপনাকে একটি বিশেষ অস্ত্র উপহার দিতে চাই।
—–অস্ত্র,কী অস্ত্র?
—– অস্ত্রটি হলো একটি মন্ত্রপূত গদা। ওই মন্ত্রপূত গদার সাহায্যে আপনি শত্রুর নিক্ষিপ্ত যে কোন অস্ত্রের মোকাবিলা করতে পারবেন।
মহারানী তারা বললেন, আমি রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা কে একটি বিশেষ শঙ্খ উপহার দিতে চাই।
—— শঙ্খ? চন্দ্রকান্ত সবিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করল।
——- হ্যাঁ, ওই শঙ্খের ধ্বনি বহুদূর এমনকি মাটির অভ্যন্তরেও পৌঁছাতে পারে। শুধু পৌঁছতেই পারে না, শঙ্খের সুতীব্র আওয়াজে শক্ত পাথর অথবা ধাতব পর্দা ,যেকোনো আবরণ হোক না কেন তা ফেটে চৌচির হয়ে যাবে।
—-বাঃ! আপনাকে ধন্যবাদ জানাই হে মহারানী।
চলবে