• Uncategorized
  • 0

হৈচৈ গল্পে শম্পা সাহা

কুকুর বলে কি মানুষ না? 

কালু, ভুলু, জিমি, রাম্বো সবাই একজোট হয়েছে দিঘির পুকুর পাড়ে। ওদের আজ এখানে একটা মিটিং আছে। আর সেই মিটিং এর নেতা হল বাজার পাড়ার বিল্টু। কি ভাবছ, এরা কারা? এরা নেড়ী।যাদের আমরা হর হামেশাই দেখি। কারো লোম উঠে গেছে, কারো লেজ ঘিয়ে ভাজা, কারো গা আবার ঘায়ে ভরা! তো তারা কেউ নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা রাখে না। তাই নেতা বাজার পাড়ার বিল্টু, কারণ ওর ই মাংসের ছাট্ টাট্ খেয়ে বেশ গত্তি হয়েছে। ‘জোড় যার , মুলুক তার’, এটা শুধু মানব সমাজেই নয়, সারমেয় সমাজে ও সমান সত্যি। তো সে যাই হোক, সুকান্তদের বাড়ির সামনের রকে উঠে বিল্টু বক্তৃতা শুরু করল। তার বক্তব্য শুরুর আগে সকল সারমেয়কুল সমস্বরে একবার ঘেউউউ… করে অভিবাদন জানাল তাদের উঠতি নেতা কে।
বিল্টু উঠেই একেবারে আক্রমনাত্মক মেজাজে শুরু করল–“বন্ধুগন, মানুষের এই অত্যাচার তো আর সহ্য করা যায় না। ওদের বাড়ি পাহারা দেব আমরা, চোর আসলে চেঁচিয়ে জানান দেব আমরা, ওদের বাচ্চাদের টিডন্যাপ্ হলে…. ” “ওটা টিডন্যাপ্ নয় কিডন্যাপ্। ” ভুল শুধরে দিল লালি। কারণ ও, যে বাড়িতে খেতে যায়, সে বাড়ির মেয়ে টেঁপি ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়ে, তার একটা সম্মান আছে না?

বিল্টু গলা খাঁকারি দিয়ে সামলে নেয়, “হ্যাঁ, তো যা বলছিলাম, বাচ্চা কিডন্যাপ হলে ক্লু দেব আমরা ,আর ওরা আমাদের ই দূর দূর করে তাড়াবে? বিনিময়ে আমরা কি চাই? কি চাই? কিচ্ছু না। শুধু এঁটো কাঁটা, পচা, বাসী, তাও পাজী মানুষ গুলো দিতে চায় না! ” সকলে সমস্বরে ঘেউ ঘেউ করে তাদের সমর্থন জানাল। বিল্টু আবার শুরু করল” ওদের বাচ্চাগুলো পর্যন্ত আমাদের কি জ্বালান জ্বালায়! খালি অকারণ ঢিল মারে, কাঠি দিয়ে খোঁচায়, আমাদের অতিষ্ট করে তোলে! “কালিয়া জোড়ে চেঁচিয়ে বলল “একবার কালিপূজোর সময় আমার লেজে কালিপটকা বেঁধে দিয়েছিল। আমার তো হার্ট অ্যাটাক হবার জোগাড়।” রাম্বো সঙ্গে সঙ্গে বলল “আর একবার ঐ বদমাশ টুবাইটা আমার গায়ে স্পিরিট ঢেলে দিয়েছিল। কি জ্বলুনি, কি জ্বলুনি! শেষে ধোপাদের নাদায় ডুবে একটু আরাম পাই”।

” এর একটা প্রতিবিধান হতে হবে”। জোড়ালো গলায় বলে উঠল বিল্টু। “আজ থেকে আমাদের ধর্মঘট, আমরা চোর দেখলেও চেঁচাব না, অন্য পাড়ার কুকুর এ পাড়ায় ঢুকে, এ পাড়ার ছেলেমেয়েদের কামড়ালেও, আমরা তেড়ে যাব না। একেবারে নন্ কো-অপারেশন ।” “হ্যাঁ, হ্যাঁ নন্ কো-অপারেশন, নন্ কো-অপারেশন”। সবাই সমস্বরে সমর্থন জানাল। বিল্টু আরো বলল, ” তাহলে, আজ থেকে আগামী পনের দিন ,আমাদের এই কর্মসূচি জারি থাকবে। ওদের ও বুঝতে হবে, আমাদের মূল্য। আমাদের কি কোন মান সম্মান নেই? “

বিল্টুর এই মতামতের সমর্থন জানিয়ে, দিঘির পুকুর পাড়ের সারমেয়কুল সমস্বরে ঘেউ ঘেউ শব্দে তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচির শুভ সূচনা ঘোষণা করল।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।