রম্যরচনায় শম্পা সাহা

🙏🙏🙏 সেরে ওঠো কলকাতা 🙏🙏🙏

আমি কলকাতা থেকে দূরে, কতটা দূরে? ঠিক যতটা দূরে থাকলে ইচ্ছে করলেই ছোঁয়া যায়না, শ্বাস নেওয়া যায়না বুক ভরে তার সুগন্ধি বাতাস। হাসছো তো? ভাবছো কলকাতার আবার সুগন্ধ! ওই তো ট্যানারি, ডাস্টবিন, গাড়ির ধোঁয়া, তাহলে তুমি বুঝবে না, বুঝবে না আমরা যারা কলকাতা ছেড়ে আছি তারা প্রত্যহ কলকাতা বুকের মধ্যে নিয়ে বাঁচি। যখন ট্রেনটা দমদম ক্রস করে ,বুক ভরে নিই সেই গন্ধ, তোমরা যাকে বলো পলিউটেড, আমি তাকে বলি ফ্রাগরেনটেড। এ পাগলামি তোমরা বুঝবে না, এ ভালবাসা তোমরা বুঝবে না, যারা প্রতিনিয়ত কলকাতায় থাকো থুথু ফেলো,বাঁচো তাদের আমরা কতটা হিংসে করি!
সেই শিয়ালদহ স্টেশনের চায়ের দোকান, রাস্তার পাশের সস্তা বিরিয়ানি, অমৃত !গড়িয়াহাটের রাস্তার দুপাশের দোকানগুলো, না বড় দোকানের দিকে তাকানোর সাহস হয়নি কোনোদিনই, কিন্তু ফুটপাতের দোকান গুলোর পাশ থেকে যাবার সময় কিশোরী বয়সে মনে হত সব কিনে নিই। বা বেলেঘাটার সেই সুভাষ সরোবর বা ভিক্টোরিয়ার সবুজ ঘাস, অথবা ট্রামলাইন ধরে হাত-ধরাধরি হাঁটা, পেছন ফিরে তাকালে স্বর্গ মনে হয়।
কিন্তু যখন শুনি আমার প্রিয় গড়িয়া হাট শুনশান , রাজা বাজারে বা মঙলা হাটে আর শোনা যায় না “দিদি, ও দিদি এদিকে এদিকে” বা “কাকিমা এইটা আপনাকে দারুণ মানাবে”, যখন শুনি নন্দন চত্বরে সেই মাঝ বয়সী কবি আর তার কিশোরী পাঠিকা আর বসে না, কলেজ স্ট্রিট এ হুমড়ি খেয়ে বই চট্ করে একটু পড়ে নেওয়া আর হয় না,ফ্রায়েড মোমোর গন্ধে ম ম করে না নন্দনের সেই রেস্টুরেন্ট টা, সেই দিদির অক্সিডাইজড জুয়েলারীর দোকানের ও ঝাঁপ বন্ধ , মৌলালীর মোড়ে লোকনাথ মন্দিরটা আছে ঠিক ই কিন্তু পথ চলতি পথিকের নেই আর বার বার ঘন্টা বাজানো। এত শব্দ এত গন্ধ এত প্রাণোময়তা কোন এক কালাযাদুর কারসাজিতে চুপ। যে কলকাতাবাসী কথায় কথায় হাসে, রেগে যায়, ঝগড়া করে , ভালবাসে, প্রাণ খুলে আড্ডা দেয়, চলতি বাসে নিমেষে পাশের যাত্রীকে বন্ধু বানিয়ে নাম ঠিকানা মায় ফোন নম্বর টা পর্যন্ত দিয়ে দেয় আজ সে কলকাতাবাসীর মুখে মাস্ক, ঈদ্ পর্যন্ত কোলাকুলি ছাড়া, আগামী বিজয়ার প্রস্তুতি ও এক ই ভাবে। কষ্ট হয়, বুকের ভেতর টা মুচড়ে ওঠে, ভয় হয় যদি ফিরে গেলে চেনা শহর টাকে দেখতে হয় অচেনার মোড়কে।
সেরে ওঠো কলকাতা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, সেরে উঠো তোমার সব পুরোনো রং, রূপ, বর্ণ, গন্ধ নিয়ে। তুমি যেমন , আমি এবং আরো কোটি কোটি কলকাতা প্রেমী তোমাকে সেভাবেই ভালবাসি, সেভাবেই দেখতে চাই। সামনে পূজো, মা আসবেন, তাড়াতাড়ি সেরে ওঠো। আবার আমরা ভিড় জমাবো একডালিয়ায়, ম্যাডক্সে একটু রেস্ট নিয়ে ফের ছুটবো কুমোর টুলি, লেবুতলা হয়ে শ্রীভূমি, সারারাত দু চোখের পাতা এক করবো না, পায়ে ফোস্কা নিয়ে মাঝরাতে ভিড় জমাবো আরসেলান, সিরাজে,চেটেপুটে উপভোগ করবো জীবন। দেখো আকাশে শরতের মেঘের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে, সেরে ওঠো কলকাতা, জীবন কে জীবন বানাতে আমাদের, সেই চেনা তোমাকে যে ভীষণ দরকার।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।