সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব – ১৩)

ক্যামিক্যাল বিভ্রাট
পর পর এ রকম এক-একটা বিচিত্র ঘটনা ঘটার পর তাঁর মনের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল, হিসেব-নিকেশ করে কিচ্ছু হয় না। যা হবার, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা ভুল করেই হয়। তাই বিভিন্ন ফ্লাস্ক, বিকার আর টেস্টটিউবের মধ্যে নানা রকম কেমিক্যাল রেখে দিতেন তিনি। আর যেই তাঁর সঙ্গে কেউ দেখা করতে আসত, কেমিক্যাল সম্বন্ধে যার কোনও বিন্দুমাত্র ধারণা নেই, উনি তাদেরও বলতেন, যাও তো, ও ঘরে গিয়ে তোমার যে রংটা পছন্দ হয়, সেই রঙের তরল অন্য যে কোনও রঙের কেমিক্যালের পাত্রে যে ক’ফোঁটা বা যতটা ঢালতে ইচ্ছে করে, একটু ঢেলে আসো তো…
এটা করতে গিয়ে তাঁর ল্যাবরেটরিতে কম অঘটন ঘটেনি। কখনও দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠেছে। কখনও ঝাঁঝালো গ্যাসে শুধু ওই ঘরটাই নয়, গোটা বাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়েছে তাঁকে। কখনও এমন কটু গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে যে, নাক রাখা দায় হয়ে উঠেছে। তবু, তবু তিনি তাঁর এই খামখেয়ালিপনা বন্ধ করেননি। বন্ধ করার কোনও সম্ভাবনাও দেখা যায়নি।
বাইরের লোককে বললেও ঔপমানব কিন্তু কখনও তাঁর বউ কিংবা তাঁর ছেলেকে এ কথা কোনও দিন বলেননি। আর তাতেই মনে মনে একটু ক্ষুণ্ণ হয়েছিল অভিমন্যু। তাই একদিন তার বাবা যখন টানা তিন দিন তিন রাত ল্যাবরেটরিতে কাজ করে সকালবেলায় পাশের ঘরে এসে শুয়েছেন, শোয়ার আগে বালিশের ঢাকনা চার ভাঁজ করে চোখের উপরে মেলে দিয়েছেন, যাতে দিনের আলো তাঁর ঘুমের কোনও ব্যাঘাত ঘটাতে না-পারে। তখন চুপিচুপি পা টিপে টিপে ল্যাবরেটরিতে ঢুকে সামনের টেবিলে থাকা গোলাপি রঙের তরল ভরা একটা ফ্লাস্কের মধ্যে ও পাশের তাক থেকে একটা টেস্টটিউব তুলে এনে, তার মধ্যে থাকা সবুজ রঙের একটা তরল আলতো করে খানিকটা ঢেলে দিয়েছিল অভিমন্যু। আর সেটা ঢালামাত্রই বুদবুদ করে ফুটতে শুরু করেছিল সেটা। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গুঁড়ো সাবানের ফেনার মতো বগবগ করে উথলে উঠেছিল। ভয় পেয়ে টেবিলের উপরেই টেস্টটিউবটা কোনও রকমে রেখেই ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এসেছিল ও। দেখেছিল, সেই ফেনা ছোট ছোট বলের আকার নিয়ে জানালা দিয়ে বেরিয়ে কেমন ছড়িয়ে পড়ছিল চার দিকে।
ও যেন কিচ্ছু জানে না, এমন ভান করে চুপচাপ পড়ার টেবিলে গিয়ে বই খুলে বসেছিল। কিন্তু পড়বে কী! ও শুধু উসখুশ করছিল আর মনে মনে ভাবছিল, বাবার ঘুম ভাঙার আগেই ওগুলি ফেনা হয়ে সব উবে যাবে তো! বাবা টের পাবে না তো! ভাগ্যিস মা এখন স্কুলে। নইলে যে কী হত! বাবার হাত থেকে রক্ষা পেলেও মায়ের হাত থেকে কি রেহাই পাওয়া যেত! কে জানে!