ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৯২)

সুমনা ও জাদু পালক
হূডুর হাত থেকে জাদু দণ্ডটা কেড়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সুমনা সবুজ পাখির পালকটা সরিয়ে নিতে যাচ্ছিল। অদৃশ্য কন্ঠ সুমনার কানের কাছে চিৎকার করে বলে উঠলো, না না ভুল করেও ওই কাজ করো না রত্নমালা।
—–কেন?
——-ওই দুষ্টু জাদুকরের জাদুদন্ড সম্পূর্ণ বিনষ্ট হওয়ার আগে পর্যন্ত সাবধানে থাকতে হবে।হূডু প্রচন্ড বুদ্ধিমান এবং শয়তান। কোন রকম অন্যায় কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না ও।
——-তাহলে কী করব ?
—–ওই জাদুদন্ড টাকে এক্ষুনি ভেঙে দু টুকরো করতে হবে । আর করতে হবে একবারের চেষ্টায়।ভাঙ্গা টুকরোগুলোকে একটা লাল রঙের কাপড়ে জড়িয়ে তার মধ্যে ওই সবুজ পাখির পালকটা রেখে দেবে। তবে হ্যাঁ ,খুব সাবধান, একবারের চেষ্টাতেই জাদুদন্ড টাকে দু’টুকরো করতে হবে ।একবারের বেশি দুবার চেষ্টা করতে গেলে ওই জাদুদণ্ড দ্বিগুণ শক্তিশালী হয়ে যাবে। আর সেটা যদি কোন ভাবে দুষ্টু জাদুকর একবার হাতে পায় তাহলে সমূহ সর্বনাশ।
—–আমি কী পারব ওই জাদুদণ্ডটাকে দু’টুকরো করতে?
—–না ,তুমি না। মহারাজ রুদ্র মহিপাল খুব বলবান। তিনি পারবেন এক চেষ্টায় ওটাকে দু’ টুকরো করতে। মনে রেখো ,এক চেষ্টায় ওটা যদি দু’ টুকরো করা না যায়, তাহলে ওটা আবার শক্তিশালী হয়ে ফিরে যেতে পারে জাদুকরের হাতে। যদি মহারাজ এক চেষ্টায় ওটাকে দু’টুকরো করতে পারেন, তাহলে দেখবে এখানে একটা ম্যাজিক হবে!
অদৃশ্য কন্ঠ কথাগুলো জোরে জোরে বলছিল যাতে সুমনা এবং রাজা দুজনই শুনতে পায়।
কিন্তু শুধু ওরা দুজন নয়, জাদুকর ও শুনতে পাচ্ছিল সব কথা।
তাই অদৃশ্য কন্ঠের কথা শেষ হতে না হতেই, জাদুকর চিৎকার করে উঠলো, ‘না না না, এটা তোমরা কিছুতেই করতে পারো না। আমি হাতজোড় করি তোমাদের কাছে, আমার জাদু দণ্ড কেড়ে নিয়েছো ঠিক আছে, ওটা বিনষ্ট করোনা! আমার গুরু প্রদত্ত লাঠি ওটা।
অদৃশ্য কন্ঠ এবার ফিসফিস করে সুমনাকে বলল, জাদুকরের কথায় ভুলো না তোমরা। ও চাইছে যাতে ওর লাঠিটা ভাঙা না হয়। যাতে আবার ভবিষ্যতে শয়তানি করতে সুবিধা হয়
ওর। তুমি মহারাজ কে ওটা ভাঙতে বলো এক্ষুনি।
সুমনা রাজা রুদ্র মহিপাল কে ওই জাদু দন্ডটিকে দু’ টুকরো করার জন্য ইশারা করলো।
রাজা রুদ্র মহিপাল লাঠিটা হাতে নিয়ে মাটিতে বসলেন, তারপর ভূমিতে মাথা ঠেকিয়ে জলাশয়ের ওধারে থাকা হরিহরদেবের মূর্তির উদ্দেশ্যে ভক্তি ভরে প্রণাম জানালেন।
এবার রাজা ওই বসা অবস্থাতেই বাম পা সামান্য মুড়ে পায়ের সাহায্যে ভূমি স্পর্শ করে ভূমিতে চেপে বসলেন। এবার দক্ষিণ পা মুড়ে, আস্তে আস্তে সেটাকে উপর দিকে তুলে হাঁটুর সাহায্যে নিজের বক্ষদেশ স্পর্শ করলেন। এবার দুই হাতের সাহায্যে জাদু দণ্ডটাকে আড়াআড়ি ভাবে সোজা করে দক্ষিণ হাটুর সম্মুখভাগে স্পর্শ করালেন।
জাদুকর হূডু কিছু দেখতে পাচ্ছিল না, কিন্তু বোধহয় কিছু অনুভব করতে পারছিল। আর তাই রাজা যেইমাত্র দুই হাতের এবং হাঁটুর সাহায্যে লাঠির উপর চাপ দিয়ে দু টুকরো করার জন্য প্রস্তুত হলেন, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আর্তনাদ করে উঠলো দুষ্টু জাদুকর।
দেব হরিহরকে স্মরণ করে প্রচন্ড শক্তি প্রয়োগ করে রাজা জাদু দন্ডটিকে দু’ টুকরো করে ফেললেন।
জাদুকর জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেল।
সঙ্গে সঙ্গে অদ্ভুত কান্ড ঘটলো। পুষ্পনগর রাজ্যের সমস্ত গাছপালা যেন হেসে উঠলো। গাছে গাছে গজিয়ে উঠল সবুজ পাতা । রংবেরঙের ফুলে ভরে গেল গাছ। হাজার হাজার পাখি গাছের ডালে বসে গান গাইতে শুরু করল। জাদুর প্রভাবে রাজ্যের রুক্ষ শুষ্ক কঙ্করময় ভূমি কিছুক্ষণের মধ্যেই সবুজ তৃণ আর বিচিত্র বর্ণের ফুলে মনোরম হয়ে উঠলো।
সারা রাজ্য জুড়ে যেন জেগে উঠলো হাজার হাজার মানুষ। যেন জেগে উঠল ঘুমন্ত রাজপ্রাসাদ। রাজার সৈন্য এবং রাজ-কর্মচারীরা, যারা পুতুলেপরিণত হয়েছিল, সবাই ফিরে পেল পূর্ব রূপ।
চলবে