ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ২৭)

সুমনা ও জাদু পালক

অদৃশ্য কন্ঠ বলল, সুমনা,হলুদ পরীর পালককে ডেকে এনে খুব ভালো কাজ করেছ তুমি।ও না এলে আমি তোমাদের রক্ষা করতে পারতাম না।
—-কেন?
——এই হলুদ দৈত্যের দেশের উপর দিয়ে কেউ উড়ে গেলে ওরা তাকে আকর্ষণ করে নিচে নামায়।আর সেই সময়ে ওরা হলুদ রঙের আলো ছড়িয়ে শিকারকে দুর্বল করে দেয়। তারপর বন্দি করে শিকারকে নিয়ে যায় রাজার কাছে।
—-কেন?
——এ দেশের রাজার নাম ডীম্যান।খুব সাহসী ও
শক্তিশালী সে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত কোন সন্তান না হওয়াতে খুব দুঃখ ছিল তার মনে। শেষে রাজপুরোহিত বিশাল এক যজ্ঞ করার পর রাজা ডীম্যানের একটি পুত্র সন্তান হয়। তার বয়স এখন মাত্র তিন বছর। কিন্তু গত এক বছর যাবত খুব অসুস্থ সে। দিন রাত শুধু কেঁদে চলে সে। কিছু খায়না ,ঘুমায় না, শুধু কাঁদে। অনেক চেষ্টা করেও রাজবৈদ্য সুস্থ করতে পারেনি তাকে।শেষে রাজগুরু বিধান দিয়েছেন ,অজানা দেশের অচেনা মানুষের রক্তে দৈত্য রাজপুত্রকে স্নান করালে ভালো হবে সে।তাই দৈত্য রাজ্যের উপর দিয়ে কেউ গেলে তাকে আকর্ষণ করে নিচে নামায়। তারপর তার রক্ত দিয়ে স্নান করায় রাজকুমার কে।
——- কি সাংঘাতিক!
—– কিন্তু বারবার এমন করেও আজো সুস্থ হয়নি দৈত্য রাজকুমার। তাই আমাদেরকে আকর্ষণ করে নিচে নামাচ্ছে ওরা।
সুমনা ভয় পেয়ে জিজ্ঞাসা করল, আমাদেরকে ও কি ও‌রা…….?
—- ভয় পেও না, আমি আছি তো। তুমি ভালো করে ধরে থাকো দুধরাজকে।

কেউ যেন তীব্র আকর্ষণ করে টেনে নিচে নামাচ্ছিল দুধরাজকে। অদৃশ্য কন্ঠ বলল, সাবধান দুধরাজ ,সামলাও নিজেকে। অত জোরে নিচে নামলে হঠাৎ করে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যেতে পারো। আর তুমি পড়ে গেলে সুমনাও তাল সামলাতে পারবে না,ও পড়ে যাবে।
অদৃশ্য কন্ঠের কথা শুনে দুধরাজ এবার তার দুটো ডানাকে ক্রমশ বিস্তৃত করে বিশাল বড় করে ফেলল।তারপর আকর্ষণ শক্তিকে পরাজিত করে ধীরে ধীরে নিচে নেমে দাঁড়ালো দুধরাজ।
আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দুর্বোধ্য ভাষায় চিৎকার করতে করতে বিশাল বিশাল তীর ধনুক হাতে একদল লোক এসে দাঁড়ালো সামনে।

সুমনা অবাক হয়ে দেখল ,লোক গুলো খুব খুব লম্বা ।সাধারণ মানুষের প্রায় দেড় গুণ বা তারও বেশি। লোকগুলোর গায়ের রঙ গাঢ় হলুদ। ওদের হাতের তীর- ধনুক এর রং ও হলুদ। লোক গুলো তীর ছুঁড়ছিল। হলুদ রঙের লম্বা লম্বা তীর। আর কী আশ্চর্য! ওই তীরগুলো হলুদ পরীর পালকের ঢাল ভেদ করে এগোতে পারছিল না! উপরন্তু তীরগুলো হলুদ পরীর পালকের গায়ে লাগার সঙ্গে সঙ্গে বড় বড় হলুদ ফুল হয়ে ঝরে পড়ছিল মাটিতে। এভাবে কিছুক্ষন চলার পর একসময় ওদের সমস্ত তীর শেষ হয়ে গেল।ওরা কেমন যেন ঘাবড়ে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
তখন অদৃশ্য কন্ঠে বলল, কি হলো দৈত্য রাজ্যের সৈনিকেরা ,তোমরা হেরে গেলে?
ওরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
অদৃশ্য কণ্ঠ বলল, ভয় নেই তোমাদের, দৈত্যরাজ কোন শাস্তি দেবেন না তোমাদের। রাজকুমারী রত্নমালা ঘোড়ায় চেপে তোমাদের সঙ্গে দৈত্য রাজের কাছে যাবে।
ওদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা দৈত্য সৈনিকটা হাতজোড় করে বলল,আমি দৈত্য সেনাপতি,আসুন আমার সঙ্গে। আমি আপনাদের নিয়ে যাব দৈত্যরাজের কাছে। তারপর তিনি যা বলবেন তাই হবে।

হলুদ পরীর পালক বলল,সুমনা,এবারে ফিরে যাচ্ছি আমি।
সুমনা বলল, আচ্ছা, আমাদের সাহায্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই তোমাকে। ভালো থেকো তুমি।
—– তুমিও ভালো থেকো সুমনা।
কথা শেষ করে হলুদ পরীর পালক আবার আগের মত ছোট হয়ে উড়তে উড়তে মিলিয়ে গেলো আকাশে।
সুমনা বুঝতে পারছিল না যে রাজকুমারী রত্নমালা কে? সে তো নেই যাদের সঙ্গে। তাহলে অদৃশ্য কন্ঠ ওরকম বলল কেন?
অদৃশ্য কন্ঠ বলল, দুধরাজ, দৈত্য সেনাপতির পিছু পিছু এগিয়ে চলো।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।