ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৬৮)

সুমনা ও জাদু পালক

সুমনা দেখল, গাছের কান্ডের যে অংশটা লম্বালম্বি চিরে গেছে, ঠিক তার নিচের অংশের ভিতর দিকে একটা বিশাল গর্ত মতো দেখা যাচ্ছে। রাজা রুদ্র মহিপাল সেই দিকে এগিয়ে চলেছেন দৃঢ় পদক্ষেপে। ঠিক গর্তটার কাছাকাছি গিয়ে সুমনা দেখতে পেলো, গর্তের মুখ থেকে সিঁড়ি নেমে গেছে নিচের দিকে। সিঁড়ির প্রথম ধাপে দাঁড়িয়ে রুদ্রমহিপাল বললেন, এসো সুমনা, এসো চন্দ্রকান্তা, আমরা এখন সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামব।
সিঁড়িগুলো একটু অন্ধকারে ডুবে থাকলেও ভয়ের কিছু নেই।
চন্দ্রকান্তা বলল, একটু আগেই যে বিশাল সরীসৃপটিকে আপনি পরাস্ত করলেন, ঠিক ঐরকম যদি কেউ লুকিয়ে থাকে এখানে?
—- সেই সম্ভাবনা একেবারেই নেই। কারণ এই গুপ্ত পথের দুই প্রান্ত খুব সুরক্ষিত। তোমরা তো একটু আগে দেখলে যে, এই গুপ্তপথে প্রবেশাধিকার পাওয়ার জন্য আমাকে কত লড়াই করতে হল। ওখানে প্রহরারত ছিল দুটি প্রাচীন পক্ষী দম্পতি। ওরা অনুমতি না দিলে আমি তো ওই প্রাচীন ন্যগ্রোধের অভ্যন্তরে লুকানো পথে প্রবেশাধিকার পেতাম না। এ প্রান্তে যেমন মহা বটবৃক্ষ গুপ্ত পথকে সুরক্ষিত করেছে, ঠিক তেমনি এই পথের শেষ প্রান্ত যেখানে শেষ হয়েছে ,অর্থাৎ রাজবাড়ীর রন্ধনশালার পিছনে একটি বিশেষ ঘরে, সেখানেও সুরক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা আছে। শুধু একটাই সমস্যা আছে চন্দ্রকান্তা।
—– কী সমস্যা?
——— সুমনাকে রাজপুরীতে পৌঁছে দিয়ে আমাকে তো আবার ফিরে আসতে হবে এই পথেই। সুমনা যতক্ষণ অদৃশ্য হয়ে পুরো রাজপ্রাসাদটা দেখবে, ততক্ষণ তোমাকে আমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
—– কোথায়?
——- এই রাস্তাটা কিছুটা যাওয়ার পরে সামনে এক জায়গায় গিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। ঠিক সেখানে একটা প্রশস্ত জায়গা আছে। যেখানে গবাক্ষ পথে বাইরের আলো প্রবেশ করিয়ে এই সুড়ঙ্গ পথকে আলোকিত করার জন্য এক বিশেষ ব্যবস্থা আছে।
—- রাস্তা দুভাগে বিভক্ত হয়েছে কেন?
—–একটা রাস্তা গেছে রাজপুরীর রন্ধন শালার পিছনে, অন্য রাস্তাটা অনেক দূর পর্যন্ত যাওয়ার পরে এই রাজ্যের শেষ প্রান্তে একটি নদীর ঘাটে গিয়ে শেষ হয়েছে।
—— নদীর ঘাটে কেন ?
—— রাজ্যে বহিঃশত্রুর আক্রমণ হলে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, রাজপুরীর মহিলা এবং শিশুরা যাতে ওই গুপ্ত পথে পালিয়ে দূরে কোথাও নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারে, মনে হয় সেই কারণে।

সুমনা জিজ্ঞাসা করল, মনে হয় বলছেন কেন, আপনি কি সঠিক কারণ জানেন না রাজন?
—- মনে হয় বলছি তার কারণ , সবটাই আমি আমার পিতামহীর মুখে শুনেছি। একটি বিশেষ কারণে আমার পিতামহের আমলে রাস্তাটির শেষ প্রান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
রাজা রুদ্র মহিপালের কথা শেষ হতে না হতে অদৃশ্য কন্ঠ বলল,” আপনি অনুমতি দিলে আমি একটা কথা বলতে পারি।”
—— হে অদৃশ্য কন্ঠ ,আপনি এখানেও উপস্থিত আছেন?
—— আমি তো আগেই আপনাকে বলেছিলাম যে, রাজকুমারী রত্নমালার সঙ্গে আমাকে থাকতেই হবে।
—-হুম। আপনি আমাকে কি বলতে চান?
—– আপনি বলছিলেন যে, রাজকুমারী রত্ন মালাকে রাজপুরীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার পর আপনি এই পথে আবার ফিরে যাবেন।
—– হ্যাঁ , আমি অনেকক্ষণ আগে রাজপুরী থেকে বেরিয়ে রাজ উদ্যানে এসেছিলাম হূডুর উটপাখির আহার্য সংগ্রহের জন্য। সেগুলো বাগানে রাখা আছে। আমি যদি ওগুলো নিয়ে রাজপুরীর সদর দরজা দিয়ে ফিরে যেতে না পারি, তাহলে হূডু সন্দেহ করবে। আমি রাজপুরীতে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে , যেকোনো অজুহাতে বেরিয়ে আসব। তারপর আবার এই সুড়ঙ্গ পথে ফিরে , সুমনা ও চন্দ্রকান্তা কে নিয়ে বেরিয়ে আসবো জলাশয়ের পাড়ে হরিহরদেবের মূর্তির কাছে। সেখানে এসে পরবর্তী কর্ম পদ্ধতি ঠিক করা যাবে।
—- আপনি যথার্থই ভেবেছেন হে রাজন, কিন্তু সম্ভবত একটি বিষয় বিস্মৃত হয়েছেন।
—-কী?
—– আপনার রূপ পরিবর্তন হয়েছে। আপনি যে রূপে রাজপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন, সে রূপে আপনি এখন নেই। এই রূপে আপনি কি রাজপুরীর সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন?
—- না, কখনোই না। এখন তাহলে উপায় কী?
—- একটু ভেবে দেখি।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।