ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৫৬)

সুমনা ও জাদু পালক
প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল সুমনা ও রাজকুমারী চন্দ্রকান্তার। ওদের চোখ জ্বালা করছিল। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল ওদের। বিষাক্ত ধোঁয়ার প্রভাবে দুধরাজ ও ছটফট করছিল। সুমনা বুঝতে পারছিল না যে, এই অবস্থায় কি করবে ও । চন্দ্রকান্তা ও বিভ্রান্ত।
সুমনা ক্ষীন কন্ঠে বলল, বন্ধু অদৃশ্য কন্ঠ, কোথায় গেলে তুমি? এখন কি করবো আমরা,পরামর্শ দাও।
বেশ কয়েকবার সাহায্য প্রার্থনা করার পরেও বন্ধু অদৃশ্য কন্ঠের তরফ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে সুমনা চিন্তিত হয়ে পড়ল। তবে কি তাদের অভিযান ব্যর্থ হবে? ঘুমন্ত রাজপুরীর সেই মিষ্টি রাজকুমার কে কি জাগিয়ে তোলা যাবে না? ঘুমন্ত রাজপুরীকে কি জাদুকর হূডুর অভিশাপ থেকে মুক্ত করা যাবে না?
ভাবছিল চন্দ্রকান্তাও। ব্যাপারটা কি হলো? রাজকুমারী রত্নমালা এভাবে থমকে দাঁড়িয়ে গেল কেন? তাহলে কি সে কোনদিন তার বাবা ও মাকে আর ফিরে পাবে না? আবার আগের রূপে ফিরিয়ে দিতে পারবে না তার বাবার স্বপ্নের রাজ্য ‘সবুজের দেশ’কে? ‘ সবুজের দেশে’র প্রজাদের কি জাদুকর হুডুর অফিসার থেকে মুক্ত করতে পারবে না?
সুমনা এবার শরীরের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে আর্তনাদ করে উঠলো, বন্ধু অদৃশ্য কন্ঠ ,তুমি কোথায়?
অদৃশ্য কন্ঠ সুমনার কানের কাছে এসে চুপি চুপি বলল, তুমি কি ঘাবড়ে গেছ?
—– কোথায় গেছিলে তুমি?
—— আমি একটু হূডুর প্রাসাদটা আগেভাগে দেখে এলাম।
——- কিন্তু কি করে? আমরা তো এগোতে গিয়ে নীল ধোঁয়াতে আটকে গেলাম। এমন কি দুধরাজ ও অসুস্থ হয়ে গেল। ওই দেখো, এখনো সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়নি ও।
——- ওর জন্য চিন্তা করোনা, একটু পরেই সুস্থ হয়ে যাবে ও। তবে একটা জিনিস শুনে খুব অবাক লাগছে আমার।
—-কী?
—- এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাকে ডাকতে হলে তোমাকে? একটু চিন্তা করলেই তো এর সমাধান পেয়ে যেতে তুমি।
—– মানে?
——- একটু ভেবে দেখো তো, সেই দুধ নদীর পাড়ে এমন কি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল, যা পরবর্তীকালে তোমার কাজে লেগেছিল?
সুমনা একটু সময় ভেবে বলল, তুমি কি সেই সাত রঙের সাত পরীর সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা বলতে চাইছো?
—– অনেকটা ঠিক ভেবেছো। ভাবতো, তারা কি দিয়েছিল তোমাকে আর সেগুলো পরবর্তীকালে কি কি কাজে লেগেছে তোমার?
—— বুঝতে পেরেছি কি বলতে চাইছো তুমি।
—– বলতো শুনি।
—— সাত পরী সাত রঙের সাতটা পালক দিয়েছিল আমাকে।
—হুম।
—— তার মধ্যে পাঁচ রঙের পাঁচটি পালক লাল,কমলা, হলুদ,সবুজ,আসমানী বিভিন্ন বিপদে সাহায্য করেছে আমাকে। বাকি আছে নীল আর বেগুনী রঙের পালক।
—— একদম ঠিক কথা বলেছ।
—— তাহলে নীল ধোঁয়ার মোকাবিলা করতে কি নীল পরীর পালকের সাহায্য নিতে হবে আমাকে?
—— ঠিক ঠিক ঠিক।
সুমনা সঙ্গে সঙ্গে মনে মনে স্মরণ করলো নীলপরীর পালককে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজির হলো সে।
সুমনা বলল, হে নীল পরীর পালক, আমি তোমার সাহায্য প্রার্থী।
—– কি করতে হবে বলো?
—— জাদুকর হূডু নীল ধোঁয়ার প্রাচীর তৈরি করে বাধা সৃষ্টি করেছে আমাদের পথে। ওই ধোঁয়ার প্রাচীর ভেদ করে যেতে গিয়ে দুধরাজ
অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অসুস্থ হয়েছি আমি এবং আমার সঙ্গী রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা।
—— কোন চিন্তা নেই রাজকুমারী রত্ন মালা। আমি এক্ষুনি সুস্থ করে দেবো সবাইকে। তারপর নীল ধোঁয়ার প্রাচীর ভেদ করে তোমাদের যাওয়ার রাস্তা তৈরি করে দেবো।
কথা শেষ করেই নীল পরীর পালক ওর শরীর থেকে এক উজ্জ্বল আলোকরশ্মি বের করে তা চারিদিকে ছড়িয়ে একটা গোল আলোর বলয় তৈরি করল। সেই বলয়টা একে একে সুমনা চন্দ্রকান্তা ও দুধরাজের শরীর স্পর্শ করল। মুহূর্তের মধ্যে ওরা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলো।
সুমনা বলল, ধন্যবাদ হে নীল পরীর পালক। তোমার কৃপায় আমরা সবাই সুস্থ হয়ে গেছি।
—— একদম এসব বলবেনা। তুমি অশুভ শক্তি হূডুকে পরাজিত করে পরী রাজ্যের রানীকে উদ্ধার করতে চলেছ। তোমাকে সাহায্য করা আমরা আমাদের মহান কর্তব্য বলে মনে করি।
চলো, এবারে ওই নীল ধোঁয়ার মোকাবিলা করা যাক।
নব উদ্যমে সুমনা ও চন্দ্রকান্তা কে পিঠে বসিয়ে দুধরাজ আবার উড়তে শুরু করল। সামনে ভাসতে ভাসতে চলেছে সেই নীল পরীর পালক।
ধোঁয়ার প্রাচীরের কাছাকাছি আসতেই সেই নীলপরীর পালক হঠাৎ বিশাল বড় হয়ে গেল। তারপর ঝাঁটা দিয়ে আবর্জনা সরানোর মতো
করে নীল ধোঁয়া সরিয়ে মাঝখানে একটা চওড়া রাস্তার মতো পথ তৈরি করে দিল। সুমনা ও চন্দ্রকান্তা কে পিঠে বসিয়ে সেই পথ ধরে এগিয়ে চলল দুধরাজ। সামনে নীল পরীর পালক।
(চলবে)