ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৩৫)

সুমনা ও জাদু পালক

সবুজ পাখির দ্বীপের রাজা বলল, হে অদৃশ্য কণ্ঠ, দয়া করে আমাদের বলুন ,কী প্রস্তুতি নিতে হবে আমাদের? তবে দয়া করে স্মরণে রাখবেন যে,আজকেই সেই ভয়ঙ্কর দশম দিন।
—— সেই ভয়ঙ্কর নাগ কোত্থেকে আসে বা কোথায় তার বাসস্থান তা কি আপনারা জানেন?
—– ওই ভয়ঙ্কর নাগের বাসস্থান সঠিক না জানলেও অনুমান করতে পারি।
— কোথায়?
—— আমাদের এই সবুজ পাখি পাহাড়ের নিচে আছে এক গভীর খাত। অত্যন্ত গভীর সেই খাত। পাহাড়ের উপর থেকে সেই খাতের তলদেশ নজরে আসে না। সেই খাতের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে এক নদী। প্রবল বেগে বহুদূর প্রবাহিত হওয়ার পর সেই নদী নেমে গেছে সমতল ভূমিতে। নদীর দু’পাশে দুর্ভেদ্য ঘন জঙ্গল। সেখানে কোনমতেই সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না। ওই পুরো জঙ্গল টাই নাগেদের আস্তানা। আমার ধারণা ওই ভয়ঙ্কর তিন মাথাওয়ালা নাগ ওই জঙ্গলে বাস করে।
ওই ভয়ঙ্কর নাগ রাত্রির দ্বিতীয় প্রহরের পরে আক্রমণ করে।
——- গুহার মাথা ছাড়িয়ে যে বৃক্ষটি উপরে উঠে গেছে , ওই গাছ বেয়েই কী নেমে আসে সেই ভয়ঙ্কর নাগ?
——- এই ব্যাপারে একটা অদ্ভুত নিয়ম মেনে চলে সে।
——কিরকম?
——— কোন বছর যদি সে গুহার মাথার গাছ বেয়ে নেমে আসে তো পরের বছর আসে গুহার মুখে ঢোকার পথ দিয়ে।
—–বুঝলাম। এবারে কি গুহার মুখের প্রবেশ পথ দিয়ে ঢোকার কথা?
—– হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কি করে জানলেন?
——- গাছের ডালে পক্ষী রানি বাসা বাধায় অনুমান করলাম। যাক সে কথা।

হে সবুজ পাখির দ্বীপের রাজা, এবারে আমি যা বলব তা খুব মন দিয়ে শুনুন। সেনাপতি ঈগল আপনিও শুনুন। এখনো সন্ধ্যা হতে অনেক দেরি আছে। সেনাপতি ঈগল, আপনি আপনার পুরো বাহিনী নিয়ে প্রচুর পরিমাণে শুকনো ডাল পালা জোগাড় করার ব্যবস্থা করুন। তারপর গুহার মাথার বৃক্ষটির চতুর্দিকে বৃত্তাকারে শুকনো ডালপালা সাজিয়ে দিন। আপনাদের এখানে কি আগুনের কোন ব্যবস্থা আছে সেনাপতি ঈগল?

অদৃশ্য কন্ঠ থামতেই সেনাপতি ঈগল জবাব দিল, আপনি নিশ্চয়ই জানেন হে অদৃশ্য কণ্ঠ ,পক্ষী সমাজে আগুনের ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিন্তু আমাদের এই সবুজ পাখির দ্বীপ রাজ্যে একজন প্রাজ্ঞ চিকিৎসক আছেন।তিনি চিকিৎসার প্রয়োজনে আগুন ব্যবহার করেন।তাঁর নাম ‘মহাশ্যেন’।
—— বেশ তাহলে তাকে খবর দেওয়া হোক। তিনি যেন সন্ধ্যার পূর্বেই আগুন নিয়ে গুহার মাথায় উপস্থিত হন। রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর হওয়ার আগেই গাছের চারিদিকে বৃত্তাকার এ সঞ্চিত শুকনো ডালপলায় তিনি অগ্নিসংযোগ করবেন। আরো একটা অনুরোধ আছে সেনাপতি ঈগল।
—– হ্যাঁ ,বলুন।
—— আজ সারারাত আপনার দলের সমস্ত পক্ষী সৈন্যদের জেগে থাকতে হবে। ওরা গাছের ডালের চেপে নজর রাখবে গুহায় ঢোকার প্রবেশ পথের দিকে। পক্ষী পাহাড়ের মাথায় বৃক্ষের চতুর্দিকে আগুন জ্বালালে নাগ বাধ্য হবে গুহার সামনের মুখ দিয়ে প্রবেশ করতে। নাগকে গুহার মুখে আসতে দেখলেই আপনার পক্ষী সেনারা একসঙ্গে চিৎকার করে উঠবে। গুহার ভিতর সবুজ পাখির দ্বীপের রাজা আর রাজকুমারী রত্নমালা ছাড়া আর কেউ থাকবে না। হে পক্ষীরাজ, আপনার কাছে আরও একটি বিষয় অনুমতি চাই ।
—–কী?
—-রাজকুমারী রত্নমালার বাহন দুধরাজ অশ্বটিকে গুহার অভ্যন্তরে আনার অনুমতি দিতে হবে । এটা একান্ত প্রয়োজনীয় ।
সবুজ পাখির দ্বীপের রাজা বলল, হে অদৃশ্য কণ্ঠ, আসন্ন বিপদের হাত থেকে থেকে আমাদের রক্ষা করার জন্য আপনি যা প্রয়োজন মনে করেন, সেই ব্যবস্থাই গ্রহণ করুন । এই বিষয়ে আমার পূর্ণ সমর্থন থাকলো ।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।