গ এ গদ্যে সঞ্জীব সেন

এক দেহে অঙ্গাঙ্গী

“যে কালী সেই কৃষ্ণ”, কথাটা শোনার পর ধন্দ জাগল এতদিন যা শুনেছি সব কি ভুল!, বৈষ্ণব আর শাক্ত তেল আর জলের মত । মিশ খায় না । বৈষ্ণবরা শাক্তদের কোনদিন মেনে নিতে পারিনি । মদ মাংস যৌনাচারে লিপ্ত এই তন্ত্রচার। যাকে বলে অজাচার । তার পর মনে এল তেল জল যদি মিশে যেতে পারে তাহলে রাজ্যে দুটো বিপরীতমুখি দল যদি মিলে যায় মেনে নিতে দোষ কোথায় ! কিম্বা সব দল মিলে একটাই দল হয় যার পতাকা হবে কাল রঙের তাহলেই বা অবাক হওয়ার কি কিছু আছে ! কাল রঙের জন্য কি এই অভেদ ? এর যোগসূত্র কোথায় ! বৃন্দাবনে যে কালিপুজো হয় জানতাম না । বৈষ্ণবদের আখড়া এই ভুমি এই খানে শক্তিপুজো । আমার এই প্রশ্নের সব উত্তর পেয়ে যাবো সমাজপতিবাবুর কাছে এমনটাই বলেছিল এক সদ্য আলাপ হওয়া ব্যক্তি । মাঘ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে রটন্তী কালিপুজো হয় সেই মূর্তি হল কালি কৃষ্ণের মিলন মুর্তি। এখানে মূর্তি চতুর্ভূজ চূড়ামুকুট মুন্ডিত ।দক্ষিণহস্তে শঙ্খ আর খর্পর ধারিণী। বামহস্তে খড়ক ও চক্রধারিনী । নবযৌবনাসম্পনা । মুণ্ডমালা বিভূষিতা । গোপিনীদের দ্বারা অর্চিতা। আমার চোখ জুড়িয়ে গেল রঙ্গনাথ মন্দিরে মূর্তি দর্শন করে । তবে এর পেছনে একটি কাহিনী আছে । বৃন্দাবন একটা শক্তিপীঠ এখানে দেবীর আংটি পড়ে ছিল। এখানে দেবী হল কাত্যায়নি । ভগবতপুরানে আছে ব্রজের গোপিনিরা কৃষ্ণকে পতিরুপে পাওয়ার জন্য কাত্যায়নী পুজো করেছিল । আমার তখন মনে হল কি ছিল ছেলেটার ভিতর সবাই ওকেই পতি হিসাবে পেতে চায় । তবে পতিকে যেমন ঈশ্বররুপে পূজা করে আর পরপুরুষকেও তাই পতি রুপে পুজো করে তাহলে কি ঈশ্বর খুব খুশি হন !দেবী উমাকে এখানে যোগমায়া রুপে পালন করা হয় । বিবেকানন্দ বলেছেন কাম থেকে মুক্ত হয়ে সত্যিকারের আনন্দ পেতে ঈশ্বরের পুজো করা উচিত ।গোপীগন এই আনন্দের স্বাধ পেতেই কাত্যায়নী পুজো করেছিল । সব কথা শুনছি রঘুনাথ মন্দিরের এক পূজারীর কাছ থেকে । পুজারী বলল তবে শোন রাধা কৃষ্ণ প্রেমে বিভোর । রাধার স্বামী আয়ন ঘোষ তন্ত্রের পুজারী । জটিলা কুটিলা তাকে বলল দেখ রাধা কৃষ্ণের সাথে বিহার করছে । আয়ন ঘোষ নিচের চোখে দেখতে আসে । আর এ কথা রাধা বুঝতে পেরে কৃষ্ণকে যখন বলল তখন কৃষ্ণ বলল চিন্তা করোনা, তুমি চোখ বুজে আমায় জড়িয়ে ধর । আয়ন ঘোষ এসে দেখল কৃষ্ণ কোথায় সে তো কালিকে জড়িয়ে আছে । কৃষ্ণকালীর এই মিশিত মুর্তি রটন্তী কালি হিসাবে বৃন্দাবনে পুজিত হয়। বলল তোমাদের কাটোয়াতেও এই পুজো হয় । কালীকৃষ্ণ যে অভেদ তার সমন্ধে গৌড় দাস কি বলেছে জানো ।ইষ্টই কালি ইষ্টই গৌর জানবি। তাহলে নিজের ইষ্ট ছেড়ে গৌরভজতে বলেছি!দ্বেষবুদ্ধিটি ত্যাগ করবি। তোর ইষ্ঠই যে গৌর হয়েছেন ।এই জ্ঞানটা মনের ভিতর রাখবি । দেখ গেরস্থের বৌ শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে শ্বাশুরী ননদ দেবর সবাইকে নিয়ে সংসার করে সবাইকে ভক্তি শ্রদ্ধা করে আর শোয়াটি কিন্তু স্বামীর সঙ্গে করে. সে জানে স্বামীর জন্য এরা সব আপনার ।তাই ঈষ্টকে যখন পতি রুপে মানবি তখন ইষ্টর সব রুপ কেও মানবি ।গৌর দাস বলত কালী আর গৌরাঙ্গ এক বোধ হলেই বুঝবি সঠিক জ্ঞান হলো । আবার বলেছেন যদি কারুর মন অন্যের প্রতি আসক্ত থাকার কারনে অচঞ্চল থাকে তখন সেই ভালবাসার পাত্রকে ঈশ্বর রপে ভাবলে মন শান্ত হয় ।.তিনি বলেছেন একজন গৃহি তার অল্পবয়স্ক দেওয়ের প্রতি আসক্ত হওয়ায় গৌর দাস বলেছে তোমার ভালবাসার মানুষটিকে বালগোপাল রুপে ভাবতে তাহলে ভগবানে মন যায় । তখন আমার পাড়ার পচাদার কথা মনে এল তাকে এক পাড়াতুতো বৌদি ঘরে ডেকে নিত বর না থাকলে ।। আমরা বেড়ার ফাঁক দিয়ে ওদের রাসলিলা দেখেছি । কে কাকে ঈশ্বর রুপে পুজো করছে বুঝতে পারিনি । তাই আসার সময় পচাদার সাইকেলে হাওয়া খুলে দিয়ে এসেছি । এই কাজটা হয়ত কৃষ্ণ অথবা কালীঠাকুর করিয়েছেন ।তাহলে অভেদ বলে কিছুই কী নেই! আর রাজনীতির ক্ষেত্রে কতটা প্রাসঙ্গিক ! যদি সব দল মিলে একটাই দল হত । যার সিম্বল হত কাল রং ! তা তো হয়নি । তাহলে তো এত খুনখারাবি হত না ।পাশ থেকে ঘোষ না সিনহা কে যেন বলল খামোশ, বত্তমিশ , যত বকোওয়াশ, , তবে তখত- ঈ-শরিফ কুর্সিতে কে বসবে তাই নিয়ে কোন্দল হবে আগে । তাছাড়া বেদবাক্যের সঙ্গে রাজনিতীর কোন যোগ নাই । ।আমি বললাম তবে যে এই কৃষ্ণঠাকুরকে সব মন্দিরে দেখি বাঁশি হাতে রাধার সঙ্গে তিনি কি শুধুই প্রেমের ঠাকুর ! তাহলে হাতে রেড বুক নিয়ে কি প্লান করে অর্জুনকে বুঝিয়ে ছেড়েছে যে নিজের লোক যখন শত্রু হয়ে ওঠে কিভাবে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয় । আবার দেখুন কামাখ্যা দেবীকে যখন নরকাসুর প্রপোজ করে তখন দেবী বলে সে ভেবে দেখতে পারে যদি এক রাতের মধ্যে এখান থেকে গোদাবরী পর্যন্ত সুড়ঙ্গ করে ফেলতে পারো । যখন দেখল কাজ ভোরের আগেই শেষ করে ফেলবে তখন কামাক্ষাদেবী মুরগির ডাক দিয়ে বুঝিয়েছে ভোর হয়ে গেছে টাইম আপ । এটা কী রাজনৈতীক চক্রান্ত নয় । আসলে জগতে সত্য বলে সত্যি কিছু নেই । ব্রহ্মই সত্য ।তাই যে দুধ আর জল আলাদা করতে পারে সেই তো ভাবতে পারে আমরা তো শুধুই রিপুর দাস ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।