T3 নববর্ষ সংখ্যায় শর্মিষ্ঠা সেন

নাথিং ইজ় অ্যাপলিটিক্যাল
রাত পোহালে নীল পুজো, পরের দিন চড়ক তারপর পহেলা বৈশাখ, বাঙালীর উৎসব মুখর বছরের সূচনা। যদি ভেবে থাকেন এবছর উৎসব হবেনা, ধর্না-অনশন-আন্দোলনের আবহে এবছর উৎসব দোড়গোড়া থেকে ফিরে যাবে তাহলে আপনি ভুল। ২৫৭৫০ নয়, ভাবুন ১০.৫৬ কোটির নিরিখে।
আপনার অ্যাকাউন্ট মাস পয়লায় ভারী হবেনা তো আমার কি? সেই কোন ছোট কালে আমার দিদিমণি ভাবসম্প্রসারণ করতে দিয়েছিলেন, ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’; বই-খাতার পাতার মতো সে শিক্ষার স্মৃতি টাও হলদেটে ভঙ্গুর হয়ে গেছে, কি যেন লেখা ছিল…কি যেন পড়েছিলাম! ‘সকলের তরে’ আবার কি? আমরা তো গোড়া থেকেই আলাদা, শুদ্দুর-বামুন-বদ্যি-সরকারী-বে
কাজেই সব সমস্যার সমাধান ঐ এক খান থেকেই হবে। ভরসা রাখতে হবে দাদা দিদির থানে। মাথা ঠেকান। আমার মতো উঠতে বসতে না হলেও অন্তত দুবেলা। আশীর্বাদ পাবেন। নিজের, মায় ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ বাঁধানো। অন্তত সেইরকমই কথা দেওয়া আছে এ তরফ ও তরফ থেকে। দু চারটে পাকা মাথার মাথামোটা ঘুষ খেতে বাম হাত ব্যবহার করেছিল বলে তো আর দেহটাকে ফেলে দিতে পারেননা! ডান হাতটা তো ভালো! তারপর ডান পা, পেট-ফেট, লিভার, কিডনি, জননতন্ত্র….অত বলিয়ে কইয়ে মুখখানা তো দোষ করেনি কোনো; অতএব একটু মানিয়ে গুছিয়ে নিন। নতুন বছরের দুপুরে কালিয়া-কোরমা খান, বিকেলে সামান্য জল-বাতাসা, রাতের জন্য হাফ দিস্তে লুচি আর ছানার পায়েস।
বিছানায় গা এলিয়ে যখন দেখবেন জনগণ সবুজ বাতি জ্বেলে আছে তখন টুক করে পোস্ট করে ফেলুন দুপুরের সাজানো ‘থালি’, অথবা ট্রিপল ফিল্টার লাগানো সুখী সুখী ছবি, ব্যাকগ্রাউন্ডে মান্না দে কিংবা বি টি এস। সুন্দর মুখের রিচ বেশী। টুং টাং লাইক এবং কমেন্টের বন্যা। আর একটু রাত বাড়লে ভাবুন ছেলেটার কথা। আর একবছর পর ইঞ্জিনিয়ারের ছাপ্পাটা লেগে যাবে। তারপর কি? বিকাশ কে বলা আছে অবশ্য। ওদের কোম্পানীতে একটা কিছু হয়ে যাবে ঠিক। তাছাড়া কলেজ ক্যাম্পাসিং তো আছেই। মেয়েটার সবে নাইন। দাদার চেয়ে ভালো। বড় হয়ে ডাক্তার হবে, ছোট থেকেই বলে। কিন্তু……! রাত বাড়ে আরো। ঘুম আসেনা। বোধহয় গুরুপাক আহারে!
ব্যস। গল্প শেষ। ভাবুন ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।’ মন্ত্রের মতো আওড়ান। ভাড় মে যায়ে দুনিয়া, শুধু আমার ‘সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’……‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে!’ চৈত্র মাসের শুক্লা অষ্টমী পেরিয়ে গেলেও আমাদের দেবী আছেন তো!