T3 || ১লা বৈশাখ || বিশেষ সংখ্যায় শর্মিষ্ঠা সেন

কোলাজ

সময়ে মনে পড়েনা। বাটার সামনেই অটোর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় রোজ, অথচ জুতো পরার আগে মনে পড়ে মোজাটা পাল্টাতে হবে। অফিস ফেরতাও মনে থাকেনা। তিন জোড়া একসাথে কিনে এনেছিল শ্রাবন্তী। বিগবাজার থেকে। সস্তায় পেয়েছিল নাকি! নস্যি, কালো আর ঘন নীল রঙের।

সবার আগে কালোটা বার করা হয়েছিল। গেছে মাস তিনেকের মতো। ঐ, সস্তার তিন অবস্থা! তারপর নস্যি। নস্যি অলোকের দুচোখের বিষ। শ্রাবন্তী বলে ব্রাউন, ডার্ক ব্রাউন। নস্যি রং সে কোনো কালেই পছন্দ করে না। নস্যি রং দেখলেই ছোটকাকার নস্যি নেওয়ার কথা মনে পড়ে।

রানাঘাটের বাড়িতে একসাথে থাকার সময়কার কথা। ছোট কাকা সারাদিন নস্যি নিতো। মনে পড়লেই। হাতাওয়ালা গেঞ্জি আর খাটো ধুতি লুঙ্গির মতো করে পরতো ছোট কাকা। আধ ময়লা ধুতির খুঁটে গোঁজা থাকতো এন.সি নস্যির ডিবে। কখনও কখনও দাঁতে নস্যি ডলতে ডলতে মায়ের রান্নাঘরের জানালার পাশে এসে গল্প জুড়তো, নস্যি মাখানো রস মধ্যমা থেকে বেয়ে বেয়ে কনুই পর্যন্ত চলে আসতো। কি ঘেন্না যে লাগতো! অথচ ছোট কাকা নির্বিকার হয়ে বকবক করেই যেত। আগডুম, বাগডুম। মাথার দোষ ছিল একটু। তবে বিয়েশাদি হয়েছিল। কাজকর্ম কিছু করতো না। যৌথ পরিবারে দু তিনটে মুখের গ্রাস এমনিতেই হয়ে যায় টেনেটুনে। ছোট কাকার মেয়েও হয়েছিল ফুটফুটে, স্বাভাবিক। তো সেই ছোটকাকা মা বা ছোটকাকীর মুখঝামটি না শুনলে কলতলায় যেত না। সেখানেও বিস্তর নাটক। সাড়া পাড়া জানিয়ে ছোট কাকা খ্যাকর খ্যাকর করে মুখ ধুতো। দিনে সাত থেকে আট বার তো বটেই, বেশী ছড়া কম নয়। তার সাথে চলত বিড়ি। নটরাজ কোম্পানীর আসল ‘লক্ষ্মী’ বিড়ি। লোকাল কোম্পানী। রানাঘাটের ই। মালিক বউ এর নামে বিড়ির নাম রেখেছিল লক্ষ্মী।

একটা সূত্র থেকে পরপর কত কথা মনে পড়ে যায়। এবং সব অতীতের।

অলোক ভবিষ্যত ভাবতে পারেনা।

আসলে ভাবতে চায়না। ভাবার কেউ নেই বলেই হয়তো। ছেলেপুলে হয়নি। বিয়ে হয়েছে বারো বছর। অলোকের মা পছন্দ করে এনেছিলেন শ্রাবন্তীর লক্ষ্মীমন্ত শ্রী দেখে। কোমর ছাড়ানো একঢাল চুল, ছোট্ট কপাল আর পানপাতার মতো মুখ। বিয়ের একদুবছর পর মা, মাসিরা বাচ্চা নেবার কথা সরাসরিই বলেছিল। বাচ্চা আসেনি ঘরে। ধীরে ধীরে রূপের কদর মিলিয়ে গেছে বাতাসে। বংশধর না দিলে শ্বশুরবাড়িতে বউএর আদর থাকেনা। অলোক সময় থাকতে উঠে এসেছিল কলকাতার কাছে। শহরতলিজুড়ে টাওয়ার উঠছিল তখন। ওখানেই দুকামরার ফ্ল্যাট কিনেছিল সে, পনের তলায়। হইচই নেই, গাড়ি-ঘোড়ার শব্দ মাথা ধরায় না। স্কুল, বাজার, হাসপাতাল সব কাছাকাছি বলে দামটা ভালোই পড়েছিল। ব্যাংক লোন এখনও টানতে হবে অনেক বছর। অলোকের মনে হয় ছেলে মেয়ে না হওয়ায় ও বেঁচে গেছে। আজকাল একার চাকরীতে লোন টেনে বাচ্চা মানুষ করা কঠিন। তারচেয়ে ওসব ঝামেলা না থেকে ভালোই হয়েছে। নিজেই নিজের নিষ্ঠুর মনোভাবে শিউরে ওঠে! এমন কেউ ভাবে! তাড়াতাড়ি সাত পাঁচ, এটা ওটা কথা মনে করে গভীরে চাপা দিয়ে রাখে নিষ্ঠুরতার রেশটুকু।

শ্রাবন্তীর এই নিয়ে কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। কেন কে জানে! সাধারণত মেয়েরাই আগে ভাঙে। কান্নাকাটি, ডাক্তার-বদ্যি, মানত টানত করে। এমন নয় যে বাচ্চাকাচ্চা পছন্দ করেনা, বাচ্চাদের খুব ভালোওবাসে। রানাঘাট গেলে বাড়ির ছোটরা ওর সাথেই খাওয়া দাওয়া, খেলা-ধূলো, হইহুল্লোড়ে মেতে থাকে। ছোড়দির ছেলেরা মামী বলতে অজ্ঞান, সেই শ্রাবন্তী এখনও পর্যন্ত কিছু বলেনি অলোক কে। অথচ, বলতে নেই, এখনও বেশ রঙিন দাম্পত্য ওদের, কখনও কখনও তুফানি, সদ্য বিয়ে হওয়া দম্পতিদের মতো!

অলোকের মনে পড়ে যায় বিয়ের অনেক আগের কথা। তখন কলেজে ফাইনাল ইয়ার। অ্যাকাউন্টেন্সি অনার্স। শম্পা বৌদির সাথে কাটানো কয়েকটি অসহ্য দুপুর। অলোক যত ভুলতে চায় ততই যেন খুঁটিনাটি ডিটেলিং সহ মনে পড়ে যায় সবটুকু। ওদের দুটো বাড়ি আগে মলিনাদিদের বাড়ি ভাড়া এসেছিল শম্পাদি আর ভজনদা। লোকটা কি যেন করত? উকিলি? নাকি মোক্তারি? সুবিধে করে উঠতে পারেনি, যা-ই করতো।

মলিনাদি ছিল ছোড়দির বান্ধবী। ছোড়দি বাড়ি এলে ওর ফরমাশ মতো যখন তখন মলিনাদিদের বাড়িতে যেতে হতো। মলিনাদির বিয়ে হয়নি তখনো। দেখাশোনা চলছে। সে বাড়িতে ছোট থেকেই অবাধ যাতায়াত ছিল অলোকের। সেই থেকে আলাপ হয়েছিল শম্পা বৌদিদের সাথে। একটু বেশীই আলাপ, নয় কি? অলোক ভাবে। ভাবতে চায়না আসলে। তবু বহুবছর চেপে রাখা ভাবনাগুলো থেকে ময়লার ভ্যাটের দুর্গন্ধ বেরিয়ে যায়। অলোক ভয় পায়। যদি অন্য কেউ গন্ধ পায়! টের পায় কিছু! পড়ে ফেলে ওর মনের ভেতরটা! সবার চোখ এড়িয়ে এড়িয়ে যায় কিছুদিন। কাজের অজুহাতে শ্রাবন্তীর কাছ থেকে সরে সরে থাকে!

শম্পাবৌদিরা বাচ্চা হবার বছর খানেক পর চলে গিয়েছিল। মেয়ে হয়েছিল। গায়ের রং হয়েছিল মেমসাহেবদের মতো। একমাথা কোঁকড়া চুল। ছোড়দি খুব চটকাতো ওই কুট্টিটাকে। নিজেও ঐরকম পরির মতো মেয়ে চেয়েছিল। কিন্তু ওর ছেলে হয়েছিল। যমজ।

কত সময় পার হয়ে গেছে। অলোকের চুলের অল্পই অবশিষ্ট আছে এখন। যেটুকু আছে তা যে একসময় কোঁকড়া ছিল তাও বোঝা যায় না! সহজে চেনাবার জন্য টাকলা অলোক নামে চিহ্নিত করেছে নতুন ছেলেপুলেদের কেউ কেউ। আসলে অলোক নামের আর একজন আছে অফিস এ, সে আসে সোনারপুর থেকে, গলায় শেকলের মতো সোনার চেন পরে, সে গোল্ডি অলোক।

চেয়ারটা টেনে বসে ধীরে সুস্থে বাঁ পায়ের মোজাটা পরে অলোক। তারপর ডান পায়ে। ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের কাছটা ফুটো। তাই অর্ধচন্দ্রের মতো আঙুলের খানিকটা বেরিয়ে থাকে। আলোকের নখ সুন্দর করে কাটা থাকে সবসময়। তাই বলে মোজার মাথায় ফুটো কারো ভালো লাগে? ঐ বেরিয়ে থাকা আঙুলটা আলোককে স্বস্তি দেয়না। যেন অতীত ফুঁড়ে আবারও আসবে অনেক অনেক ঢেকে চেপে রাখা ঘটনা!

বুড়ো আঙুলের মাথা দেখে কিছু মনে হওয়ার কথা নয়, তবু অলোকের মনে পড়ে একবার লিলুয়া স্টেশনে বাবা প্ল্যাটফর্মে বসে ব্লেড দিয়ে নখ কাটছিল। কেউ করে এমন কাজ! মাতাল, ভিখিরি আর ভবঘুরেরা প্ল্যাটফর্মে শুয়ে বসে থাকে। অলোক অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, যেন লোকটিকে সে চেনে না। ব্লেডটা অবশ্য অলোকই বাবাকে দিয়েছিল। তারপর ট্রেন এসে যাওয়ায় বাবা তাড়াহুড়ো করে ব্লেডটা পার্সের খুচরো রাখার পকেটে রেখে অলোকের হাত ধরে ট্রেনে উঠে পড়েছিল। বাবার স্যান্ডেল পরা পায়ের আঙুল দেখা যাচ্ছিল। বাঁ পায়ের শেষ তিনটে নখ কাটা ছিল না। অলোক বাবার উল্টোদিকে জানলার ধারে বসে গোটা রাস্তা ঐ তিনটে নখ দেখতে দেখতে এসেছিল।

মোজাটা বাতিল করা যাবেনা। একদম নতুন। আর ওর প্রিয় ঘন নীল রঙের। নতুন এই মোজা জোড়া ফেলে দেবার কথা মনেও হয়না। এমনিতেই অলোক কিছু ফেলতে গেলে সতের বার ভাবে। ঠাকুমা বলতেন হাতের ব্যবহারের জিনিস ফেলে দিলে পরকালের জন্য পাপ জমা হয়।

অলোক পরকাল-টরকাল মানেনা, তবে ছোটবেলা থেকে শুনে শুনে অভ্যাস হয়ে গেছে খুঁটিনাটি জিনিস জমিয়ে রাখার। ফিল্টারের বাক্স, ফ্রিজের কার্টুন ইত্যাদি গুছিয়ে রাখা ছিল বলেই বাড়ি শিফ্ট করার সময় অসুবিধে হয়নি। টুসকিকে লেখা চিঠিপত্র ওর গোপন ফাইলে এখনও আছে, টুসকির ছবিসহ। ছবিটা টুসকিই দিয়েছিল। হার্ট সাইন এঁকে। তখনকার দিনে হার্ট সাইন আঁকাটাই একটা দারুন সাহসের কাজ ছিল। টুসকি ছিল আগুনপারা সুন্দরী। স্কুলের আরো অনেক ছেলের মতো অলোকও পুড়েছিল সেই আগুনে। টুসকি চিঠি দিত শশধর স্যারের ব্যাচ এ। ভূগোল খাতার মাঝে লুকিয়ে। রাত্রে চুপিচুপি সেই চিঠি পড়ে অস্থির হয়ে যেত কিশোর অলোক।

মোজা পরে হাঁক দেয় সে। শ্রাবন্তীর ব্যাগ গোছানো হয়নি এখনও। ব্যাগের খোপে খোপে মনে করে সব গুছিয়ে দেয় বউ। চশমার খাপ, এক্সট্রা রুমাল। খুচরো পয়সা, জল এবং সামান্য টিফিন। ফল-টল, আখরোট, খেজুর, ছানাটানা ইত্যাদি। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। যখন যেমন। ব্যাগটাও শ্রাবন্তী কিনে এনেছিল লেক্সপো থেকে।

বাড়ি থেকে রীতিমতো পেট পুজো‌ করে যায় অলোক। ডাল ভাত তরকারি মাছ সব দিয়ে খেতে দেয় শ্রাবন্তী। চাটনি এবং টকদইও। প্রতিদিন। অফিসের দিনগুলোতে গত বারো বছরে নড়চড় হয়নি এ রুটিনের। মাঘ মাসের শীতেও অলোক দই খেয়েছে। ঘরে পাতা। ডাবল টোনড্ মিল্কের।

অফিস কলিগ সুকুমার ঠাট্টা করে একদিন বলেছিল, বউদি আপনাকে মায়ের আদরে রেখেছে। অলোক ভেবে দেখেছে। কথাটা ফেলে দেওয়ার নয়। শ্রাবন্তী দিনের পর দিন অলোকের যত্ন করে গেছে। অলোক ভুলে গেছে জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী। শ্রাবন্তী অনুযোগ করেনি। পাশ কাটিয়ে গেছে, যেন এমন হতেই তো পারে। অথচ অলোক মনে মনে চায় বউ একটু রাগ টাগ করুক। শ্রাবন্তী রাগ করেনা কখনও। মাঝেমাঝে খুব ঠাণ্ডা হয়ে যায়। ওটাই রাগ। অলোক তখন ভয় পায়। ঠিক যেমন মা কে ভয় পেত।

আলোকের মা রাগ করে বাবার বাড়ি চলে যেত অলোককে নিয়ে। দাদা, বড়দি আর ছোড়দি বাড়িতে থাকতো বাবার দেখাশোনার জন্য। মা খাওয়া দাওয়া সবই করতো শুধু মুখ বন্ধ রাখতো। যেন কথা না বলার মানত করা আছে কোথাও! মৌনব্রত। অলোক খুব ভয়ে ভয়ে থাকতো সেই সব দিনগুলো। সপ্তাহখানেক বাদে বাবা নিতে আসতো। একরাত থাকতো মামাবাড়িতে। সেরাতে অলোক মামাতো ভাইদের সাথে শুতো।

বাড়ি ফিরে এলে মা আবার আগের মতো। রান্না, খাওয়া, ধোয়া কাচা, ছোট কাকা আর বড় জেঠিমার সাথে গল্প…কতকিছু হতো। এখন আলোকের সংসার একাবোকার। বাবা গত হয়েছেন বহুকাল। আলোকের বিয়ের আগে। মাকে দাদা-বৌদি যত্নেই রাখে। বড়দি শিলচরে। তিন-চার বছর বাদে আসে বাড়িতে। শ্বশুর, শাশুড়ি,ননদ, দেওরদের নিয়ে তার বড় সংসার। ছোড়দিও নিজের সংসার, ছেলেদের নিয়ে আছে। রানাঘাটেই। আলোকেরই শুধু যেন এখন কিচ্ছুটি নেই! ঝাড়া হাত পা! অবশ্য শ্রাবন্তী আছে।

||২||

ব্যাগ নিয়ে, চকচকে জুতোয় পা গলিয়ে অলোক শ্রাবন্তীর গালে আলতো চুমু দেয়। শ্রাবন্তী অলোকের ডান বাহুটা একটু ধরে, যেন বলে, সাবধানে যেও, শুধু মুখ ফুটে বলেনা। তাকিয়ে থাকে মায়া ভরা দুচোখে, খুব ভালবাসায়, তারপর ঘরে এসে অগোছালো ঘরদোর ঠিক-ঠাক করে জলখাবার নিয়ে বসে।

অফিস থাকলে অলোক কখনও জিজ্ঞেস করেনা শ্রাবন্তীর খাবারের কথা। শ্রাবন্তী খায়। একটু চা-মুড়ি, একটা রুটি, কখনও শুধুই ফল। কাজের মেয়েটা আসে দশটার পর। বাসন কোসন মেজে, ঘরদোর ঝাড়পোঁছ করে। কাচা কাপড়চোপড় মেলে দেয়। সব শেষ হয় যায় বারোটার মধ্যেই। সব মিটে গেলে অদ্ভুত নিরবতা ফ্ল্যাট জুড়ে। অল্প করে দেওয়া ফ্যান টা একঘেয়ে আওয়াজ করে ঘুরতে থাকে। যেন বলে, জানি…জানি….জানি….জানি! শ্রাবন্তী লকার থেকে গয়নার বাক্সটা বার করে। ছোট্ট তালাটা খুলে বার করে অনেক পুরোনো একটা ভেলভেটের থলে। পায়ের তোড়া, চুটকি, রূপোর মালা টালা ইত্যাদি রাখা তাতে। সেসবের মাঝে আলগোছে আছে হাতে বোনা উলের একটা লাল মোজা। একটাই। শিশুর।

বাবার গেঞ্জি কারখানার কাজটা আচমকা চলে গিয়েছিল। কারণ ছাড়াই। তবে এককালীন অনেকগুলো টাকা দিয়েছিল বাবার মালিক। অনেক টাকা। মা এক রাতে শ্রাবন্তীর হাতদুটো ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে প্রস্তাবটা দিয়েছিল। শ্রাবন্তী বজ্রাহত হয়েছিল শুনে, তারপর ভেবে দেখেছিল, এমন তো আকছার পেপারে পড়ছে। আদিকালেও ছিল। সে তো এক অক্ষম নারীরা সহায় হতে যাচ্ছে! সে আনন্দ দিতে যাচ্ছে এক পরিবারে। অন্যায় কিছু দেখেনি শ্রাবন্তী।

বেড়ার ঘরটা ইটের করেছিল বাবা। আর একটা দোকান। গালামালের। ব্যাবসাটা দাঁড় করিয়ে ছোট ভাইবোন গুলোর ভবিষ্যত সুরক্ষিত করেছিল শ্রাবন্তী। বাইরে পড়াশোনার নাম করে পাড়া থেকে চলে গিয়েছিল একটি মেয়ে তার দুরসম্পর্কের দিদির বাড়ি। দুবছর পরে ফিরে এসে এখানেই আবার কলেজে ভর্তি হয়েছিলে। দেখা গেল বাবাও বেশ ভাল ব্যবসাদার! দোকানটা বড়ো করেছিল আর কর্মচারী রাখা হয়েছিল একজন।

শরীরে আরো ছিপছিপে শ্রাবন্তী মোহময়ী হয়ে উঠছিল দিন দিন। সে সময়ই অলোকের মা দেখে পছন্দ করেছিল এক বিয়েবাড়িতে। কলেজ শেষ হতে না হতেই বিয়ে। বিয়ের পর অলোক কিছু বোঝেনি। তলপেটের দু একটা দাগে আঙুল বুলিয়ে বলেছিল, ‘এসব জায়গায় তেল না দিলে খুব ফেটে যায়, আমারও আছে দ্যাখো,’ বলে হাত টেনে নিয়ে গিয়েছিল আরো গভীরে!

শ্রাবন্তী মোজাটা বুকে জড়িয়ে কাঁদে চার দেওয়ালের মাঝে। নিঃশব্দ হাহাকারে খানখান হয়ে যায় তার সাজানো সংসার। আরো একটি প্রাণ শরীরে বহন করার ক্ষমতা সে হারিয়েছে প্রথমবারেই! বদলে পেয়েছে অতীতের মাত্র দুটো বছর ভুলে হাসিমুখে থাকার অসীম ক্ষমতা। পেয়েছে দুধের গন্ধ মাখা ছোট্ট একটা শরীরের ওম, পেয়েছে ভুবন ভোলানো হাসিমুখের স্মৃতি!

এই নিয়েই থাকা যায় কত! কান্না মুছে সব গুছিয়ে তালাবন্ধ করে রেখে দেয় নির্দিষ্ট লকারটায়।

স্নান সেরে আয়নার সামনে এসে সিঁথিতে সিঁদুর দেয়। নাকে গুঁড়ো পড়ে একটু। ওটা মুছতে নেই, ওতে নাকি স্বামী সোহাগিনী হয় নারী। কাজল ছোঁয়ায় যত্ন করে।

শ্রাবন্তী ব্যালকনিতে বসে রোদ পোহাবে এবার। অনেক নীচে পুতুলের মতো লোকজন দেখা যায়। ছোট ছোট মানুষ জন, গাড়ি গুলো খেলনার মতো মনে হয়। মাঝের ছোট জলাশয়ে রোদ পড়ে চিকচিক করে হীরের কুচির মতো। এরই মাঝে অলোক আর শ্রাবন্তীর নিত্যকার সংসার, আরো অনেকের মতো। এক খেলাঘর বৈ তো আর কিছুই নয়!

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।