ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৯৬)

সুমনা ও জাদু পালক/সমীরণ সরকার

(৯৬ তম পর্ব)

কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেল দুধরাজ। পুষ্পনগর রাজ্যের রাজা রুদ্র মহিপাল এবং রানী মায়াবতীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সুমনা এবং রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা দুধরাজের উপর সওয়ার হল। রাজা ,রানী, রাজপুত্র হিরণ কুমার সমস্বরে বলে উঠলো, বিদায় রাজকুমারী রত্নমালা, বিদায় রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা। তোমাদের মঙ্গল হোক। রাজা রানী ও রাজকুমার থামতেই সেখানে উপস্থিত রাজপ্রাসাদের কর্মচারীগণ এবং প্রজারা সমস্বরে বলে উঠলো, বিদায় রাজকুমারী রত্নমালা, বিদায় রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা। তোমাদের জয় হোক !
ধীরে ধীরে মাটি ছেড়ে আকাশের পানে উড়ে চলল দুধরাজ। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা পুষ্পনগর রাজ্যের সীমানা অতিক্রম করল।
আরো কিছুক্ষণ যাওয়ার পর চোখের সামনে ভেসে উঠলো দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ফসলের মাঠ, রংবেরঙের ফুলে ভরা পুষ্প বাগিচা, গোছা গোছা ফলে ভরা নানা রকম ফলের বাগান আর আর অসংখ্য সবুজ গাছ। শুধুই সবুজের সমাহার।
চন্দ্রকান্তা চিৎকার করে উঠলো, “ওই তো , ওই তো আমাদের রাজ্য ‘সবুজের দেশ’। জাদুকর হূডুর মায়া দন্ড দ্বিখন্ডিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মায়ার প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে আমাদের রাজ্য আবার পূর্বের রূপ ফিরে পেয়েছে।”

কিছুক্ষণ পরেই অনেকটা দূরে নজরে এলোএকটি বিশাল প্রাসাদ ।
চন্দ্রকান্তা উল্লসিত হয়ে বললো, ওই তো আমাদের ‘সবুজ প্রাসাদ’! বন্ধু রত্নমালা, তোমার দুধরাজকে বলো না আমাকে নিয়ে চলুক আমাদের ওই প্রাসাদের কাছে।
সুমনা দুধরাজের তুষার শুভ্র কেশরে হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে বলল, ও দুধরাজ ভাই, চলনা আমাদের বন্ধু রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা কে দূরের ওই প্রাসাদের কাছে নামিয়ে দিয়ে আসি।
উড়ন্ত দুধরাজ দুবার ঘাড় দুলিয়ে আর মুখে একটা বিচিত্র আওয়াজ করে বুঝিয়ে দিল যে, সে সুমনার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করছে।
দুধরাজ প্রাসাদের সামনে আসতেই সুমনা অবাক হয়ে দেখল যে, সবুজের দেশের রাজা মহারাজ শান্তিব্রতের রাজপ্রাসাদ টি নামেই শুধু সবুজ প্রাসাদ নয়, পুরো বাড়িটা বিশাল বড় বড় চারটি গাছের উপর তৈরি এক অদ্ভুত সুন্দর প্রাসাদ। এক বিশাল বড় গাছ বাড়ি। গাছ চারটির অজস্র মোটা মোটা শাখা প্রশাখা। সেগুলির উপরে আছে অনেক ছোট ছোট ঘর। সম্ভবত গাছের মোটা মোটা ডাল কে যাতায়াতের পথ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গাছবাড়িটার রং ঠিক কিশলয়ের মতো মিষ্টি সবুজ।
প্রাসাদের সামনে অনেক লোকজন আর একজন সুবেশ, সুপুরুষ, দীর্ঘকায় বলিষ্ঠ ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন। আর তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন রাজ পোশাক পরিহিত একজন অপূর্ব সুন্দরী মহিলা ।
চন্দ্রকান্তা চিৎকার করে উঠলো , বন্ধু রত্নমালা, ওই দেখো আমার বাবা -মা দাঁড়িয়ে আছে।
সুমনা বলল, বন্ধু চন্দ্রকান্তা, আমি বুঝতে পারছি না যে, তোমার বাবা মা কি করে জানতে পারলেন যে তুমি এখনই আসছ।
অদৃশ্য কন্ঠ বললো, আমি খবর দিয়েছি।
তবে একটা কথা রাজকুমারী, রত্নমালা, এখানে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করা যাবে না। রাজকুমারী চন্দ্রকান্তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমাদের যত দ্রুত সম্ভব পৌঁছাতে হবে কনকনগর রাজ্যের সেই শিব মন্দিরে। যতক্ষণ পর্যন্ত না জাদুঘর হূডুর জাদুদন্ড ধ্বংস হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না।
—বেশ তাই হবে হে অদৃশ্য কন্ঠ।
মহারাজ শান্তিব্রত আর মহারানী সান্ত্বনা কন্যাকে ফিরে পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেললেন। বুকে জড়িয়ে ধরলেন চন্দ্রকান্তা কে। উপস্থিত প্রজাগণ জয়ধ্বনি দিয়ে উঠলো মহারাজ শান্তি ব্রত, মহারানী সান্ত্বনা এবং রাজকুমারী চন্দ্রকান্তার নামে।
কিছুক্ষণ পরেই রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা এবং তার বাবা-মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আবার কনকনগরের পথে যাত্রা শুরু করলো সুমনা ও দুধরাজ।
এরপর একে একে বৃহল্লাঙ্গুল আসমানী বানরদের দেশ, সবুজ পাখিদের‌ দ্বীপ আর হলুদ দৈত্যের দেশ পার হয়ে একসময় ওরা পৌঁছে গেল কনকনগর রাজ্যে। সবাই নানা রকম উপহার দিল সুমনাকে। ও হ্যাঁ, মহা কচ্ছপ মানে কাছিম দাদুর সঙ্গে ও দেখা করেছিল সুমনা।

কনক নগর রাজ্যে পৌঁছে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হল সুমনা।

(আগামী পর্বে শেষ হবে এই দীর্ঘ রূপকথার কাহিনী)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।