ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৬৭)

সুমনা ও জাদু পালক

সুমনা ও চন্দ্রকান্তা সবিস্ময়ে লক্ষ্য করল যে, রাজা রুদ্র মহিপাল যেখানে দাঁড়িয়ে গেলেন, ঠিক সেখানে বটবৃক্ষের গায়ে একটি ছোট্ট কোটর দেখা যাচ্ছে। রাজা রুদ্র মহিপাল ওই কোটরের সামনে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে নমস্কার জানিয়ে বললেন, মহা বটবৃক্ষের হৃদয়ে অবস্থানকারী ,কোটরবাসী হে সর্বজ্ঞানী বিহগ দম্পতি, আমি পুষ্পনগর রাজ্যের রাজা রুদ্র মহিপাল আপনাদের নমস্কার জানাই। আমি বিশেষ প্রয়োজনে আপনাদের সাহায্য প্রার্থী। রাজপুরীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করার গুপ্ত পথ ব্যবহার করার জন্য আমি আপনাদের অনুমতি প্রার্থনা করি।
রাজা রুদ্র মহিপাল পরপর তিনবার একই কথা বলার পর বৃক্ষের অভ্যন্তর থেকে সাপের ফোঁসফোঁসানির মত শব্দ ভেসে এলো। রুদ্রমহিপালের ভ্রু কুঞ্চিত হলো। একটু পরেই বৃক্ষকোটরের ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো একজোড়া চেরা জিভ। ক্ষণকাল পরেই বৃক্ষ কোটরের অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে এলো ভীষণ দর্শন একটি সাপের মাথা। কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর মুখের ভিতর থেকে চেরা জিভ বের করছে সে। লকলক করছে জিভ। ওই বিকট দর্শন সাপের মাথা দেখে ভীত চন্দ্রকান্তা সুমনাকে বলল, এটা কি হল?
মহারাজ তো বৃক্ষকোটরের অভ্যন্তরে বসবাসকারী কোন এক বিহগ দম্পতিকে আহ্বান করে তাদের সাহায্য প্রার্থনা করলেন, তাহলে এই বিকট দর্শন ভুজঙ্গ এলো কেন, আর কোথেকে বা এল?
সুমনা বলল, এত ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই। নিশ্চয়ই এর কোন রহস্য আছে। দেখি না এরপর কি হয়।
সাপটির ফোঁসফোঁসানিতে বিন্দুমাত্র ভীত না হয়ে রাজা রুদ্র মহিপাল আগের মতই করজোড়ে বললেন, হে সর্বজ্ঞানী বিহগ দম্পতি, আপনারা কি আমাকে চিনতে পারছেন না যে, এই তাৎক্ষণিক পরীক্ষার মাধ্যমে আমাকে যাচাই করতে চান? আপনাদের তো আমি জানালাম যে, বিশেষ প্রয়োজনে আমি রাজপুরীতে প্রবেশের এই গুপ্ত পথ ব্যবহার করতে চাই।
কিন্তু রাজা রুদ্র মহিপাল বারবার একথা বলার পরেও সেই ভীষণ দর্শন ভুজঙ্গটি আগের মতই জিভ বের করে হিসহিস শব্দ করতে লাগলো।
রাজা তখন “জয় শ্রী বিষ্ণুর জয়” এই মন্ত্র তিনবার উচ্চারণ করে, ডান হাত দিয়ে নির্ভয়ে ভুজঙ্গটির মাথা চেপে ধরলেন। কিন্তু তিনি যেন ভুজঙ্গটির মাথা চেপে ধরে রাখতে সক্ষম হচ্ছিলেন না। প্রতিমুহূর্তে তাঁকে যেন ভয়ংকর শক্তি প্রয়োগ করতে হচ্ছিল। এসব দেখে শুধু চন্দ্রকান্তা নয় ,সুমনাও ভীত হয়ে পড়েছিল। আর ঠিক তখনই অদৃশ্য কন্ঠ বললো, হে রাজন, আপনি একবার বলুন ,জয় দেব হরিহরের জয়।
রাজা রুদ্র মহিপাল পরম ভক্তি ভরে উচ্চারণ করলেন, ‘জয় দেব হরিহরের জয়।’
মুহূর্তের মধ্যে একটি আশ্চর্য জনক ঘটনা ঘটে গেল। রাজার হাতের মুঠির ভেতর থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল ভুজঙ্গের মাথা। বৃক্ষকোটরের অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে এলো বিহগ দম্পতি, একটি বেঙ্গমা ও একটি বেঙ্গমী পাখি।
ওরা রাজার মাথার চারিদিকে কিছুক্ষণ বৃত্তাকারে ঘুরলো, তারপর একটা উঁচু বট গাছের ডালের উপরে গিয়ে বসে বেঙ্গমা বলল, বহুদিন পরে আপনার দর্শন পেয়ে প্রীত হলাম হে রাজন। আপনার সাহস ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পেয়ে খুব খুশি হলাম। আপনি গুপ্ত পথ ব্যবহার করে রাজপুরীর অন্দরে প্রবেশ করুন। আমরা ততক্ষণে একবার পুষ্পনগর রাজ্য পরিভ্রমণ করে আসি। বৃক্ষকোটরে দীর্ঘদিন অবস্থান করে রাজপুরী প্রবেশের গুপ্ত পথ পাহারা দিয়ে আমরা শ্রান্ত হয়ে পড়েছি।
রুদ্র মহিপাল বললেন, কিন্তু…?
—- কোন চিন্তা নেই রাজা, আপনি রাজপুরীর অভ্যন্তরে কাজ সেরে ফিরে আসার আগেই আমরা ফিরে আসবো। আর যদি না ফিরতে পারি, কিছুক্ষণ আগে যে নাগরাজকে দেখলেন, সে এই গুপ্ত দ্বার সুরক্ষিত করবে।
রুদ্র মহিপাল বললেন, বেশ, এবারে তাহলে আপনাদের অনুমতি নিয়ে গুপ্ত পথ উন্মুক্ত করি।
—– অবশ্যই।
রাজা রুদ্র মহিপাল এবার বৃক্ষকোটরের অভ্যন্তরে হাত ঢুকিয়ে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় চাপ দিতেই ,বৃক্ষকোটরের নিচের অংশ থেকে গাছের গোড়া বরাবর লম্বালম্বি দু’ফাঁক হয়ে একটা সুড়ঙ্গ পথ দেখা গেল।
রাজা চন্দ্রকান্তা ও সুমনাকে নিয়ে সেই পথের মধ্যে প্রবেশ করলেন।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।