সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব – ২)

দেবমাল্য

দিনকে দিন গোলাবাড়িটা যা হয়ে যাচ্ছে, ওখানে আর কত দিন ব্যবসা করা যাবে সন্দেহ আছে। দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম এত বেড়ে গেছে, ব্যবসা করা তো দূরের কথা, বউ-বাচ্চা নিয়ে বসবাস করাই মুশকিল।
দেবমাল্যর বিয়ের ক’দিন পরেই শ্বশুর-শাশুড়ি বেড়াতে এসেছিলেন মেয়ের বাড়ি। পর দিন সকালেই তাঁরা ফেরার জন্য তোড়জোড় শুরু করে দিলেন। অথচ আসার আগে বলেছিলেন, দিনকতক থাকবেন। তা হলে একটা রাত কাটিয়েই তাঁরা চলে যাচ্ছেন কেন! কী এমন হল!
সে কি কোনও অন্যায় বা ভুল করে ফেলেছে! নাকি এ জায়গাটা তাঁদের পছন্দ হয়নি! নাকি এখানকার খাবারদাবার তাঁদের মুখে রুচছে না! না, এখানে তো তেমন মশাটশাও নেই যে, তাদের জ্বালাতনে মেয়ের বাড়ি ছেড়ে তাঁরা পালাবেন! তা হলে!
না, শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে কিছু বলেননি। তবে মা-বাবা চলে যেতেই তানিয়া ওকে বলেছিল, সে দিন মাঝরাতে নাকি মুড়ি-মিছরির মতো এত বোমা পড়েছিল, এত গোলাগুলি চলেছিল যে, তার আওয়াজে সারা রাত আর দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি তার বাবা-মা। কখন কী হয় কোনও ঠিক আছে! বিছানার ওপরে ভয়ে জড়সড় হয়ে কুঁকড়ে বসে ছিলেন তাঁরা। সকালে উঠেই নাকি মেয়েকে বলেছিলেন, এমন জায়গায় থাকা তো খুব বিপজ্জনক। তোরা আছিস কী করে! জামাইকে একটু বোঝা। হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে এভাবে বেঁচে থাকা যায় না। দরকার হলে কারখানাটাকে অন্য কোথাও সরিয়ে নিয়ে যেতে বল।
তানিয়ার কথায় কান দেয়নি দেবমাল্য। কিন্তু জামাইষষ্ঠীতে ও যখন শ্বশুরবাড়িতে গেল, শুধু শ্বশুর-শাশুড়িই নন, তার বড় শ্যালক, ছোট শ্যালক সবাই মিলে তাকে এমনভাবে বোঝালেন যে, তারও মনে হল, ওঁরা ঠিকই বলেছেন।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।