ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৪৬)

সুমনা ও জাদু পালক

বিস্মিত বানর রাজ মহাগ্রীব সুমনার দিকে তাকিয়ে বললেন ,কি হল রাজকুমারী রত্নমালা?
কোন সমস্যা? সুমনা আঙ্গুল দিয়ে দূরে কিছু দেখালো।

সুমনার সামনে একটা নাতি উচ্চ প্রশস্ত চাতাল। সেই চাতালে একটা উঁচু বেদীর উপরে গোলাকৃতি একখণ্ড পাথর। পাথরটির উপরে কিছু খোদিত আছে। মনে হচ্ছে যেন কিছুর অবয়ব খোদিত।কিন্তু পুরো পাথরটার গায়ে এমনভাবে সিঁদুর লেপে দেওয়া আছে যে, পাথরের উপরে খোদিত চিত্রটি পরিষ্কার নয়।
ওই গোলাকৃতি প্রস্তরখণ্ডের সামনে একজন বৃদ্ধ বানর চোখ বন্ধ করে হাতজোড় করে বসে আছে।বিড়বিড় করে কি যেন বলছে সে.।
পাথরটির পাশে আরেকটি অপেক্ষাকৃত ছোট বেদীর উপরে একটি বানরের মূর্তি। মূর্তিটির ডান হাতে একটি গদা ধরা আছে। বানরটির গলায় একটি রক্তবর্ণ ফুলের মালা।টাটকা মালা।
সিঁদুর লেপা পাথরটির সামনে মেঝেতে সবুজ পাতা দিয়ে তৈরি বিছানায় একটি বাচ্চা বানর চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। তার মাথার কাছে মূল্যবান পোশাক পরে একটি স্ত্রী বানর বসে আছে । তার দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। স্ত্রী বানরটি কাঁদছে।
ওদের থেকে বেশ কিছুটা দূরে চাতালের এক প্রান্তে একটা মস্ত খাঁচার মধ্যে একটা সবুজ রঙের ব্যাঙ বন্দী হয়ে আছে ।ব্যাঙটির আবার দুটো লাল রঙের ডানা। ও মাঝে মাঝেই সেটা নাড়াচাড়া করছে। সুমনা ওই অদ্ভুত দর্শন ব্যাঙটিকে দেখে বিস্মিত হয়েছিল ।তাই আঙুল দিয়ে খাঁচায় বন্দি ওই ব্যাঙটাকে নির্দেশ করেছিল।
বানর রাজ সুমনার দৃষ্টি অনুসরণ করে বলল, ওটাতো উড়ুক্কু ব্যাঙ, ভয়ানক শয়তান।
—–মানে?
—–ওর জন্যই তো আমার একমাত্র ছেলে অসুস্থ হয়ে শুয়ে আছে পর্ণ শয্যায়।
—— ওই গোল পাথরটার সামনে বাচ্চাটিকে শুইয়ে রেখেছেন কেন?
——- বানর রাজ হাতজোড় করে কপালে ঠেকিয়ে বলল, উনি আমাদের দেবী মা। দেবী মায়ের সামনে বসে আছেন রাজ পুরোহিত। উনি আমার সন্তানের আরোগ্য কামনায় অহরাত্র প্রার্থনা করে চলেছেন।
—— বাচ্চাটির মাথার পাশে যিনি বসে আছেন, উনি কি বাচ্চাটার মা?
—— হ্যাঁ, উনি বানর রাজ্যের মহারানী তারা।
—— আর আপনাদের দেবী মায়ের পাশে বেদীর উপরে যার মূর্তি দেখতে পাচ্ছি ,উনি কে?
—– উনি আমাদের বানর বংশের আদি পুরুষ,
চন্দ্রবদন।ওঁর আশীর্বাদ ও প্রার্থনা করে চলেছেন আমার স্ত্রী।
—– বানর রাজ, আপনার পুত্রের কি হয়েছে?
আর ওই ব্যাঙ আপনার পুত্রের কি ক্ষতি করেছে? তাছাড়া পাহাড়ের ভিতর এই সুরক্ষিত রাজপ্রাসাদে ওই ব্যাঙ কিভাবে ঢুকল, সেটাও তো বুঝতে পারছি না।
——– সে এক দুঃখের কাহিনী। আমাদের বানর রাজবংশের নিয়ম অনুযায়ী বাচ্চা জন্মের পর দশম দিনে বাচ্চাকে নদীতে স্নান করাতে হয়। আমার রানী বাচ্চাকে আমার রাজ্যের সবচেয়ে সুন্দর নদী তটিনীতে স্নান করাতে নিয়ে গিয়েছিল। পুত্রকে স্নান করানোর পর নদীর পাড়ে এক বটবৃক্ষের তলায় তাকে শুইয়ে, পাহারাদারের তত্ত্বাবধানে রেখে, রানী তার সখিদের নিয়ে নদীতে নেমেছিলেন স্নান করতে।
হঠাৎ কোত্থেকে উড়তে উড়তে এসে এই ব্যাঙটা
আমার পুত্রের গায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এই সময় ওর পায়ের আঘাত লাগে আমার পুত্রের চোখে। ও চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। রানী তার সখীদের নিয়ে নদী থেকে উঠে আসেন। দ্রুত পায়ে যান পুত্রের কাছে। ততক্ষণে আমার পুত্রের চারপাশে থাকা
পাহারাদাররা ধরে ফেলে ব্যাঙটিকে। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে।
—– কি হয়েছে বাচ্চাটির?
—– ও দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে।
—– আপনার রাজ্যে কোন ভালো চিকিৎসক নেই?
——- আছে তো, বৈদ্যরাজ সুষেন। কিন্তু তিনি বহু চেষ্টা করেও রাজকুমারের দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে পারেননি।
—–ইস! খুবই আফশোসের কথা!
সুমনার কথা শেষ হতে না হতেই দূর থেকে ব্যাঙটি অবিকল মানুষের গলায় কথা বলে উঠল, আমায় কিছুক্ষণের জন্য মুক্ত করে দিলে আমি বাচ্চাটির চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করতে পারি।”

চলবে
‌ ‌‌ ‌‌

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।