ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৩৪)

সুমনা ও জাদু পালক 

সোনালী ঈগল কে অনুসরণ করে গুহার ভিতর ঢোকে সুমনা। গুহায় ঢোকার মুখটা বেশ প্রশস্ত হলেও ভিতরটা অন্ধকার। গুহাটা বেশ উঁচু বলে মাথা নিচু না করেই সুমনা এগোতে পারছিল অনায়াসে।
অন্ধকারে ঠিকমতো হাঁটতে পারছিল না বলে সে মনে মনে অদৃশ্য কন্ঠের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। আর কী আশ্চর্য, কিছুক্ষণের মধ্যেই একটু একটু করে যেন অন্ধকারটা কাটতে শুরু করলো!
আরো কয়েক পা এগুতেই সুমনা বিস্মিত হল ।সামনে গুহাটা অনেকটা চওড়া আর আলোতে ভরপুর। গুহার ভিতর এত আলো আসছে কোত্থেকে?
সুমনা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকাতেই একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পেল। গুহার মাথায় বেশ খানিকটা জায়গা একদম ফাঁকা। একটা মস্ত সবুজ রঙের গাছ গুহার মেঝে থেকে উঠে গুহার মাথায় সেই ফাঁকা জায়গাটা দিয়ে বাইরে মাথা বের করে দিয়েছে। গুহার ভিতরে ও গাছটার অনেক ডালপালা ছড়ানো। ডালে ডালে সবুজ রঙের অসংখ্য চকচকে পাতার উপর বাইরে থেকে আসা আলো বিচ্ছুরিত হয়ে চারদিকটা আলোকিত করে রেখেছে।

গাছটার একেবারে নিচের দিকে দুটি শাখা পাশাপাশি এমনভাবে বেরিয়েছে যে ওই দুটি শাখার গোড়ার দিকে অনেকটা প্রশস্ত জায়গা আছে। আর সেখানে সাধারণ পাখির বাসার মতই শুকনো লতার টুকরো, গাছের শুকনো পাতা ,ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো, টুকরো টুকরো ভাঙ্গা কাঠি ইত্যাদি দিয়ে একটা বাসা তৈরি করা হয়েছে। আর সেই বাসাতে ডানা ছড়িয়ে বসে আছে একটা বড় সবুজ রঙের পাখি। সম্ভবত সবুজ পাখির দ্বীপের রানী ।
গাছটার গোড়ায় একটা মস্ত ধূসর রঙের পাথরের উপরে একটা বড় সবুজ রঙের পাখি চুপ করে ঘাড় নুইয়ে বসে আছে। পাখিটির দুচোখে বিষন্নতা।
সোনালী ঈগল তার ডানা দুটি বিস্তৃত করে ঈষৎ বাঁকিয়ে গুহার মেঝেতে একটু সময়ের জন্য ঠেকালো। তারপর আবার ডানা দুটি স্বাভাবিক অবস্থায় এনে মাথা ঈষৎ ঝুঁকিয়ে বলল, এ সবুজ পাখির দ্বীপের অধীশ্বর আপনার আদেশে আমি ভিনদেশী কে আপনার সামনে নিয়ে এসেছি ।এই ভিনদেশী কিন্তু যে সে নয়। উনি হাসিখুশি দ্বীপের রাজকন্যা রত্নমালা। উনি এক অদ্ভুত সাদা রংয়ের পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চেপে এখানে এসেছেন।ওঁর সঙ্গী আরও কেউ একজন আছে। তাকে আমি চোখে দেখিনি কিন্তু তার কন্ঠস্বর শুনেছি। সেই অদৃশ্য কন্ঠ সম্ভবত এই গুহাতে ও প্রবেশ করেছে আমাদের সঙ্গে।

সোনালী ঈগলের কথা শেষ হতে না হতেই অদৃশ্য কন্ঠ বলে উঠল, হ্যাঁ, আমি আছি।হে সেনাপতি ঈগল ,আমি তো আগেই আপনাকে বলেছিলাম যে ,আমি সব সময়ে রাজকন্যা রত্নমালার সঙ্গে থাকি। ধূসর পাথরে উপবিষ্ট হে সবুজ পাখির দ্বীপের রাজা, আপনি আমার নমস্কার গ্রহণ করুন । আমার অনুমান গাছের উপরে তৈরি ছোট্ট নীড়ে বসে আছেন সবুজ পাখির দ্বীপের রানী । আমি তাকেও আমার নমস্কার জানাই । এবারে দয়া করে বলুন আপনাদের সেই ভয়ঙ্কর সমস্যার কথা যা ভেবে সমস্ত পাখিরা চিন্তিত, বিষন্ন।।

সবুজ পাখির দ্বীপের রাজা বলল, হে অদৃশ্য কণ্ঠ, আমি আপনাকে এবং রাজকুমারী রত্নমালা কে আমার রাজ্যে স্বাগত জানাই । সত্যিই আজ এক ভয়ঙ্কর বিপদের সম্মুখীন হতে চলেছি আমরা । এই বিপদ শুধু আজ নয় বিগত সাত বছর যাবৎ প্রত্যক্ষ করছি আমরা। সেই সমস্যা সবুজ পাখির দ্বীপের রাজপরিবারকে অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে । আমরা বারবার আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেও সেই বিপদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছি, ব্যর্থ হয়েছি আমার বংশ কে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে।আজ আবার সেই ভয়ংকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা। আর তাই আমি আপনাদের সাহায্য প্রার্থী।
অদৃশ্য কণ্ঠ বলল, হে সবুজ পাখির দ্বীপের রাজা,আমি সম্ভবত আপনার রাজ্যের ভয়ঙ্কর সমস্যার কথা কিছুটা অনুমান করতে পেরেছি।
বিস্মিত পক্ষীরাজ বলল, সত্যি আপনি অনুমান করতে পেরেছেন? কি অনুমান করেছেন যদি একটু জানান তো ভালো হয়।
—– গাছের উপরে নীড়ে সবুজ পাখির দ্বীপের রানী অবস্থান করছেন। আমার ধারনা উনি অন্ড
প্রসব করে তা দিচ্ছেন। ওই অন্ডের ভিতরেই আছে আগামীদিনের সবুজ পাখির দ্বীপের রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী। নির্দিষ্ট সময় তা দেওয়ার পরে ওই অন্ডটি ভেদ করে পৃথিবীর আলো দেখবে সে। কিন্তু সম্ভবত এই সবুজ পাখির দ্বীপ রাজ্যের কোন শত্রু সেই সময় টুকু দেয় না। সে ধ্বংস করে সম্ভাবনাপূর্ণ অন্ডকে।
—— একদম ঠিক বলেছেন হে অদৃশ্য কন্ঠ।
—– আমি আরো অনুমান করি যে,সেই শত্রু কোন সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী।
—– এই অনুমান ও একদম ঠিক। খুব ভয়ঙ্কর সেই সরীসৃপ। আমরা আমাদের সমস্ত বাহিনী নিয়ে, এমনকি সেনাপতি তীক্ষ্ণ চঞ্চু সোনালী ঈগল এর সাহায্য নিয়েও প্রতিহত করতে পারিনি সেই তিন মাথাওয়ালা ভয়ঙ্কর নাগ কে। প্রতিবছর পক্ষী রানী ডিম পাড়ার পর দশম দিনে হাজির হয় সে এবং সমস্ত বাধা তুচ্ছ করে ধ্বংস করে ডিম। এবছর পক্ষী রানী একটি বৃহৎ সবুজ রঙের অন্ড প্রসব করেছেন এবং নিয়মমাফিক তা দিয়ে চলেছেন। আজ সেই ভয়ঙ্কর দশম দিন।
—– হে পক্ষীরাজ, ওই ভয়ঙ্কর তিন মাথাওয়ালা নাগ কি গুহার মাথার ওই ছিদ্র দিয়ে এই গুহার ভিতরে প্রবেশ করে?
——- কি করে জানলেন আপনি?
——- এটাও অনুমান মাত্র।
বিস্মিত সোনালী ঈগল বলল, হে অদৃশ্য কণ্ঠ, ধন্য আপনার অনুমান শক্তি। আমার দৃঢ়বিশ্বাস এই যে, আপনারাই পারবেন সবুজ পাখির দ্বীপের এই পক্ষী রাজার পরিবারকে অভিশাপ মুক্ত করতে।
অদৃশ্য কণ্ঠ বলল, আমরা ভগবান নীলকণ্ঠের আশীর্বাদ নিয়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সেই ভয়ঙ্কর সরীসৃপ কে প্রতিহত করতে পারব আশা করি ।তবে তার পূর্বে কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।