বই ও জীবনচর্যায় শমীক সেন

শ্রী অরবিন্দর Renaissance in India: একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা

শ্রী অরবিন্দ সম্ভবতঃ তাঁর Renaissance in India বইতে ঔপনিবেশিকতার ইতিহাসের তিনটি পর্যায়ের কথা লিখেছিলেন। প্রথম পর্যায়ে উপনিবেশের শাসিত জনগণ শাসকের জাতিগত ও সাংস্কৃতিক শ্রেষ্ঠতার বানিয়ে তোলা গল্পটি এতো চমৎকারভাবে চেটেপুটে খান ও হজম করেন যে আহারে বিহারে চলনে বলনে শাসকের মতো হয়ে ওঠাই তখন তাদের কাছে জীবনের একমাত্র সার্থকতার মূর্তি ধারণ করে। এর পরবর্তী পর্যায়ে প্রায় একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে যায় ঔপনিবেশিক সম্পর্কের রূপ। শাসিত শাসকের সংস্কৃতি তথা জীবনচর্যার সমস্ত উপাদানকে চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করে এবং তার দেশীয় সংস্কৃতি ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় ভেবে প্রশ্নহীনভাবে মাথায় তুলে নেয়। এই নির্বিচার গ্রহণ ও প্রশ্নহীন বর্জনের পর্ব অতিক্রম করে যে পর্যায়টি উঠে আসে সেটি হোলো সৃজনশীল সমন্বয়সাধনের সাধনা। এই সাধনা ঔপনিবেশিক সংস্কৃতি ও দেশীয় ঐতিহ্যের যুক্তিপূর্ণ বিচারবিশ্লেষণের মাধ্যমে একরকম সমন্বয়ী সংস্কৃতির নির্মাণ করে যাতে দুটি সংস্কৃতিরই ইতিবাচক উপাদানগুলি বিদ্যমান।
উত্তর ঔপনিবেশিক সময়ের নিয়তিই হোলো ঔপনিবেশিক ইতিহাসের আঁচড় তার শরীরে বহন করা। আমাদের অতীত আমরা নির্বাচন করতে পারিনা, কিন্তু পুনরাবিষ্কারের চেষ্টা করতে পারি। আমি চাইলেও এখন প্রাকঔপনিবেশিক অবস্থায় ফেরত যেতে পারি না, এমনকি ইংরেজি মাসের নাম না লিখে বাংলা মাসের নাম, তারিখ ইত্যাদি ব্যবহার করলেও আমি আমার চেতনা থেকে, মনের ত্বক থেকে ইতিহাসের দাগগুলো মুছে ফেলতে পারি না, কারন আমার বর্তমান আমার অতীতের সব চিহ্ন বহন করে চলেছে। কবিতার ক্ষেত্রেও তাইই। ইংরেজ এসেছে, দুশো বছর থেকেছে এবং ঔপনিবেশিক সংস্কৃতির কলে আমাদের সত্তা নির্মিত হয়েছে। প্রাকঔপনিবেশিক সত্যও ঔপনিবেশিক শিক্ষার নিরিখে যাচাই করা হয়েছে। ফলে ইংরেজ হুস এই বললেই ওটা মাথা থেকে টুপ করে ঝরে যাবে না। যেমন আমাদের আমিত্বের ধারনা, আমাদের এ আমির আবরণ, ঔপনিবেশিক সংস্কৃতির কারখানায় এই আমির লালন পালন। কাজেই শিবনেত্র হয়ে পোজ মেরে বৈরাগ্যসাধনায় আদাজল খেয়ে লেগে গেলেই কাল থেকে এই আমির হাত থেকে মুক্তি মিলে যাবে না এবং ভাষাকে, শৈলীকে, কথনভঙ্গিকে যত সচেতনভাবেই প্রাকঔপনিবেশিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করি না কেন, ভাষা জলের মতো, একটি অবাধ্য প্রবাহের মতো সামনের দিকে বয়ে যাবে, যাবেই।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।