সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব – ২০)

দেবমাল্য

ড্রাইভারকে বলল, কোনও মহিলাকে যদি ভারী কোনও লাগেজ কিংবা ছোট ছোট অনেকগুলো ব্যাগ নিয়ে নামতে দ্যাখো, জিজ্ঞেস করবে তো, তার নাম তানিয়া কি না। যদি তানিয়া হয়, তা হলে হাতে হাতে একটু নামিয়ে নিয়ো তো। কোন গেট থেকে নামবে, তাও তো বুঝতে পারছি না। কী মেয়ে রে বাবা, জানে আমি স্টেশনে আসব। স্টেশনে আসা মানে তো শুধু তার জন্য টিকিট কাউন্টারের সামনে হাত-পা গুটিয়ে চুপচাপ অপেক্ষা করা নয়। প্ল্যাটফর্মে এসে তার লাগেজটাও তুলে নেওয়া। এটুকুও বোঝে না! জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে ডাকতেও তো পারে।

ড্রাইভারকে বলল, তুমি এখানে দাঁড়াও, আমি বরং ভেতরে গিয়ে একবার দেখে আসি। বলেই, যারা ওঠার জন্য দরজার কাছে জটলা করে ধাক্কাধাক্কি করছিল, ও তড়িঘড়ি তাদের মধ্যে ঢুকে গেল।

ভেতরে গিয়ে দেখে তেইশ নম্বর সিটে আট-দশ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে বসে আছে। দেবমাল্য তাকে জিজ্ঞেস করল, এখানে যে ভদ্রমহিলা বসে ছিল, সে কোন দিকে গেছে দেখেছ?

তার কথা শুনে মেয়েটা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। কিচ্ছু বলছে না দেখে সে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। তানিয়া কোথায়! সামশের বলেছিল, তানিয়ার সামনের সিটে যে বয়স্ক ভদ্রলোক আছেন, তিনি একটু পরেই বাঙ্কে উঠে যাবেন। তা হলে তো তার এখন বাঙ্কে শুয়ে থাকার কথা!

ও ওপরে তাকাল। দেখল, বাঙ্কে কেউ নেই। সিলিং পাখার হাওয়ায় শুধু চার ভাঁজ করা একটা পুরনো খবরের কাগজের দু’তিনটে পাতার কোণ তিরতির করে কাঁপছে।

ওকে ছটফট করতে দেখে পেছনের ছ’সিটের খোপ থেকে একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ বলে উঠলেন, আপনার সিট নম্বর কত?

ও বলল, সিট নম্বর নয়, এখানে একজন ভদ্রমহিলা ছিল, তাকে খুঁজছি।

— ভদ্রমহিলা? হ্যাঁ, এখানে একজন ভদ্রমহিলা ছিল তো। আমি তাকে একটু আগেও দেখলাম। কিন্তু… এ সিটটা তো অনেকক্ষণ থেকে ফাঁকা। জানালার ধার তো, আমার মেয়ে তাই ওটায় বসার জন্য ঘ্যানঘ্যান করছিল। তাই ফাঁকা দেখে ওকে বললাম, যা ওখানে গিয়ে বস। তা, তার কোথায় নামার কথা?

— এই তো এখানে।

— তা হলে দেখুন হয়তো নেমে পড়েছে।

— আমি তো গাড়ি আসার আগে থেকেই তার জন্য প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সে নামেনি।

— সে কী!

‘সে কী!’ শব্দটা বলার সময় লোকটার চোখ-মুখ এমন পাল্টে গেল যে, সেটা দেখে কোনও এক অজানা ভয়ে দেবমাল্য একেবারে আঁতকে উঠল। ওর মনে হল, হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। দু’ধারের সিটের মাঝখানের এই প্যাসেজ দিয়ে যাতায়াতের সময় কেউ যদি তাকে ধাক্কা নয়, সামান্য একটু ছুঁয়েও যায়, সে নির্ঘাত পড়ে যাবে। পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবে। চোখের সামনে ঝাপসা হতে হতে একদম অন্ধকার হয়ে গেল সব।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।