ভ্রমণে রোমাঞ্চ ধারাবাহিকে সমীরণ সরকার (পর্ব – ১১)

তীর্থভূমি বীরভূম, ভ্রমণ তীর্থ বীরভূম

খ্রিষ্টীয় আঠারো শতক থেকে উনিশ শতকের শেষ অবধি নির্মিত এই মন্দিরগুলি প্রচুর সংখ্যায় নির্মিত হওয়ার কারণে স্থানীয় স্থপতিদের হাতে পড়ে ভিন্ন ভিন্ন গঠনের হয়েছে। কোথাও কোথাও শিখর মন্দির গুলির মধ্যে বরণ্ড অংশটিতে বাঁকানো কার্নিশযুক্ত এক অন্য শৈলী লক্ষ্য করা যায়। বীরভূম জেলার শিখর মন্দির শৈলীর মধ্যে যে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায় তা হল মন্দিরের বরণ্ড অংশ ছাড়াই সুষম বক্ররেখা ক্রমশ ঊর্ধ্ব গতিতে একটি বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। এই জাতীয় মন্দিরের উদাহরণ হল, বীরভূমের কবিলাসপুরে ধর্ম মন্দির ও ভাণ্ডীরবনের ভাণ্ডীশ্বর মন্দির। বীরভূম ও বর্ধমান জেলায় এই ধরনের বহু মন্দিরের ‘বরণ্ড’ থেকে ‘বেকি’ অংশ খুব ঘন খাঁজ কাটা সমান্তরাল বেষ্টনীযুক্ত। বর্ধমান জেলার কালনার ‘প্রতাপেশ্বর শিব মন্দির’ (১৮৪৯ খ্রীঃ) এবং বীরভূম জেলার ইলামবাজারের শিব মন্দির(আঃ উনিশ শতক) এই ধরনের মন্দির।

২)পীঢ়া রীতি:-
এই রীতির মন্দিরের বিকাশ উড়িষ্যায় বহুল পরিমাণে দেখা গেলেও ঢাকার আশরফপুরে প্রাপ্ত এক ব্রোঞ্জ চৈত্যে ( খ্রিস্টীয় সাত আট শতক) উৎকীর্ণ পীঢ়া মন্দিরের প্রতিকৃতি দেখা যায়।
পশ্চিমবাংলার বাঁকুড়া মেদিনীপুর জেলার নানা স্থানে প্রতিষ্ঠিত শিখর মন্দিরের জগমোহন হিসেবে যুক্ত হয়েছে পীঢ়া রীতির স্থাপত্য।
এই শৈলীর অন্তর্ভুক্ত মন্দিরটির আচ্ছাদন সাদ প্রস্তুত করা হত দৃঢ়বদ্ধ এক পিরামিড আকৃতির
বহিঃরেখার ভিতর এবং এই সুনির্দিষ্ট বহিঃরেখা সৃষ্টির জন্য দেওয়ালের উপর থেকে কতকগুলি চাল উপরের দিকে সিড়ির মত ধাপকাটা অবস্থায় ক্রমশ ছোট হতে থাকে।
শিখর ও পীঢ়া রীতির জন্মসূত্র এক। সুতরাং এই মন্দিরের স্থাপত্যটি ও শিখর নির্মাণের কৌশলের মতই বাঢ়,গণ্ডী ও মস্তক অংশে বিভক্ত । তফাৎ শুধু এটাই হলো যে, এই ধরনের মন্দিরের স্থাপত্যকর্ম গড়ে ওঠে পিরামিড আকৃতির আচ্ছাদন ছাদ তৈরি করে, যেটার চারদিকে সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে ক্রমে ক্রমে ছোট হয়ে উপরের দিকে ‘বেকি’ পর্যন্ত উঠে যায়।
এটার ‘বাঢ়’ অংশ হয় শিখরের মতই,’ পঞ্চাঙ্গ’ এবং সেইমত ‘রথপগ’ বিন্যাস যুক্ত।
শিখর ছাড়া শুধুমাত্র এককভাবে নির্মিত ঝামা পাথরের পীঢ়ারীতি মন্দির গুলির অধিকাংশের অবস্থান মেদিনীপুর জেলায়।
বর্ধমান জেলার দেবীপুরে ( থানা: কুলটি) কল্যাণেশ্বরীর পাথরের পীঢ়া দেউলটি(আঃ খ্রি ১৬ শতক) এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য।

(৩) চালা মন্দির স্থাপত্য রীতি:-
চালা মন্দিরের সর্ব প্রাচীন নিদর্শন মেলে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে সারনাথ প্যানেলে। একটি প্রস্তর স্তম্ভের খোদিত ভাস্কর্যে দোচালা কুটিরের আদলে গঠিত জোড়বাংলার যথাযথ প্রতিরূপ সম্পর্কে অদ্রীশ বন্দ্যোপাধ্যায় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তাছাড়া খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সগৌড়া তাম্র পটে উৎকীর্ণ ব্রাহ্মী লিপি সহ যে আটচালা মন্দিরের প্রতিকৃতি খোদিত আছে, তা থেকে অনুমান করা যায় যে অতীতেও এই রীতিবিশিষ্ট মন্দিরের প্রচলন ছিল।
খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে সাঁচীর একটি ফলকের নিম্নভাগে দক্ষিণ পার্শ্বে দৃশ্যমান চালাকুটির সমতুল্য বহু সংখ্যক কুটির বঙ্গদেশে ও মালাবার প্রদেশের নানাস্থানে পরিদৃষ্ট হয়। বৌদ্ধ গ্রন্থে চালা মন্দিরের উল্লেখ আছে, —‘In Sanchi and Barhut are found ample miniature replicas of huts made with bamboos.Mahavagga and Cullavagga ,the Buddhist records of the second Century B.C.,give a list of the then prevalent temple types of which Ardha yoga was one;and it belonged to Bengal.Ardha yoga may be identified with the hut type.’
স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শৈলীর নিরিখে প্রাচীনকালে চালা মন্দিরের নিদর্শন দেখা গেলেও হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলের কয়েকটি স্থানে ও বঙ্গদেশ ব্যতীত অন্যত্র চালা মন্দিরের বিশেষ প্রভাব ছিল না। বাংলাদেশে চালা মন্দিরের নির্মাণের জন্য কেবলমাত্র জলবায়ু বা আবহাওয়াকে প্রধান কারণ বলা যায় না। প্রথমত রাজকীয় ও ধনী ব্যক্তিগণের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বহুলাড়া, সাত দেউলিয়া বা বরাকরের ন্যায় উচ্চ শিখরযুক্ত মন্দির প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর ছিল না। মধ্যযুগে রাঢ়ের পশ্চিম অঞ্চলে যে কয়েকটি মন্দির স্থাপিত হয়েছিল তার মধ্যে শিখরভের রাজাদের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হয়। গোপ ভূমের সদগোপ রাজারাই তৈরি করেছিলেন ইছাই ঘোষের দেউল।
বাংলার মন্দির স্থাপত্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এই চালা জাতীয় মন্দির নির্মাণ।

(ক) একচালা তথা তিন চালা,:–
গ্রামবাংলায় বাঁশ,খড় ইত্যাদি দিয়ে নির্মিত হয় চালা। এই চালা একচালা, দো চালা ,চারচালা আটচালা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের হয়।
গ্রাম বাংলার একচালা একটা উঁচু দেয়াল থেকে ঢালুভাবে নেমে আসে। সাধারণত মাটির চার চালা বা আটচালা ঘরের সামনের দাওয়া বা বারান্দা থেকে রোদ বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এই চালার প্রয়োজন হয়। কুরুক্ষেত্রে বাঙালি ঘরামী বা মিস্ত্রিদের হাতে পড়ে এই দু’পাশের অংশ ঢাকা দেওয়ার জন্য দুটি বাড়তি চাল সংযোগ করা হয়। ফলে সেটি হয়ে দাঁড়ায় তিনচালা।‌ এই ধরনের স্থাপত্যের মন্দির মেদিনীপুরের ডেবরা থানায় এলাকাধীন লোয়াদার রাধাগোবিন্দ মন্দিরের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে।
(খ) এক বাংলা বা দোচালা:— পশ্চিমবাংলায় গ্রামাঞ্চলে খড়ে ছাওয়া দোচালা রীতির সাধারণ কুটির অজস্র দেখা যায়। দোচলা কুঁড়েঘরের এই আদলটিকে মন্দির স্থপতিরা অনুসরণ করে সেভাবে রূপ দিয়েছিলেন দোচালা মন্দির নির্মাণে। এই শৈলীর মন্দির কে ‘এক বাংলা মন্দির ‘নামে অভিহিত করা হয়।
এই রীতির মন্দিরের আয়তাকার কুঠুরিযুক্ত চার দেয়ালের দুপাশে কারিগরি দক্ষতায় আয়তাকার দুটি আচ্ছাদন চাল নেমে আসে। কোথাও কোথাও সেই আয়তাকার চাল দুটির কার্নিশ ধনুকের মতো বাঁকানো হয়। হলে মন্দিরের উপরের দিকে দুটি চলার সংযোগস্থল রূপ নেয় ঠিক হাতির পিঠের মত বাঁকানো ধরনের। এই এক বাংলার রীতি মন্দিরগুলির ভিত্তি ভূমি আয়তাকার হলেও প্রবেশ পথ কোথাও এক দুই কোথাও বা দুটি স্তম্ভ বিশিষ্ট খিলানযুক্ত হয়।
এক দুয়ারী প্রবেশপথ যুক্ত এই রীতির মন্দির বর্ধমান জেলার মেমারি থানার আমাদপুর( আনুমানিক ১৮ শতক), বীরভূম জেলার মোহাম্মদ বাজার থানার গণপুর( আনুমানিক ১৮ শতক) ইত্যাদির উল্লেখ করা যেতে পারে।
(গ)জোড়বাংলা:-
দুটি দোচালার স্থাপত্যকে পাশাপাশি স্থাপিত করে নির্মিত মন্দির কে বলা হতো ‘জোড়বাংলা মন্দির’। দোচালা রীতির মন্দিরের উন্নত রূপ এই জোড় বাংলা মন্দির।’ এই শৈলীর অন্তর্ভুক্ত দুটি আয়তাকার দুচালা স্থাপত্যের সমান্তরাল অবস্থান শেষ পর্যন্ত মন্দিরের আসনটিকে বর্গাকারে পরিণত করে। জোড় বাংলার সামনের ত্রিখিলান প্রবেশপথের মাঝামাঝি পিছনের দেয়ালেও একটি ঘেরা দেওয়ালযুক্ত পথ রাখা হতো,যাতে পরবর্তী দোচালা কুঠরিতে প্রবেশ করা যায় এবং সেখানে অধিষ্ঠিত হতো মন্দিরের উপাসিত বিগ্রহ। অন্যদিকে এই মন্দির স্থাপত্যটিকে সুদৃশ্য করার জন্য বঙ্গীয় শিল্পীরা চালের উপর সম দূরবর্তী স্থানে প্রতিস্থাপন করতো তিনটি ক্ষুদ্রাকার চূড়া, যার ধরণটি হত অবিকল খোড়ো ঘরের মটকায় নিবদ্ধ প্রথাগত খড়ের আঁটর গোড়ার দিকের অংশের মতো।.. আবার কখনো কখনো দুটি দোচালার মধ্যবর্তী স্থানে নির্মাণ করা হতো চারচালা বা আটচালা অথবা নবরত্ন রীতির ক্ষুদ্রাকার স্থাপত্য সৌধ ‘।
বীরভূম জেলার ইটন্ডা গ্রামের( বোলপুর মহকুমা) কালী মন্দির( খ্রিস্টীয় উনিশ শতক), কালনার সিদ্ধেশ্বরী মন্দির(১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দ) এই রীতির মন্দির।
(ঘ)চারচালা:-
পশ্চিম বাংলার গ্রামাঞ্চলে সাধারণ মানুষের বসবাসের কুটির হিসেবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় চার চালার আচ্ছাদনযুক্ত মাটির বাড়ি।
‘ এই রীতির কুটিরের চারদিকের দেয়ালে নেমে আসে সম ত্রিভুজাকৃতি চারটি ঢালু চাল, যার নিচের বহিঃরেখাটি হয় ধনুকের মত বাঁকানো।
এই চারচালা কুটির আদলে বাঙালি স্থপতিরা
সেই রীতির মন্দির নির্মাণেও সচেষ্ট হয়েছেন। সে-মন্দিরের চারদিকের চালে নমনীয় বক্ররেখা টির বন্ধন এমনভাবে সৃষ্টি হয়েছে যা সৌন্দর্য বৃদ্ধির একান্ত সহায়ক।…. সাধারণত এই শ্রেণীর চার চালা মন্দিরের ভিত্তি ভূমি বর্গাকার এবং প্রবেশ পথ ওহয় এক দুয়ারি।’
বীরভূম জেলার ঘুড়িষার( থানা- ইলাম বাজার)
রঘুনাথ শিব মন্দির(১৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দ), উচ করনের
( থানা নানুর) চারটি শিব মন্দির, পাথরকুচি গ্রামের( খয়রাশোল থানা) পাথরের দক্ষিণা কালী মন্দির(১৬৮২ খ্রিষ্টাব্দ) এই রীতির মন্দির।
‘একদুয়ারি এই উদাহরণ ছাড়াও ত্রিখিলান প্রবেশপথ যুক্ত চারচালার দৃষ্টান্ত দেখা যায় হুগলি জেলার বাখরপুর গ্রামে( থানা পুড়শুড়া) এক পরিতক্ত মন্দির(আঃ খ্রিস্টীয় আঠার শতক) এবং মেদিনীপুর জেলার গোয়ালতোড়ে ঝামা পাথরের সনকার মন্দির(আঃ খ্রিস্টীয় ১৭ শতক) প্রভৃতি।
হুগলি ও মেদিনীপুর জেলায় কয়েকটি চারচালা মন্দির শিখর দেউল এর মত রথপগ বিন্যাস যুক্ত, যা একান্তই অভিনব।’
কিছু কিছু চার চালা মন্দির বেশ উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে,যেমন, বীরভূম জেলার ডাবুক( থানা ময়ূরেশ্বর )এর ডাবুকেশ্বর মন্দির(১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দ), নদীয়া জেলার শিব নিবাসের( থানা কৃষ্ণগঞ্জ) রাজেশ্বর শিব মন্দির(আঃ খ্রিস্টীয় ১৮ শতক) প্রভৃতি।

(ঙ) আটচালা:-
বাংলার আটচালা কুটির হল চারচালা কুটিরের পরবর্তী পর্যায়। বাংলার মন্দির স্থপতিরা আটচালা কুঁড়েঘর এর আদলে নির্মাণ করেছেন আটচালা রীতির মন্দির।’ শুধুমাত্র সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যই এই রীতি গত স্থাপত্যটির সৃষ্টি হয়নি; এর পিছনে ছিল নির্মাণ কৌশলগত চিন্তাভাবনা যা শিল্পীর কারিগরি কুশলতার যথার্থ রূপ পরিগ্রহ করেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, সেখানে দুর্গাপূজার স্থান হিসেবে যে দোচালা চন্ডীমণ্ডপ নির্মিত হতো তার সামনের চত্বরে স্থাপিত হতো এটি আটচালা মন্ডপ, যেখানে পুঁথি পাঠ ,কথকতা, নৃত্য গীত ইত্যাদি আসরে দর্শক ও শ্রোতারা সমবেত হতেন। চারচালা মন্ডপের বদলে কেন বাঁচতে শিল্পীরা এহেন আটচালা মন্ডপ তৈরি করতেন তারা এক যুক্তিগ্রাহ্য কারণ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। বহু শ্রোতার একত্রে বসার প্রয়োজনে নির্মিত এই মন্ডপ টি চারচালা হিসেবে তৈরি করতে গেলে তার আয়তন অনুযায়ী উপরের ছাউনির চালকে করতে হবে খুবই উঁচু এবং সেই উঁচু ও প্রশস্ত কাঠামোটিকে বাঁশ কাঠ দিয়ে হওয়ার ফলে তেমন সুদৃঢ় না হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাছাড়া উচ্চতা কমাতে গেলে খরচ হওয়া চালের জল গড়ানোয় অসুবিধা হতে পারে। এসব সুবিধা ও অসুবিধা বিবেচনা করে বাংলার বাস্তুশিল্পীরা উদ্ভাবন করলেন প্রথমে পরিকল্পনামতো বর্গাকার ভূমি নকশার মধ্যে উঁচু করে একটি চারচালা এবং পরে সেই চার চেলার সঙ্গে সমতা রেখে ও চালের সামান্য নিচু থেকে চারদিকে কাটা চাল জুড়ে দিয়ে আটচালা মন্ডপ। এক্ষেত্রে উপরের চারটি এবং নিচের আরো প্রসারিত চারটি সহ মোট আটটি চালের সমারোহের দরুন সেটি হয়ে ওঠে আটচালা স্থাপত্য।…….. অনুরূপ মন্দির স্থপতিরাও আটচালা মন্দির গঠনে নিচের চারটি ঢালু চালের উপর দ্বিতীয় স্তরে অপেক্ষাকৃত ছোট আয়তনের একটি চারচালা স্থাপত্য সংযোজন করেন।….. উল্লেখ করার বিষয়, এই রীতি প্রকরণের মন্দিরের ক্ষেত্রে উপরের ও নিচের চাল গুলির কার্নিশ হয় সাধারণত চার চলার মতই বাঁকানো এবং এই শৈলীর অধিকাংশ মন্দিরের গর্ভগৃহের সম্মুখভাগে দেখা যায় ত্রিখিলান যুক্ত দালান; আবার কোথাও সেই দালান ছাড়াই একদুয়ারি প্রবেশ পথ বিশিষ্ট হয়ে থাকে।’
পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন জেলায় অসংখ্য আটচালা মন্দিরের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।তবে আটচালা মন্দিরের সংখ্যাধিক্য দেখা যায় বর্ধমান রাজ প্রতিষ্ঠিত বর্ধমান জেলার নবাব হাট ও কালনায়। নবাব হাটের ১০৯ মন্দির(১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দ,) এবং কালনার ১০৯টি আটচালা শিব মন্দির(১৮০৯ খ্রিষ্টাব্দ) পাশাপাশি একই সম কেন্দ্রে পরপর দুটি বৃত্তাকারে সংস্থাপিত।
বীরভূম জেলার বোলপুর মহাকুমার সুরুল গ্রামের উত্তর প্রান্তের জোড়া শিব মন্দিরের একটি পঞ্চরত্ন ও অপরটি আটচালা টাইপের।

(চ) বারোচালা:-
গ্রাম বাংলার অনেক জায়গায আটচালার মত মত বারচালা কুটির দেখা যায় এবং মন্দির স্থাপতিরা তার অনুকরণে বারোচালার মন্দির তৈরি করেছেন।’ ভূমি নকশায় বারো চালার মন্দির আটচালার মতই বর্গাকার এবং আটচালার উপরিভাগে তৃতীয় স্তরে আরেকটি অপেক্ষাকৃত ছোট চারচালার নির্মাণ করে সেটিকে বারোচালার রূপ দেওয়া হয়।’
তবে এই রীতির মন্দিরের সংখ্যা পশ্চিমবাংলায় খুব কম দেখা যায়।
মুর্শিদাবাদ জেলার সাহানগর( থানা মুর্শিদাবাদ) গ্রামে এই রীতির মন্দির আছে।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।