ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৪৫)

সুমনা ও জাদু পালক

বানর সেনাধ্যক্ষ পাহাড়ের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার পরে সুমনা দেখল, ওর চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এখানে ওখানে বসে থাকা বানর গুলোর মধ্যে কেমন যেন চাঞ্চল্য দেখা দিল। ওরা দুধরাজকে দেখিয়ে নিজেদের মধ্যে কি যেন বলাবলি করছিল।
তিনটে অতি উৎসাহী বানর গুটি গুটি পায়ে দুধরাজের পিছন দিকে এসে কি যেন পর্যবেক্ষণ করছিল। দুধরাজ বিরক্ত বোধ করে এদিক ওদিক করে স্থান পরিবর্তন করছিল। আর মাঝে মাঝে গলা দিয়ে বিরক্তি সূচক আওয়াজ বের করছিল। বানরগুলোর তবু যেন কৌতূহলের সীমা ছিল না। ওরাও দুধরাজের পিছু ছাড়ছিল না। এই বিষয়টা দুধরাজকে বুঝি খুব অসহিষ্ণু করে তুলেছিল। হঠাৎ দুধরাজ রেগে গিয়ে পিছনের পা দিয়ে এমন একটা লাথি মারল একটা বানরকে যে, সে প্রায় হাত পাঁচেক দূরে গিয়ে ছিটকে পরল। সঙ্গীর এই অবস্থা দেখে বাকি বানর দুটো চোঁচা দৌড় মেরে হাতের কাছে যে গাছ ছিল, তাতে উঠে পড়লো।
বাকি বানরগুলো যারা দূর থেকে এই ঘটনাটা বেশ উৎসাহ নিয়ে দেখছিল, তারা ওদের সঙ্গী বানরটিকে হঠাৎ করে ছিটকে পড়তে দেখে প্রথমে বুঝতে পারেনি ব্যাপারটা।তারপর পুরো বিষয়টা বুঝতে পেরেই হো হো করে হেসে উঠলো একসঙ্গে।হাসছিল উপস্থিত বাকি তিন
সেনাধ্যক্ষ ও।
মজা পাচ্ছিল সুমনা ।হঠাৎ যেন কোন অদৃশ্য মন্ত্র বলে সবাই মাঝপথে হাসি থামিয়ে সমস্বরে বলে উঠলো, “জয় বানররাজ মহাগ্রীবের জয়। ”
বিস্মিত সুমনা ঘাড় ঘুরিয়ে পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল,সেনাধ্যক্ষ প্রাচী একটা রক্তবর্ণের পতাকা হাতে বেরিয়ে আসছে পাহাড়ের মুখের সেই দরজা থেকে। আর ঠিক তার পিছনে রাজমুকুট মাথায় বলিষ্ঠ চেহারার দীর্ঘদেহী এক বানর।তাঁর পাঁচটি মাথা। সুমনা বুঝতে পারলো যে পাঁচ মাথাওয়ালা ওই বানরটিই বানর রাজ মহাগ্রীব।
‌‌ ওরা দুজনেই এসে দাঁড়ালো দুধরাজের সামনে। প্রাচী সুমনার সামনে দাঁড়িয়ে একটু মাথা ঝুঁকিয়ে বলল, ” হে রাজকুমারী রত্নমালা, বানর রাজ মহাগ্রীব স্বয়ং এসেছেন আপনাকে সসম্মানে রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
প্রাচী আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল।
বানর রাজ মহাগ্রীব হাত তুলে থামতে ইশারা করলেন প্রাচীকে। তারপর হাতজোড় করে বললেন, “হাসিখুশি দ্বীপের রাজকুমারী রত্ন মালাকে বানর রাজ্যে স্বাগত জানাই। আপনি যে আমার রাজ্যে পা রেখেছেন তার জন্য আমি ধন্য, বানর রাজ্য ধন্য। বানর রাজপ্রাসাদে আসার আমন্ত্রণ জানাই আপনাকে।”
অদৃশ্য কন্ঠ বলল, “বানর রাজ মহাগ্রীব, রাজকুমারী রত্নমালা কিন্তু দুধরাজের পিঠে চেপেই রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করবেন। মহামান্য বানর সেনাধ্যক্ষ প্রাচী এই বিষয়ে আপনার অনুমতি প্রার্থনার জন্য রাজপ্রাসাদে গেছিলেন।”
——- আমার এই বিষয়ে কোন আপত্তি নেই। আসুন রাজকুমারী রত্নমালা।
সমস্ত বানরেরা উল্লেখিত হয়ে সমস্বরে বলে উঠলো,” জয় বানর রাজ মহামতি মহাগ্রীবের জয়।”
বানর রাজ মহাগ্রীব সামনে এগিয়ে চললেন। তার পিছনে চলল দুধরাজের পিঠে চেপে সুমনা আর তারও পিছনে বানর সেনাধ্যক্ষ প্রাচী ।

পাহাড়ের অভ্যন্তরে প্রবেশ করল ওরা।
সুমনা ভেবেছিল যে, পাহাড়ের ভিতর হয়তো অন্ধকার হবে। কিন্তু পাহাড়ের ভিতরটা যথেষ্ট আলোকিত। এগিয়ে যাওয়ার পথ যথেষ্ট প্রশস্ত। দুপাশে দন্ডায়মান অসংখ্য পাথরের মূর্তি। মূর্তিগুলোর ডান হাত প্রসারিত হয়ে পাহাড়ের গায়ে লেগে আছে। আর সেখানে এমন কোন কারিগরি করা আছে যে, সেই প্রসারিত করতলের ফাঁক দিয়ে বাইরের আলো চুঁইয়ে আসছে।
বেশ কিছুটা যাওয়ার পর বানর রাজ যেখানে দাঁড়ালেন, সামনে একটা মস্ত দরজা। বানর রাজ প্রাচীকে ইশারায় কিছু বললেন। প্রাচী এগিয়ে এসে ওর হাতে ধরা রক্তবর্ণের পতাকা সামনের দরজায় ছোঁয়ানো মাত্র কোথায় যেন ঘণ্টাধ্বনি হতে থাকলো। সেই আওয়াজ একটু বাড়তেই সামনের দরজা খুলে গেল।
বানর রাজ মহাগ্রীব এবার সুমনার সামনে হাত জোড় করে বলল, “আমরা এখন যেখানে যাব, সেটা একটা মন্দির। সেখানে এই অশ্বের পিঠে
চেপে যাওয়া সম্ভব নয়। তাহলে রুষ্ট হবেন মন্দিরের দেবী মাতা।”
অদৃশ্য কন্ঠ বললো, ঠিক আছে। মন্দিরের অভ্যন্তরে রাজকুমারী রত্নমালা হেঁটেই যাবেন।
সুমনা দুধরাজের পিঠ থেকে নিচে নামলো। তারপর বানর রাজের পিছনে দরজা পেরিয়ে ভিতরে ঢুকলো।
ভিতরে ঢুকে যে দৃশ্য সুমনা দেখতে পেল তাতে সবিস্ময়ে সে চিৎকার করে উঠলো,ওটা কী?

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।