নিঝুম পরিবেশে একা বসে থাকার একটি মাদকতা আছে। চুপ করে বসে আছি, একটি দুটো পাখি ছাড়া কোনো সাথী নেই। সামনে বিকেল নেমে আসছে মেঘের ওড়না গায়ে পাহাড় বেয়ে। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর বড়ো রা এসে ডাক দিলো… চল ঘুরে আসি। আমিও এক পায়ে খাড়া। সবার সাথে বেড়িয়ে পড়লাম।
ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। কয়েক পা এগিয়েছি.. হঠাৎ মনে হলো গায়ে মাথায় কি সব পড়ছে। চোখ তুলে তাকাই… আরে এই তো। পেঁজা তুলোর মতো বরফ, ঝরে পড়ছে। কি আনন্দ। পরবর্তীতে অনেক জায়গায় স্নো ফল পেয়েছি, সেবারের মতো আনন্দ আর কখোনো পাইনি। হয়তো প্রথম বার বলেই বা। ক্রমে বরফ ঝরার মাত্রা বাড়লো। আমরা আর দৃকপাত না করে আমাদের আস্তানায় ঢুকে পড়লাম। বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনিমেষ নয়নে দেখে চললাম বরফ সজ্জিত চারপাশ। আমাদের কেয়ারটেকার এসে তাড়া দিলেন। আমরা ঘরে ঢুকতেই দেখি একরাশ কাঠ রাখা মেঝেতে। একি এগুলো কি হবে? দেখালেন ঘরের এক কোনায় ফায়ার প্লেস। আগুন জ্বালিয়ে ঘর গরম করা হবে।
বাঃ এটাও নতুন অভিজ্ঞতা। আগে খালি মুভিতেই দেখেছি। তাড়াতাড়ি ডাল রুটি খাইয়ে, আগুন জ্বালিয়ে তিনি বিদায় নিলেন। আমরা এক একজন সোয়েটার পরা অবস্থাতেই পাঁচ পাঁচটি কম্বল জড়িয়ে শুয়ে পড়লাম। ঢালা বিছানা, প্রথমে বাবা, তারপর আমি, আমার পাশে জেঠি, একদম সাইডে জেঠু। জেঠির শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল, একদম নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে। বাইরে তখন অঝোরে বৃষ্টি আর ঝড়। এক একটা ঝড়ের ধাক্কা লাগছে, আর আমাদের আস্তানা কেঁপে কেঁপে উঠছে। মনে হলো যেন লরি এসে ধাক্কা মারছে। ভয় লাগছিল সবার। ঘড়ি দেখলাম। সবে সন্ধ্যা সাতটা। শুরু হলো এক অনন্ত রাত্রের পদচারণা।