ধারাবাহিক ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন – ৭৯

ফেরা
আমি বা আমার সাথীরা যেমন কোলকাতার এক ট্রাভেল এজেন্সির সাথে এসেছি, মহারাষ্ট্রের তীর্থযাত্রীরাও তেমন মুম্বাইয়ের এক ট্র্যাভেল এজেন্সির সাথে এসেছেন। কিন্তু দুটো দলের ব্যবস্থা আর আউটলুকে আকাশ পাতাল পার্থক্য। প্রথম ওদের টাকার অংক অনেক বেশী। আমাদের যেখানে পার হেড দশ হাজার টাকা, ওনাদের আঠারো হাজার টাকা। ট্যুর আইটিনারি শুনে বুঝলাম আমাদের যাত্রাপথ এক। কিন্তু আউটলুকে ওরা আমাদের গুনে গুনে দশ কি তার থেকে বেশী গোল দেবে। প্রতি যাত্রীর গলায় মালার মতো ঝুলছে আইডি কার্ড, তাতে যতটা সম্ভব ঠিকুজি লেখা। প্রতিটি যাত্রীর আলাদা করে মেডিকেল ইন্সুরেন্স করানো। দলের সাথে আলাদা গাইড। তারা সব কটি জায়গার যথাযথ বিবরণ পেশ করছেন। যেমন ধরুন, ওনাদের সাথে আমাদের দেখা হয়েছে শঙ্করাচার্যের সমাধির সামনে। এখন কে উনি, বা কি ওনার অবদান, সেটি গাইড পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ওনাদের বোঝাচ্ছেন। আমাদের দলের কথা তো ছেড়েই দিলাম, বাকি যে বাঙালি ট্যুর এজেন্সি এসেছে, তারা কেউ এর ধার ধারছে না। প্রতিটি দলে কেউ না কেউ কিছু পড়াশোনা করে এসেছে, তারাই ওখানকার হোতা। আমাদের দলে যেমন আমি। দলের কেউ কেউ জানতে চাইলে বলছি, বাকিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই জিনিসটা আমার বরাবর খারাপ লেগে এসেছে। যেখানে যাবো সেখানে গিয়ে যদি নাই জানলাম, তাহলে গেলাম কেন?
আরো আছে। বাঙালীরা যেটা বরাবর চেয়ে এসেছে, বেড়াতে গিয়েও ঘরকা খানা। ডাল, ভাত তরকারি লুচি মাংস ইত্যাদি। যেখানে গেলাম সেখানকার লোকাল কুইজিন ট্রাই করবো না? ঐ মহারাষ্ট্রের দলটির কাছে জেনেছিলাম, একদিন অন্তর ওদের লোকাল খাবার খাওয়ানো হচ্ছে, এবং ওনারা সেটা রীতিমতো উপভোগ করছেন। হ্যাঁ, ঐ দলেও যে ঝামেলাবাজ নেই তা নয়, তবে তারা সংখ্যালঘু বলে কেউ তারা পাত্তা পাচ্ছেন না।
সেদিন ঐ সমাধিতে দাঁড়িয়ে একটি পরিস্কার আমরা ওরা সমীকরণ পরিস্কার হয়ে গেছিল। যেটির আরেক রুপ দেখেছিলাম, এই যাত্রার শেষে, হরিদ্বার ফিরে। কিন্তু সে কথা ক্রমশ প্রকাশ্য।
যাইহোক, মারাঠা তীর্থযাত্রীদের সাথে বেশ কিছু সময় গল্প করে যখন বেরোলাম, তখন সুয্যিমামা অস্তগামী। কেদার ডোমের চূড়ায়, অস্তগামী সূর্যের আভা এক অপরুপ রুপ ধারণ করেছে। মনে হয় যেন তাল তাল সোনা, গলে গলে পড়ছে।