ধারাবাহিক ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন – ৯০

 

মাঝে মাঝে কিছু দিন আসে, যেদিন শারীরিক ধকল প্রচন্ড হয়, কিন্তু মন ও মগজের এতোটাই প্রাপ্তি ঘটে যে ধকল কে তুচ্ছ মনে হয়। আজ সেরকমই এক দিনের রোজনামচা আপনাদের সামনে।

আমার বন্ধু সোনালী, পেশায় স্থাপত্যবিদ, ইদানীং ওর একটা থিসিস প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে, যার বিষয় হলো চন্দ্রকেতুগড়ের আর্বান ডিজাইনিং। আজ ওর ওখানে যাবার কথা ছিলো। ওর সাথে আমিও ঝুলে পড়লাম। এমনিতেই ইতিহাস বিষয়ক তথ্য আমাকে খুব টানে, তাছাড়া পাশেই চাকলা, ব্রহ্মচারী লোকনাথ বাবার ধাম। বহুকাল বাবার দর্শন হয়নি, তাই ওখানেও ঘুরে পুজো দেওয়া মনস্হ করলাম। আজ সকালবেলা, বেলা পৌনে আটটা নাগাদ মিট করে বেরিয়ে পড়লাম দুজনেই। প্রথমে অটোতে যাদবপুর, সেখান থেকে ট্রেনে শিয়ালদহ হয়ে হাসনাবাদ লাইনের হাড়োয়া স্টেশন। সোনালীর পরিচিত টোটোয়ালা হবিবুর ভাই ওর ফোন পেয়েই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
যখন নামলাম, তখন আকাশের মুখ ভার। হাল্কা ঠান্ডা হাওয়াকে সাথী করে আমরা টোটোয় চড়ে বেরিয়ে পড়লাম। সবুজ মাঠ, ধানখেত আর আকাশের ঘন কালো মেঘ আমাদের সাথে চললো। প্রথমে, গড় অঞ্চল। ঘন শুঁড়ি পথ বেয়ে এগিয়ে একটা বিশাল বড়ো ঢিবি। আনুমানিক ৩০০০ বছরের পুরোনো। একসময়, এটি গঙ্গারিডি সাম্রাজ্যের অংশ ছিলো, সুদূর গ্রীস অবধি ব্যবসা বাণিজ্য চলতো। ঢিবির এদিকে ওদিকে ঘুরে আমাদের ছবি তোলা ও দেখা চলতে লাগলো। চারদিকে বহু প্রাচীন মহীরুহ, আমাদের মাথার ওপর চন্দ্রাতপ সাজিয়ে রেখেছিল।
হঠাৎই বৃষ্টি নামলো। প্রথম গাছ, তারপর ছাতার আশ্রয় নিয়ে আবার ফিরে আসা টোটোর ছাউনির নীচে। পরবর্তী গন্তব্য মিউজিয়াম। স্হানীয় স্কুল মাস্টার ও শখের প্রত্নতাত্ত্বিক স্বর্গীয় দিলীপ কুমার মৈতের আজীবনের সংগ্রহ, এখন রাজ্য সরকারের নিশ্চিন্ত ঘেরাটোপে। খুব যত্ন করে সেটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে দেখে ভালো লাগলো। এরপর খনা মিহিরের ঢিবি। তার পাশ দিয়েই চাকলা যাবার রাস্তা।
বেলা একটা নাগাদ মন্দিরে প্রবেশ করে মন ভরে পুজো দিলাম আমরা। তারপর কুপন কেটে দারুণ ভোগ পেলাম। ভেবেছিলাম, দেরী হয়ে গেছে, পাবো না। কিন্তু ভক্তের ডাক, বাবা ঠিক শুনলেন। পেট ভরে ভোগ খেলাম। খিচুড়ি, লাবড়া,পোলাও, সয়াবিনের সব্জি, কুলের চাটনি, পাঁপড় আর পায়েস। অনুদান ৭০ টাকা মাত্র। খেয়ে দেয়ে বাইরে এসে দেখলাম, মোটে দুটো বেজেছে। এতো কাছে এসে প্রাসাদ গ্রাম ধান্যকুড়িয়া যাবো না? অটো ধরে চললাম। প্রাসাদ গুলোতে ঢুকতে না দিলেও, বাইরে থেকে অনেক ছবি তুললাম। তৃপ্ত মনে কাঁকড়া মির্জা নগর থেকে ট্রেন ধরে দমদম, ওখান থেকে মেট্রো করে সোজা বাড়ি।
ক্লান্তি থাকলেও, মন তৃপ্ত। বড়ো ভালো কাটলো আজকের দিনটি।।।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।