ধারাবাহিক ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন – ৭৪

ফেরা

রুদ্রপ্রয়াগ থেকে আরো ঘন্টাখানেক লাগলো গুপ্তকাশী পৌঁছতে। আজকে এখানেই বাকি বেলা বিশ্রাম, পরেরদিন ভায়া গৌরীকুন্ড কেদারনাথ যাত্রা। যে হোটেল নেওয়া হয়েছিল, তা একেবারে মেন রাস্তার ওপরেই। তড়িঘড়ি নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। নীচে এসে চা খেয়ে যখন বেরোনোর জন্য তৈরী, তখন ঘড়ি বলছে বেলা পাঁচটা। আকাশে তখনও চড়া রোদ্দুর। কেউ না বললে বিশ্বাস করবে না, এখানে আসার পথে অতটা দুর্যোগের মুখে আমরা পড়েছিলাম।
দলের কয়েকজন মিলে হাঁটা লাগাই। কাছেই বাবা বিশ্বনাথের মন্দির। মহাভারত অনুসারে কুরুক্ষেত্রের পাপ ধুয়ে ফেলার জন্য, পান্ডবরা শিবের শরণাপন্ন হয়েছিলেন, শিব তাঁদের না দর্শন দেবার জন্য নন্দীর ছদ্মবেশে এখানে লুকিয়ে ছিলেন। পাহাড়ি রাস্তায় একদল ষাঁড়কে নামতে দেখে যুধিষ্ঠিরের সন্দেহ হয়, তখন ভীম গিয়ে রাস্তা আটকান। নন্দীর ছদ্মবেশে শিব তখন পাতাল প্রবেশ করে পাঁচ জায়গায় দেহের পাঁচ অংশ হিসেবে প্রকট হন, তাই পঞ্চ কেদার নামে খ্যাত। তার অন্যতম কেদারনাথে আগামী কাল আমরা যাবো। বিশ্বনাথ মন্দিরে এসে ভক্তিভরে নমো করি। জায়গাটি বেশ জমজমাট। ধূপ, ধুনোর ধোঁয়া আর আশেপাশের স্টল থেকে ভেসে আসা নানান ভক্তিগীতি মনকে আচ্ছন্ন করে তোলে। এখান থেকে একটু এগিয়ে অর্ধনারীশ্বর মন্দির। সেটিও দর্শন করে প্রসন্ন মনে রুমে ফিরি। একটু জিড়িয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
সাড়ে আটটায় খাবার ঘরে জমায়েত হয়। কাল অনেক ভোরে বেরোনো, নাহলে জ্যামে ফাঁসার সম্ভাবনা। ঠিক হয়, গৌরীকুন্ড পৌঁছে, ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে আমরা যাত্রা করবো। হাঁটার লোক কেউ নেই, যারা ঘোড়া নেবে তারা একসাথে, ডান্ডি, কান্ডির লোক একসাথে। সভা ভঙ্গ হয়, জলদি জলদি ডিনার সেরে কম্বলের তলায় ঢুকি।
বাইরে আবার বৃষ্টি নামে। হোটেলের টিনের শেডে তার গান শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি, মনে নেই। বেড টির আওয়াজে ঘুম ভাঙে, তাড়াতাড়ি উঠে ঘড়ি দেখি, ভোর চারটে বাজে। চা খেয়ে স্নানে যাই।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।