তখনকার রেল যাত্রা বেশ অন্যরকম ছিলো। কেউ তখন মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকতো না, একে অপরের সাথে বেশ মিলমিশ, আড্ডা, এক বৃহৎ পরিবার হয়ে উঠতো অল্প সময়ের মধ্যেই। আমাদের সেই যাত্রায় মনে আছে সাথী হয়েছিল উত্তর কোলকাতার দুই পরিযায়ী সংগঠন ও তার সদস্যরা। একটি সংগঠনের নাম মনে আছে সীমা, আরেকটি কালের গর্ভে বিলীন। এছাড়াও ছিলেন খড়গপুরের বেশ কিছু রেল কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারবর্গ। সবাই মিলে গপ্পো করতে করতে কখন যে ট্রেন জার্নি ফুরিয়ে এসেছিল, তা আমরা ঠাহর করতে পারিনি। তবে একটি বড়ো গন্ডগোল হয়েছিল। যে ট্রেন হরিদ্বার ঢোকার কথা ছিলো বিকেল সাড়ে চারটে, সেটি যখন হরিদ্বার ঢুকলো তখন রাত এগারোটা। পুরো শহর তখন ঘুমের দেশে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমাদের ঠিক ছিলো ভারত সেবাশ্রম সংঘে যাবার, কিন্তু অতো রাতে আর মহারাজ দের বিরক্ত করতে চাইনি। একটি বড়ো অটো ডেকে কাছেই একটা হোটেলে আমরা আশ্রয় নিয়েছিলাম। হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় শোয়া মাত্র ঘুম।
পরদিন সকাল। হোটেলের নীচের রেস্তোরাঁয় বসে গরম গরম আলুর পরোটা আর আচার খেতে খেতে তাকিয়ে ছিলাম শহরের দিকে। আগে কতো ছোটবেলায় এসেছি। মনে পড়লো মা আর আমি হর কি প্যারী ঘাটে প্রদীপ ভাসাতাম সবার মঙ্গল কামনা করে। স্মৃতির অতলে ভালোই ডুব সাঁতার কাটছিলাম, সম্বিত ফিরলো বাবার ডাকে। তৈরী হয়ে নে, আজ আমাদের মুসৌরি যাওয়া। অগত্যা উঠলাম, আর এক ঘন্টার মধ্যেই একটি টাটা সুমোর চড়ে পাড়ি দিলাম মুসৌরির দিকে।