ধারাবাহিক ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন – ৭৩

ফেরা
গরম গরম ভাত, ডাল, আলু ভাজা আর আলু ফুলকপির সব্জি। খিদের মুখে অমৃত। বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি আর তার সাথে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে চলেছে। ঐরকম আবহাওয়ায় গরম খাওয়ার মজা আলাদা। খেয়ে দেয়ে অপেক্ষা করতে থাকি। বৃষ্টি একটু কমলেই বাসে উঠে একটু ঘুমোনোর ইচ্ছা আর কি। এর মধ্যে ডাবলাদার কাছে একটা ফোন আসে। কিছুক্ষণ কথা সেরে ডাবলাদা জানান, গুপ্ত কাশীতে হোটেল হয়ে গেছে। তাই আমরা শোন প্রয়াগে না থেকে আরো উজিয়ে গিয়ে গুপ্ত কাশীতেই থাকবো। ভালোই হলো। আগামীকাল গৌরীকুন্ড তাড়াতাড়ি পৌঁছনোও যাবে আর গুপ্ত কাশীতে বেশ কিছু মন্দির আছে, সেগুলোর দর্শন হয়েও যাবে। দলের সবাই মহাখুশি।
এদিকে বৃষ্টির বিরাম নেই। হচ্ছে তো হয়েই যাচ্ছে। সবাই রীতিমতো অধৈর্য হয়ে পড়ছে। প্রায় আড়াইটা নাগাদ বৃষ্টি থামলো। সাথে সাথে বাস ছাড়লো। এখনও অনেকটা পথ বাকি।
বেশ খানিকক্ষণ চলার পর রুদ্রপ্রয়াগ। এবার সময় নেই বলে করবেটের সেই বিখ্যাত মানুষখেকো মারার জায়গা টি যাওয়া হলো না। একটু খারাপ লাগলো। আমি নাহয় আগেরবার দেখে গেছি, কিন্তু বাকিরা তো দেখেনি। কিন্তু সময় বড়ো বালাই। তাছাড়া সঙ্গমে থামতে হবে তো। একসময় সঙ্গম আসে। সবাই নামি। চোখের সামনে ফুটে ওঠে অপরুপ সেই দৃশ্য। কেদারনাথ থেকে মন্দাকিনী, আর বদ্রীনাথ থেকে অলকানন্দা। জলের রং দুই নদীর দুই রকম। পরিষ্কার সঙ্গম বোঝা যায়। একমনে তাকিয়ে আছি হঠাৎ দিদির ডাকে পিছন ফিরি।
বলো দিদি।
আচ্ছা বাবু, একটু আগে আমরা একটি মন্দির পার করে এলাম, মনে আছে? তখন ডাবলা কি সব বললো, শুনতে পাইনি। আমাকে একটু বলে দিবি?
ওহ। তবে শোনো। ঐ মন্দির ধারী মায়ের মন্দির। উনি সমগ্র উত্তরাখণ্ডের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। ওনাকে বলা হয় এই চার ধামের রক্ষাকর্ত্রী। এবং এই মন্দির সতীপীঠের অন্যতম।
বাহ। দারুন তো।
শুধু কি তাই, কথিত আছে ওনাকে একবার এক রাজা ওনার জায়গা থেকে সরিয়েছিল, সাথে সাথে সমগ্র এই অঞ্চলে বিপর্যয় নেমে এসেছিল?
বাহ। জয় মা ধারী দেবী। আচ্ছা চল সবাই ডাকছে, বাসে উঠবি চল।
দিদির সাথে গিয়ে বাসে উঠি। তখন কি আর জানতাম, আর বছর তিনেকের মধ্যে সেই রাজার ভুল আবার মানুষে করবে, আর তার ফলে….