ধারাবাহিক ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন – ৫২

ফেরা

বদ্রীনাথে সেই রাত কাটিয়ে, পরদিন অনেক কাজ ছিলো। মন্দিরে পুজো দেওয়া, এছাড়াও ব্রম্হোকপোলে পিন্ড দান করা। এটি কথিত আছে যে গয়াতে যদি পিণ্ডদান করা হয় তো আত্মার শরীর তৈরী হয়, আর যদি ব্রম্হোকপোলে পিন্ড দান করা হয় তো আত্মা চিরতরে মুক্তি লাভ করে। বাবা ওখানে আমার দাদু, ঠাম্মা, আমার মা সবার উদ্দেশ্যে পিন্ড দান করেন। ভোরবেলা, অলকানন্দার তীরে এই কার্য সম্পন্ন করে সেবাশ্রমে ফিরে আসেন। আমার তখন ঘুম ভাঙলেও বিছানা ছাড়িনি, শুয়ে শুয়ে ল্যাদ খাচ্ছিলাম। বাবা এসে পাশে বসে, আমাকে বলে যে তোর সাথে জরুরি কথা আছে।

বাবার সাথে আমার সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। আড্ডা, ইয়ার্কি , ঠাট্টা সব চলতো। আমি ভেবেছিলাম সেই রকম কিছু। কিন্তু বাবা একদম অন্য কথা বলেছিল সেদিন। আমার কাঁধে হাত রেখে বলেছিল, দ্যাখ, তোর থেকে আমি কিছু চাইনা কোনোদিন। অনেক বাবা মা ভাবে যে ছেলে চাকরি করে বাবা মার ভার নেবে, সেটাও আমি চাইনা। শুধু একটাই চাইবো, আমি চলে যাবার পর, তুই এখানে এসে আমার উদ্দেশ্যে পিন্ড দান করে যাবি, আমি মনে করবো তুই আমার প্রতি তোর কর্তব্য পালন করেছিস।

সেদিন বুঝিনি, কত বড়ো সত্যের সামনে বাবা আমাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেছিল। বুঝেছিলাম বছর তিন পরে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।